দাউদ ইব্রাহিমের পরিবারের সহযোগী ইকবাল মির্চির সঙ্গে এনসিপি-র বরিষ্ঠ নেতা তথা প্রাক্তন বিমান পরিবহণ মন্ত্রী প্রফুল প্যাটেলের আর্থিক যোগাযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ইডি। বিজেপি মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটের আগে এ ঘটনাকে ইস্যু করে তুলছে।
ইকবাল মহম্মদ মেনন ওরফে ইকবাল মির্চির সঙ্গে প্রফুল প্যাটেলের কোন যোগাযোগের অভিযোগ উঠেছে?
ইডির অভিযোগ প্রফুল প্যাটেলের সংস্থা মিলেনিয়াম ডেভেলপার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ২০০৬-০৭ সালে মুম্বইয়ের ওরলিতে সিজে হাউস নির্মাণ করে এবং এর তৃতীয় ও চতুর্থ তল, যার মাপ প্রায় ১৪ হাজার স্কোয়ার ফিট, তা দিয়ে দেওয়া হয় ইকবাল মির্চির স্ত্রী হজরা ইকবালকে। ইডির অভিযোগ, সিজে হাউস যে জমিতে নির্মিত হয়েছিল তার ব্যাপারে মির্চির আগ্রহের কারণেই এই হস্তান্তর ঘটে।
ইডির অভিযোগ, সিজে হাউস যে জমির উপর নির্মিত তা বিক্রি হয়েছিল সন্দেহজনক উপায়ে। বিক্রির পদ্ধতিতে কারচুপি করেছিল মির্চি, অভিযোগ তদন্ত সংস্থার। প্রফুল প্যাটেল এবং তাঁর স্ত্রী বর্ষা প্যাটেল মিলেনিয়াম ডেভেলপার্সের অংশীদার।
ওরলির যে জমিতে সিজে হাউস নির্মিত সে জমি হজরা ইকবালের হাতে এল কীভাবে?
৭-এর দশকের গোড়ায় এম কে মহম্মদ নামের এক ব্যক্তি ১৭৯৯.৩৬ বর্গগজ জমির দখল পান, যে জমিতে সিজে হাউস নির্মিত হয়েছে। এর আগের নাম ছিল শ্রীনিকেতন। রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে ওই জমিতে গুরুকৃপা নামের এক রেস্তোরাঁ নির্মাণ করেন তিনি।
১৯৮০ সালে বম্বে হাইকোর্টে এই জমির অন্য মালিকরা মহম্মদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই বছরেই হাইকোর্ট ডিবি খাড়েকে কোর্ট রিসিভার হিসেবে নিয়োগ করে। রিসিভার নিয়োগের কারণ ছিল জমির মালিকানা নিয়ে মহম্মদের বিরুদ্ধে মামলা এবং ওই জমি খালি করা। বিতর্কিত জমিতে মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মহম্মদকে কোনও কাজ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত।
১৯৮৮ সালে মহম্মদ এবং কোর্ট রিসিভার এক সমঝোতায় পৌঁছন। সেখানে তাঁকে অন্য মালিকদের ৭ লক্ষ টাকা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই অর্থই ওই সম্পত্তির দরুন চূড়ান্ত দেয় বলে স্থির হয়। এর বদলে মহম্মদকে ওই জমির বিতর্কিত অংশের একমাত্র মালিক বলে ঘোষণা করা হয়।
এদিকে মামলা চলাকালীনই মহম্মদ ১৯৮৬ সালে ৯ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এই জমির মালিকানা ইকবাল মির্চির স্ত্রী হজরা ইকবালকে বিক্রি করে দেন।
১৯৮৮ সালে মামলা সমাধানের পর কী ঘটল?
১৯৯৯ সালে, আদালত ডিক্রি জারি করার প্রায় ১০ বছর পর, লালবেন এম প্যাটেল নামে জমির আরেক মালিক হজরা ইকবালের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ১৯৮৮ সালের হাইকোর্টের নির্দেশের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করেন তিনি। এর পর লালবেন প্যাটেল এবং হজরা ইকবাল সমঝোতায় পৌঁছন।
ইকবাল কোর্ট রিসিভারকে ৭ লক্ষ টাকা দেন এবং জানিয়ে জেন সম্পত্তির বিতর্কিত অংশ থেকে সমস্ত কিছু সরিয়ে ফেলবেন তিনি। আদালতে পৌঁছনো সহমতের ভিত্তিতে অন্য মালিকরা হজরা ইকবালকে শ্রীনিকেতন বিল্ডিংয়ের ১৪ হাজার স্কোয়ার ফিট কার্পেট এরিয়া ১০ হাজার টাকা মাসিক বাড়ার বিনিময়ে দিতে রাজি হন।
অন্য মালিকরা আদালতে এই মর্মেও রাজি হন যে কো ফরাকেটিভ সোসাইটি তৈরি করার পর যদি জমির এই জায়গা মালিকানাভিত্তিক হয়, সেক্ষেত্রে হজরা ইকবাল আর ভাড়াটিয়া থাকবেন না, মালিক হয়ে যাবেন।
একই সঙ্গে সম্পত্তির অন্য মালিকরা শ্রীনিকেতন বিল্ডিংয়ের ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রফুল প্যাটেলের মিলেনিয়াম ডেভেলপার্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন।
মিলেনিয়াম ডেভেলপার্স সিজে হাউসের কার পার্কিং স্পেস সহ ১৪ হাজার স্কোয়ার ফুট কার্পেট এলাকা হজরা ইকবালকে দেওয়ার ব্যাপারে অন্য মালিকদের যে দায়, তা গ্রহণ করে।
২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিলেনিয়াম ডেভেলপার্স হজরা ইকবাল এবং তাঁর পুত্রদের সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন ডিড নিষ্পন্ন করে। স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিস্ট্রেশন চার্জ হিসেবে ১৪ হাজার স্কোয়ার ফিটের ভ্যালুয়েশন ধার্য হয় ১.১৩ কোটি টাকা।
সিজে হাউসের তৃতীয় ও চতুর্থ তলে ১৪ হাজার স্কোয়ার ফিটের মালিকানা তাহলে কার?
সিজে হাউস বিল্ডিংয়ের ১৪ হাজার স্কোয়ার ফিটের ৬০ শতাংশের মালিক হজরা ইকবাল। তিনি তাঁর দুই ছেলে আসিফ ইকবাল মেমন এবং জুনেইদ ইকবাল মেমনকে ২০ শতাংশ করে করে দিয়ে দিয়েছেন। এঁরা সকলেই দেশের বাইরে থাকেন। ইকবাল মির্চি কয়েক বছর আগে লন্ডনে মারা গিয়েছেন।