Advertisment

Explained: পৃথ্বীরাজ কি সত্যিই শেষ হিন্দু-সম্রাট, নাকি গোটাটাই কল্পনা?

পৃথ্বীরাজ চৌহানকে আঁকা হয় হিন্দু হৃদয়সম্রাট হিসেবেও, দেশাত্মবোধ এবং জাতীয় গর্বের চড়া আলো ফেলে তাঁকে আলোকিত করে তোলেন অনেকে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
prithiraj

পৃথ্বীরাজ চৌহানকে নিয়ে বিতর্কের নবতরঙ্গ তৈরি হয়েছে। উপলক্ষ অক্ষয় কুমার অভিনীত ছবি পৃথ্বীরাজ। গুজ্জর এবং রাজপুত দুই তরফই পৃথ্বীরাজকে নিজেদের সম্প্রদায়ভুক্ত বলে দাবি করেন, যা আরও জোরদার হয়ে উঠেছে এই ছবির বাতাসে। শুক্রবার (২০ মে) অখিল ভারতীয় বীর গুজ্জর মহাসভা দাবি জানিয়েছে, পৃথ্বীরাজ তাদের সম্প্রদায়ের, ফলে ছবিতেও যেন সেই ভাবেই তাঁকে দেখানো হয়। রাজপুত করণী সেনা, যাঁরা পদ্মাবত নিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল, তাদের আবার দাবি, পৃথ্বীরাজ রাজপুত, এবং ছবির নামের সঙ্গে সম্রাট শব্দটি না জুড়লে, এই ছবির বিরুদ্ধে তারা খড়গহস্ত।

Advertisment

অনেকেই মনে করেন, পৃথ্বীরাজ ভারতের শেষ হিন্দু-সম্রাট, যিনি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের রুখতে প্রবল প্রচেষ্টা চালিয়ে ছিলেন। পৃথ্বীরাজ চৌহানকে আঁকা হয় হিন্দু হৃদয়সম্রাট হিসেবেও, দেশাত্মবোধ এবং জাতীয় গর্বের চড়া আলো ফেলে তাঁকে আলোকিত করে তোলেন অনেকে। যদিও তার রসদ ইতিহাসে তেমন নেই বললেই চলে।

'হিরো' পৃথ্বীরাজ

পৃথ্বীরাজ চৌহ্বানকে দেখা হয় একজন যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী সম্রাট হিসেবে। তাঁর কাণ্ডকারখানার শেষ নেই। তাতে প্রেমিক পৃথ্বীরাজকেও আছেন। কনৌজ-বারাণসীর রাজা জয়চন্দের মেয়ে সম্মুক্তাকে যিনি তুলে আনেন স্বয়ম্বরসভা থেকে। তাতে জয়চন্দ অর্থ্যাৎ জয়চন্দ্র ক্ষুব্ধ হয়ে হাত মেলান গজনির সুলতান মহম্মদ ঘোরির সঙ্গে। দু'জনে এক হয়ে পৃথ্বীরাজকে হামলা করেন, তাতে পৃথ্বীরাজ পরাস্ত হন। পৃথ্বীরাজ রসো নামের কাব্যে এ সব রয়েছে। যেটি চাঁদ বরদাইয়ের লেখা, ব্রজভাষায়। মনে করা হয় ১৬তম শতকে এটি রচিত। যেখানে চাঁদ বরদাই নিজেকে পৃথ্বীরাজের সভাকবি হিসেবে দেখিয়েছেন। এই কবিতার শেষটা কী রকম? বলা হচ্ছে যে,মহম্মদ ঘোরির বিরুদ্ধে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে (১১৯২ খ্রিস্টাব্দ) পরাস্ত হওয়ার পর পৃথ্বীরাজকে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয় গজনিতে, যা এখন আফগানিস্তানে। সেখানে বন্দিই করে রাখা হয়নি শুধু, সুলতানের চোখে চোখ রেখে কথা বলার অপরাধে পৃথ্বীর দু'চোখ অন্ধ করে দেওয়া হয়।

চাঁদ বরদাই পৃথ্বীরাজকে মুক্ত করার অভিপ্রায়ে গজনি পৌঁছে যান এবং ঘোরির হাতে তিনিও বন্দি হন। এবার হল কি পৃথ্বীরাজ ও চাঁদের কানে গেল তিরন্দাজির এক খেলার আয়োজন করেছেন সুলতান। রক্ষীদের মারফত সুলতানের কাছে খবর পাঠানো হল যে, পৃথ্বীরাজ সেই খেলায় অংশ নেবেন। সুলতান তো হাসিতে ফেটে পড়লেন। চাঁদ বরদাই সুলতানকে বোঝালেন যে, পৃথ্বীরাজ অন্ধ তো কি হয়েছে, তিরন্দাজিতে তিনি কামাল করতে পারেন আগের মতোই। কিন্তু পৃথ্বীরাজ চাঁদমারির দিকে ছোড়ার বদলে সুলতানের গলার শব্দ লক্ষ্য করে ছুড়লেন সে দিকেই, কারণ শব্দভেদী কৌশলে তিনি ছিলেন সুদক্ষ। সুলতান ঘোরি নিহত হলেন। সঙ্গে সঙ্গেই পৃথ্বীরাজ ও চাঁদ বদরাই একে অপরকে শেষ করে দিলেন।

আরও পড়ুন- WHO-র সম্মানে চিড়ে ভিজবে না, আশা-কর্মীরা চান বিমা, স্থায়িত্ব, অর্থের সম্মান, চলছে বিক্ষোভও

ইতিহাসে পৃথ্বীরাজ

ইতিহাসে পৃথ্বীরাজ এমন ভাবে অলঙ্কৃত নন মোটেই। এমনকি তাঁর সম্পর্কে তথ্য অতি অল্প মেলে। ফলে এ দিক থেকে ইতিহাসবেত্তাদের সাহিত্য-কাব্য ইত্যাদি ছানবিন করে আসল-টার দিকে এগনোর চেষ্টা করতে হয়েছে। লিখিত যে তথ্য রয়েছে, তার মধ্যে ঘটনাক্রমের সংঘাতও দেখা যায়। ফলে ধন্দ এবং আলোছায়া পেয়ে পৃথ্বীরাজ লোককথায় বেড়ে উঠেছেন বা উঠতে এতটুকুও সমস্যা হয়নি। যাঁর সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য যত কম, তাঁর সম্পর্কে কল্পনা করার পরিসর তত বেশি, সেটাই স্বাভাবিক। মোটামুটি যা পৃথ্বীরাজ সম্পর্কে ইতিহাস থেকে জানা যায়, সেটা হল, আজমেঢ়ের চৌহান রাজবংশের রাজা ছিলেন পৃথ্বীরাজ। প্রতিহার রাজত্বের পতনের পর একাদশ শতকে তাঁর উত্থান। তিনি সিংহাসনে বসেন ১১৭৭ বা ১১৭৮ খ্রিস্টাব্দে। এবং দ্রুত রাজত্ব বিস্তার করতে থাকেন। ছোট ছোট নানা রাজপুত রাজাকে হারিয়ে দেন যুদ্ধে। গুজরাতের চালুক্যদের সঙ্গে অবশ্য এঁটে উঠতে পারেননি। তাঁকে গাঙ্গেয় ভূমির দিকে নজর ঘোরাতে হয় এর ফলে। এর পর, ১১৯১ সালে তরাইনের যুদ্ধে (এখন যা হরিয়ানায়) মহম্মদ ঘোরিকে পরাস্ত করেন পৃথ্বীরাজ, কিন্তু পরের বছর তিনি নিজেই হেরে যান। যে যুদ্ধকে মধ্যযুগের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ সেইটিকেই দিল্লিতে মুসলিম শাসনের সূত্রপাত হিসেবে দেখা হয়।

শেষ হিন্দু-সম্রাট?

জেমস মিলের দ্য হিস্ট্রি অফ ব্রিটিশ ইন্ডিয়া (১৮১৭) বইতে হিন্দু, মুসলিম এবং ব্রিটিশ শাসনের কালখণ্ড তুলে ধরা হয়েছে। সেই পুস্তক অনুযায়ী চললে বলতে হবে পৃথ্বীরাজ ভারতের শেষ হিন্দু শাসক। তা ছাড়া, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসার জেমস টডের অ্যানালস অফ অ্যান্টিকুইটিস অফ রাজস্থান (১৮২৯)-এ পৃথ্বীরাজকে 'দ্য লাস্ট হিন্দু এম্পেরর' বলা হয়েছে। যদিও পৃথ্বীরাজের সময়ই বেশ কয়েক জন প্রবল বলশালী হিন্দু রাজা ছিলেন এ দেশে। এবং তাঁর পরেও বহু হিন্দু রাজা দক্ষিণ ভারতে রাজত্ব করে গিয়েছেন।

Read full story in English

Explained Akshay Kumar
Advertisment