রাশিয়ার সদর কার্যালয় ক্রেমলিন এবং শিল্প সংস্থা ওয়াগনার গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। রীতিমতো নাটকীয় মুহূর্তের জন্ম দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শনিবার এই শিল্পসংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। পুতিনের অভিযোগ, সংস্থাটির প্রধান কর্তা তথা মালিক ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে। পুতিনের দাবি, প্রিগোজিন একটি 'অপরাধমূলক দুঃসাহসিক অভিযান' বা 'সশস্ত্র বিদ্রোহ'-র চেষ্টা চালাচ্ছেন। সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের দাবি, প্রিগোজিনের সম্পর্কে পুতিন অভিযোগ করেছেন যে, 'যাঁরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলেছে, তাঁরা সবাই বিশ্বাসঘাতক। এটা আমাদেরকে ভিতর থেকে ধ্বংস করার চেষ্টা, এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতা।'
অভিযোগ, পালটা অভিযোগ
রুশ প্রেসিডেন্টের রেকর্ড করা এই বিবৃতিটি অভ্যুত্থানের চেষ্টার অভিযোগে প্রিগোজিনকে গ্রেফতারের জন্য রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর কর্তাদের কাছে পুতিনের আহ্বানের কয়েক ঘণ্টা পরে সম্প্রচারিত হয়েছে। সূত্রের খবর, রুশ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই 'সশস্ত্র বিদ্রোহ সংগঠিত করার চেষ্টা'র অভিযোগে প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত রেকর্ডিংয়ে ওয়াগনার প্রধান পালটা অভিযোগ করেছেন যে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী তাঁর লোকেদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তার পরেই তিনি পালটা লড়াইয়ে নেমেছেন। তবে, এই অভিযোগের অবশ্য কোনও প্রমাণ দেননি প্রিগোজিন। তিনি শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত বার্তাগুলোয় বলেছেন, 'যাঁরা আমাদের ছেলেদের ধ্বংস করেছে, আমি তাঁদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।' দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, ওয়াগনার গ্রুপ এবং রাশিয়ান সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক নতুন নয়, কয়েক মাস ধরেই রীতিমতো উত্তপ্ত। প্রিগোজিন খোলাখুলিভাবে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্তাদের সমালোচনা করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িত থাকা এবং স্থায়ী সেনাদের জীবনের প্রতি উদাসীনতার অভিযোগ করেছেন।'
বর্তমান অবস্থা
রুশ প্রতিরক্ষা দফতর সূত্রে খবর, ওয়াগনার গ্রুপের ভাড়াটে যোদ্ধারা মস্কো থেকে প্রায় ৫০০ কিমি দক্ষিণে ভোরোনেজ শহরের সমস্ত সামরিক ঘাঁটি দখল করেছে। আগের দিন, প্রিগোজিন দাবি করেছিলেন যে তিনি রাশিয়ার দক্ষিণ রোস্তভ-অন-ডন শহরে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর সদর দফতরের ভিতরে গিয়েছিলেন। শহরের সমস্ত সামরিক ঘাঁটি তাঁর লোকেদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পরে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। যেখানে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভের কাছে রোস্তভ-অন-ডনে এসে তাঁর সঙ্গে বৈঠকের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন- তেজসের জন্য মার্কিন সংস্থার সঙ্গে ইঞ্জিন সংক্রান্ত চুক্তি, কেন তা যুগান্তকারী?
পরস্পরের হুঁশিয়ারি
ভিডিও বার্তায় প্রিগোজিন বলেছিলেন, 'আমরা এখানে (রোস্তভ-অন-ডন) পৌঁছেছি। আমরা চিফ অফ জেনারেল স্টাফ (রুশ সেনাবাহিনীর) এবং শোইগুকে বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। যদি তাঁরা না-আসেন, আমরা এখানে থাকব। আমরা রোস্তভ শহর অবরোধ করব আর মস্কোর দিকে রওনা হব।' জবাবে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক টেলিগ্রামে একটি বিবৃতি পোস্ট করে বলেছে যে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধারা তাদের নেতার দ্বারা 'প্রতারিত এবং একটি অপরাধমূলক দুঃসাহসিক কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছেন।' সেই কারণে ওয়াগনার গ্রুপের ভাড়াটে যোদ্ধাদের দ্রুত রুশ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। একইসঙ্গে, আশ্বাস দিয়েছে যে আত্মসমর্পণ করলে ওই ভাড়াটে যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, অথবা সাজা মকুব করে দেওয়া হবে।