এ মাসের গোড়ার দিকে পুনে ফিল্ম ইনস্টিট্যুট ক্যাম্পাস আরও একবার শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠল। ২০১৫ সালে এখানে প্রথমবার বড় ধরনের আন্দোলন হয়েছিল। সে সময়ে গজেন্দ্র চৌহানকে ইনস্টিট্যুটের প্রধান পদে বসানোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। এবার ছাত্ররা কোন দাবিতে আন্দোলন করছেন, তার বিশ্লেষণ করল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
ফিল্ম ইনস্টিট্যুটের বর্তমান বিক্ষোভ কী নিয়ে?
পুনে ফিল্ম ইনস্টিট্যুট ও কলকাতার সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিট্যুটের ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের ক্যাম্পাসে গত ১৬ ডিসেম্বর যৌথ একযোগে আন্দোলনের ডাক দেন। তাঁদের ইস্যু ছিল দুটো। পুনে ও সত্যজিৎ রায় ইনস্টিট্যুটে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার বহুল পরিমাণ ফি, এবং সব মিলিয়ে যে ট্যুইশন ফি লাগে যা প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে বাড়ানো হয়।
প্রবেশিকা পরীক্ষার ফি কত?
এ বছর বিভিন্ন বিভাগের জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষার ফি সাধারণ ও এবিসিভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য ছিল ৪ থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে। তফশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ওই ফি ছিল ১২৫০ টাকা থেকে ৩১২৫ টাকার মধ্যে।
নাগরিকত্ব বিক্ষোভে ফৈয়াজের কবিতা, ইকবাল বানোর গান
পুনে ফিল্ম ইনস্টিট্যুট এই পরীক্ষা আয়োজন করে। তারা কোর্সগুলিকে তিন বিভাগে ভাগ করেছে। কেবলমাত্র একটি বিভাগের জন্য অ্যাপ্লিকেশন ফি ৪০০০ টাকা, দুটি বিভাগের জন্য ৮০০০ টাকা এবং তিনটি বিভাগেই যাঁরা আবেদন করতে চান, তাঁদের দিতে হয় ১২ হাজার টাকা। তফশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই ফি যথাক্রমে ১২৫০ টাকা, ২৫০০ টাকা এবং ৩১২৫ টাকা।
ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ দেশের আর কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রবেশিকা পরীক্ষার ফি এত বেশি নয়।
এই পরীক্ষার ফি এত বেশি কেন?
ফিল্ম ইনস্টিট্যুট এভাবে নিজেদের আয় বাড়াতে চায়, এ ছাড়া সাদা চোখে এর কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তথ্যের অধিকার আইন প্রয়োগ করে পাওয়া তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে পরীক্ষা আয়োজন করতে যে খরচ হয় তা এ আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থের তুলনায় অনেকটাই কম।
যেমন ২০১৯ সালে এ প্রতিষ্ঠান আবেদনকারীদের কাছ থেকে আদায় করেছিল ১.৬৮ কোটি টাকা, কিন্তু পরীক্ষা আয়োজনে তাদের খরচ হয়েছিল ২৯.৬১ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ পরীক্ষা আয়োজন করে তাদের লাভ হয়েছিল ১.৩৮ কোটি টাকা।
ফিল্ম ইনস্টিট্যুটে ফিল্ম মেকিং শিখতে বছরে কত টাকা ফি দিতে হয়?
প্রতি বছর ১০ শতাংশ ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ২০১০ সালে গৃহীত হলেও ছাত্রছাত্রীদের উপর আর্থিক চাপের কথা ভেবে সে সিদ্ধান্ত লাগু করা হয়নি।
বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইন ও ইসলাম ধর্ম
২০১৬ সালে পুনে ফিল্ম ইনস্টিট্যুটের বর্তমান ডিরেক্টর ভূপেন্দ্র কৈণ্ঠোলা বার্ষিক ফি বৃদ্ধি লাগু করার প্রস্তাব দেন। ফিল্ম ও টিভির বিভিন্ন কোর্সের জন্য বার্ষিক খরচ ১.১৮ লক্ষ টাকায় পৌঁছনোয় তা বহু ছাত্রছাত্রীর নাগালের বাইরে বলে অভিযোগ। ছাত্রছাত্রীদের মতে এই অধিক ফিয়ের কারণে ফিল্ম ইনস্টিট্যুট উচ্চবিত্ত ও মধ্যআয়ের মানুষজনের কুক্ষিগত হয়ে উঠছে। এই ফি কাঠামোর জন্য গরিব পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা আবেদনই করতে পারছেন না বলে অভিযোগ তাঁদের। এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা অংশের মানুষদের উপর।
অনশন আন্দোলনের বিষয়টি কী?
১৬ ডিসেম্বর পুনে ফিল্ম ইনস্টিট্যুট ও সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিট্যুটের ছাত্রছাত্রীরা সমস্ত অ্যাকাডেমিক কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়ে রিলে অনশনে যোগ দেন। পুনে ফিল্ম ইনস্টিট্যুটের পাঁচজন ছাত্র পাঁচদিন অনশন করবার পর প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিপি সিং তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। তিনি আশ্বাস দেন কাউন্সিলের বিশেষ বৈঠকে এ ইস্যু তোলা হবে। শুক্রবার মুম্বইয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রবেশিকা পরীক্ষার ফি কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ফিল্ম ইনস্টিট্যুটের ডিরেক্টর ভূপেন্দ্র কৈণ্ঠোলা বলেছেন, "ফি কত কমানো হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি। এ ছাড়া ২০২০ সালের রেগুলার কোর্সের ট্যুইশন ফি-র বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হবে। ২০২০ সালের মার্চে ওই রিভিউ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এই দুটি বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছবার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। ওই কমিটির শীর্ষে থাকবেন গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান।