Advertisment

নাথুরাম গডসের 'দেশপ্রেম', যে কথা শুনতেও চায় না আরএসএস-বিজেপি

অনেক উগ্র হিন্দুত্ববাদীই রয়েছেন, যাঁরা কোনও দিনই গান্ধী বা তাঁর কাজকে ভাল চোখে দেখেননি - গান্ধীকে তাঁরা তাঁদের আদর্শের পরিপন্থী হিসেবেই দেখে এসেছেন, কিন্তু আরএসএস নেতারা প্রকাশ্যে গান্ধীর প্রশংসা করেছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Pragya Thakur

শেষ পর্যন্ত অবশ্য় নাম বাদ দিতে হয় ভোপালের সাংসদকে

ভোপালে বিজেপি প্রার্থী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসের প্রশংসা করায় বিজেপি খুবই কুঁকড়ে গেছে। সন্ত্রাসবাদে অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও প্রজ্ঞা ঠাকুরকে প্রার্থী করার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। সে কারণে বিজেপির অস্বস্তি বেড়েছে।

Advertisment

এ ঘটনা বিজেপির জাতীয়তাবাদের ধারণাকে আঘাত করার জন্য বিরোধীদের হাতে আরও অস্ত্র হাতে তুলে দিয়েছে। বিজেপির সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ এবং কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের মধ্যে  দাঁডিয়ে থাকা নাথুরাম গডসে বিজেপির পক্ষে অস্বস্তির কারণ। বিজেপি এবং সংঘপরিবার গডসে থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে। প্রসঙ্গত, মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পর আরএসএস-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের একাংশ গডসের সম্পর্কে তাঁদের গোপন শ্রদ্ধার কথা মাঝে মাঝেই ব্য়ক্ত করে ফেলেন। এর ফলে তাঁদের প্রতিপক্ষ শক্তি বিজেপি ও তার রাজনীতি নিয়ে মুখর হওয়ার সুযোগ পান।

প্রজ্ঞা ঠাকুরের মন্তব্যের প্রেক্ষিত ছিল অভিনেতা রাজনীতিবিদ কামাল হাসানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে। কামাল হাসান গডসেকে স্বাধীন 'ভারতের প্রথম হিন্দু উগ্রপন্থী' বলে উল্লেখ করেছিলেন। এই মন্তব্যকে ইস্যু করেছিল বিজেপি। কামাল হাসানকে আক্রমণ করেছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। তিনি বলেন "কামাল হাসান জানেন না একজন হত্যাকারী ও একজন সন্ত্রাসবাদীর তফাৎ কী!"

প্রজ্ঞা ঠাকুরই বিজেপির প্রথম নেতা নন যিনি গডসের প্রশংসা করলেন।

মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে ব্যাপক জয়ের পর, উন্নাও কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সাক্ষী মহারাজ পার্লামেন্ট হাউসের বাইরে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, "আমার বিশ্বাস নাথুরাম গডসে একজন জাতীয়তাবাদী এবং মহাত্মা গান্ধীও জাতির জন্য অনেক কিছু করেছেন। গডসে ছিলেন একজন ক্ষুব্ধ মানুষ। তিনি কিছু ভুল করতে পারেন কিন্তু দেশবিরোধী ছিলেন না। তিনি একজন দেশপ্রেমিক।"

কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধীরা সংসদের দুই কক্ষেই এ নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা সাক্ষী মহারাজের ক্ষমাপ্রার্থনারও দাবি তোলেন। লোকসভায় দুঃখপ্রকাশ করতে হয় সাক্ষী মহারাজকে, "আমি সংসদ ও দেশের কাছে দুঃখপ্রকাশ করছি... আমি ওঁকে দেশপ্রেমিক বলে মনে করি না। আমি সম্ভবত ভুল করে বলে ফেলেছি।"

ঘটনাচক্রে সাক্ষী মহারাজ গডসে সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যখন মোদী স্বচ্ছ ভারত মিশন শুরু করেছিলেন তখনই। মোদী তখন মানুষের কাছে মহাত্মা গান্ধীর পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর ভারতের স্বপ্ন পূর্ণ করার কথা বলছেন। তখন প্রায় প্রতিটি ভাষণেই মোদীর মুখে মহাত্মা গান্ধীর উল্লেখ থাকত। তাঁর সমালোচকরা বলেছিলেন আরএসএসের আদর্শকে বৈধতা দেওয়ার জন্য গান্ধীকে কাজে লাগাতে চাইছেন মোদী। চাইছেন কংগ্রেসের শূন্যস্থান দখল করতে।

তবে এ মন্তব্যের জন্য সাক্ষী মহারাজকে দলের মধ্যে তাঁকে বিপাকে পড়তে হয়নি। তিনি একই কেন্দ্র থেকে ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

গডসের সঙ্গে তাদের সংগঠনকে যুক্ত করার চেষ্টা বিজেপি এবং আরএসএসের পক্ষে অস্বস্তিকর। গডসের হাতে মহাত্মা গান্ধী খুন হওয়ার পরদিনই এমএস গোলওয়ালকর পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুকে একটি চিঠি লিখে বলেন, 'এক চিন্তাহীন বিকৃতমনস্ক' 'ঘৃণ্য কাণ্ড' ঘটিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পরেই আরএসএস নিষিদ্ধ হয়, গ্রেফতার করা হয় গোলওয়ালকরকে।

অনেক উগ্র হিন্দুত্ববাদীই রয়েছেন, যাঁরা কোনও দিনই গান্ধী বা তাঁর কাজকে ভাল চোখে দেখেননি - গান্ধীকে তাঁরা তাঁদের আদর্শের পরিপন্থী হিসেবেই দেখে এসেছেন, কিন্তু আরএসএস নেতারা প্রকাশ্যে গান্ধীর প্রশংসা করেছেন। আরএসএসের দাবি, গডসে তাদের সংগঠনের সদস্য একসময়ে ছিল বটে, কিন্তু হত্যাকাণ্ডের অনেক আগেই সে আরএসএস ছেড়ে দেয়।

কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছিলেন, মহাত্মা গান্ধীর হত্যার পিছনে রয়েছে আরএসএস। এর জন্য আরএসএস তাঁর বিরুদ্ধে একটি মানহানির মামলা করেছে। এ ঘটনাও প্রমাণ করে যে গডসের সঙ্গে সংঘের যোগাযোগের চেষ্টা তাদের পক্ষে কতটা অস্বস্তিকর।

Read the Story in English

RSS Mahatma Gandhi Explained
Advertisment