Advertisment

Explained: মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত! ভারতীয় নৌবাহিনীর এই প্রাক্তন কর্তাকেই পুরস্কৃত করেছিল কাতার?

নৌবাহিনীর এই প্রাক্তন আধিকারিকদের গত বছর গ্রেফতার করা হয়েছিল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Modi-Qatar

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন নাসের বিন খলিফা আল থানির সঙ্গে ভারত সফরের সময় হায়দ্রাবাদ হাউসে। (রেনুকা পুরী/এক্সপ্রেসের ফাইল ছবি)

কাতারের একটি আদালত ভারতীয় নৌবাহিনীর আট প্রাক্তন আধিকারিককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। ২০২২ সালের ৩০ আগস্ট, কাতার কর্তৃপক্ষ তাঁদের গ্রেফতার করেছিল। তখন থেকে ওই আধিকারিকরা ছিলেন নির্জন কারাবাসে। চলতি বছরের ২৯ মার্চ তাঁদের বিচার শুরু হয়। বিদেশ মন্ত্রক বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, এই 'মৃত্যুদণ্ডের রায়ে গভীরভাবে মর্মাহত। বিশদ রায়ের জন্য অপেক্ষা করছে।' মন্ত্রক আরও বলেছে যে এটি, 'সমস্ত আইনি বিকল্প খুঁজে দেখছে।' কাতারে প্রবীণ নৌ আধিকারিকদের দীর্ঘ হেফাজতে থাকার কারণ এবং মৃত্যুদণ্ড প্রদানের কারণগুলো বিস্তারিত বলা নেই। প্রবীণদের পরিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ সম্পর্কে অবহিত করা হয়নি। এই মামলা ভারত সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

Advertisment

এই ভারতীয় কারা এবং তাঁরা কাতারে কী করছিলেন?
আটজন প্রাক্তন নৌসেনা আধিকারিক- ক্যাপ্টেন নভতেজ সিং গিল, ক্যাপ্টেন সৌরভ বশিষ্ট, কমান্ডার পূর্ণেন্দু তিওয়ারি, ক্যাপ্টেন বীরেন্দ্রকুমার ভার্মা, কমান্ডার সুগুনাকর পাকালা, কমান্ডার সঞ্জীব গুপ্ত, কমান্ডার অমিত নাগপাল এবং নাবিক রাগেশ। তাঁরা আল দাহরা গ্লোবাল টেকনোলজিস অ্যান্ড কনসালট্যান্সিতে কাজ করছিলেন। এই সংস্থা একটি প্রতিরক্ষা সেবা প্রদানকারী কোম্পানি। কোম্পানির মালিক একজন ওমানি নাগরিক। নাম, খামিস আল-আজমি। তিনি রয়্যাল ওমান এয়ার ফোর্সের অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার। এই লোকটিকে আট ভারতীয়র সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে, ওই ব্যক্তিকে ২০২২ সালের নভেম্বরে মুক্তি দেওয়া হয়।

পূর্ণেন্দু তিওয়ারি ছিলেন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর
কোম্পানির পুরোনো ওয়েবসাইট, যা আর বর্তমানে বিদ্যমান নেই, সেই ওয়েবসাইট বলেছে যে ওই কোম্পানি কাতারি এমিরি নেভাল ফোর্স (QENF)-কে প্রশিক্ষণ, সরবরাহ এবং রক্ষণাবেক্ষণ পরিষেবা দেয়। তার নতুন ওয়েবসাইটে, কোম্পানিটিকে দাহরা গ্লোবাল বলা হচ্ছে। তবে, QENF-এর সঙ্গে সংস্থার যোগাযোগের আর কোনও উল্লেখ করা হয়নি সেখানে। কোম্পানিতে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকা সাত জন নৌবাহিনীর প্রাক্তন কর্তারও কোনও উল্লেখ নেই। অথচ, এই সংস্থায় কমান্ডার (অব.) পূর্ণেন্দু তিওয়ারি ছিলেন কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর। ভারত ও কাতারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁর পরিষেবার জন্য ২০১৯ সালে প্রবাসী ভারতীয় হিসেবে সম্মান পেয়েছিলেন।

রাষ্ট্রদূতের থেকে সম্মান
তাঁকে দোহায় তৎকালীন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পি কুমারান এবং কাতারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর আন্তর্জাতিক সামরিক সহযোগিতার প্রাক্তন প্রধান সম্মানিত করেছিলেন। অনুষ্ঠানটি হয়েছিল ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে। ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন কপিল কৌশিক সেই সময়ে ভারতীয় দূতাবাসের প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে ছিলেন। তিনি ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। দাহরা ওয়েবসাইটে কুমারানের কাছ থেকে পাওয়া শংসাপত্র ছিল। দোহায় ভারতীয় দূতাবাসে কুমারানের উত্তরাধিকারী রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তল, দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্কের কারণ হিসেবে এই কোম্পানির কাজের প্রশংসা করেছেন। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই দাহরায় চার থেকে ছয় বছর ধরে কর্মরত ছিলেন।

কাতারি কর্তৃপক্ষ কবে ওই আধিকারিকদের গ্রেফতার করেছিল এবং কেন?
কাতারের গোয়েন্দা সংস্থা স্টেট সিকিউরিটি ব্যুরো তাদের তুলে নিয়ে গিয়েছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ভারতীয় দূতাবাস প্রথম গ্রেফতারের কথা জানতে পারে। ৩০ সেপ্টেম্বর, ধৃতদের তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে 'সংক্ষিপ্ত টেলিফোনিক যোগাযোগ' করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। প্রথম দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ, ভারতীয় দূতাবাসের একজন আধিকারিক ওই বন্দিদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন হেফাজতে নেওয়ার একমাসেরও বেশি সময় পরে ৩ অক্টোবর। অন্তত পরের কয়েক মাসের জন্য, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সাপ্তাহিক ফোন কল করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ধৃতদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো কখনই প্রকাশ্যে আনা হয়নি। তবে, তাঁদের নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছিল বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। কাতার কর্তৃপক্ষের দাবি, নিরাপত্তা-সম্পর্কিত অপরাধের জন্য ওই ব্যক্তিদের আটক করা হয়েছে।

কাতারি কর্তৃপক্ষ কবে ওই আধিকারিকদের গ্রেফতার করেছিল এবং কেন?
কাতারের গোয়েন্দা সংস্থা স্টেট সিকিউরিটি ব্যুরো তাদের তুলে নিয়ে গিয়েছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ভারতীয় দূতাবাস প্রথম গ্রেফতারের কথা জানতে পারে। ৩০ সেপ্টেম্বর, ধৃতদের তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে 'সংক্ষিপ্ত টেলিফোনিক যোগাযোগ' করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। প্রথম দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ, ভারতীয় দূতাবাসের একজন আধিকারিক ওই বন্দিদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন হেফাজতে নেওয়ার একমাসেরও বেশি সময় পরে ৩ অক্টোবর। অন্তত পরের কয়েক মাসের জন্য, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সাপ্তাহিক ফোন কল করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ধৃতদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো কখনই প্রকাশ্যে আনা হয়নি। তবে, তাঁদের নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছিল বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। কাতার কর্তৃপক্ষের দাবি, নিরাপত্তা-সম্পর্কিত অপরাধের জন্য ওই ব্যক্তিদের আটক করা হয়েছে।

ভারত-কাতার সম্পর্কের ধরন কেমন?
দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ২০০৮ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর কাতার সফরের পর থেকে এই সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেটাই ছিল কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম কাতার সফর। পরবর্তীতে সেই সম্পর্ক আরও ভালো হয়েছে। কাতারের আমির, শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, ২০১৫ সালে ভারত সফর করেছিলেন। আবার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৬ সালে কাতারে গিয়েছিলেন। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর অন্তত তিনবার কাতার সফর করেছেন। প্রয়াত সুষমা স্বরাজ ২০১৮ সালে কাতার সফরকারী প্রথম ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী ছিলেন। ২০২১ সালে, কাতার থেকে ভারতে বিপুল পণ্য রফতানি হয়েছে। ভারত হয়ে উঠেছে কাতারের শীর্ষ চার রফতানির গন্তব্যস্থল। শুধু তাই নয়, কাতারের আমদানির শীর্ষ তিনটি জায়গার অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠে ভারত।

আরও পড়ুন- কাতারে ভারতীয় নৌবাহিনীর ৮ প্রাক্তন অফিসারের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা, চরম অস্বস্তিতে বিদেশ মন্ত্রক

দুই দেশের বাণিজ্য
দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মূল্য ছিল ১,৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। ভারত কাতার থেকে ১,৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের এলএনজি এবং এলপিজি রফতানি করেছে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত-কাতার সম্পর্কের একটি 'স্তম্ভ' হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ২০০৮ সালের নভেম্বরে সফরের সময় স্বাক্ষরিত ভারত-কাতার প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তিটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল। ২০১৮ সালে চুক্তিটি আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছিল। সেই সময়ে মনোহর পারিকর ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস (আইডিএসএ) দ্বারা প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে ভারতীয় আধিকারিকদের উদ্ধৃতি প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছিল। ভারতীয় নৌ ও কোস্টগার্ডের জাহাজ নিয়মিত কাতারে গিয়েছে। আবার, কাতারের প্রতিনিধি দল ২০২১ সালে ভারতে দুটি সামুদ্রিক মহড়ায় অংশগ্রহণ করেছিল। জাইর আল বাহর নামে একটি যৌথ নৌ মহড়ার দুটি ভাগে আয়োজিত হয়েছিল।

India Arrest Qatar
Advertisment