Advertisment

এক নজরে রাফাল মামলা, কী নিয়ে রিভিউ, কী বলল আদালত

ভারতের বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, ফ্রান্সের দাসো এভিয়েশনের নির্মিত এই যুদ্ধবিমানগুলি যে দামে কেনা হয়েছে, তার চেয়ে অনেক কম দামে ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে ১২৬ টি বিমান কেনার ব্যবস্থা করেছিল ইউপিএ সরকার।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
rafale verdict

অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস

রিভিউ পিটিশন কে ফাইল করেন? কেন?

Advertisment

দুটি রিভিউ পিটিশন জমা পড়ে - একটির পেছনে ছিলেন দুই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহা এবং অরুণ শৌরি, সঙ্গে অ্যাডভোকেট প্রশান্ত ভূষণ, এবং অন্যটি জমা দেন আম আদমি পার্টির রাজ্যসভা সদস্য সঞ্জয় সিং। দুই পক্ষেরই সুপ্রিম কোর্টের প্রতি আবেদন ছিল, যেন ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ সালে দেওয়া রায়ের পুনর্বিবেচনা করা হয়। সেই রায়ে সুপ্রিম কোর্ট ভারত-ফ্রান্স চুক্তির মাধ্যমে কেনা ৩৬ টি রাফাল যুদ্ধবিমানের খরিদারির কোর্ট-পরিচালিত তদন্তের আবেদন নাকচ করে দেয়। ১০ মে জমা পড়া রিভিউ আবেদনের ওপর রায়দান স্থগিত রেখেছিল ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং দুই বিচারপতি এস কে কাউল এবং কে এম জোসেফের গঠিত তিন-সদস্যের একটি বেঞ্চ।

রাফাল বিতর্কের মূলে কী রয়েছে?

ভারতের বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, ফ্রান্সের দাসো এভিয়েশনের নির্মিত এই যুদ্ধবিমানগুলি দুই সরকারের সরাসরি চুক্তির মাধ্যমে যে দামে কেনা হয়েছে, তার চেয়ে অনেক কম দামে খোলা দরপত্র বা ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে ১২৬ টি বিমান কেনার ব্যবস্থা করেছিল ইউপিএ সরকার।

ভারত যে ৩৬ টি বিমান কিনতে চলেছে, তা এপ্রিল ২০১৫ সালে ফ্রান্স সফরে গিয়ে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এও জানান যে বিমানগুলি 'ফ্লাই অ্যাওয়ে', অর্থাৎ ওড়ার জন্য তৈরি অবস্থায় থাকবে। এর কিছুদিন পরেই তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রয়াত মনোহর পারিকর ঘোষণা করেন যে ১২৬ টি বিমান কেনার পূর্বতন চুক্তি, যা ২০১২ সাল থেকে দরদামের স্তরে আটকে ছিল, তার অবসান ঘটেছে। এরপর ৩৬ টি বিমানের জন্য ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সালে নতুন করে চুক্তি সই করেন পারিকর এবং তাঁর ফরাসী প্রতিরূপ, জাঁ-ইভস ল্য দ্রিয়ঁ।

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে ১২৬ টি মিডিয়াম মাল্টি-রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট (MMRCA)-এর জন্য দরপত্র (টেন্ডার) জারি করে ভারতীয় বায়ুসেনা, এবং ২০১২ সালে কঠোর যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয় রাফালকে।

১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ সালের রায়ে কী বলে সুপ্রিম কোর্ট?

আদালতের সামনে চারটি পিটিশন জমা পড়ে - দুই উকিল এম এল শর্মা এবং বিনীত ঢান্ডার তরফে একটি করে, সঞ্জয় সিংয়ের তরফে একটি, এবং সিনহা, শৌরি, এবং ভূষণের তরফে একটি। চারটি পিটিশনেই প্রশ্ন তোলা হয় সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া, মূল্য নির্ধারণ, এবং অফসেট পার্টনার বাছাই করা নিয়ে।

প্রতিটি পিটিশনই খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ যা বলে, তার সারমর্ম দাঁড়ায়, "ভারত সরকারের ৩৬ টি প্রতিরক্ষা বিমান কেনার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে...কোনও হস্তক্ষেপের কারণ" দেখছে না আদালত। এবং "শুধুমাত্র কিছু ব্যক্তির ধারণা এই ধরনের দিশাহীন অনুসন্ধানের ভিত হতে পারে না...বিশেষ করে এই ধরনের বিষয়ে।"

আদালত-নিয়ন্ত্রিত তদন্তের আবেদনও খারিজ করে দেওয়া হয়, এবং বলা হয়, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিমান বেচার কন্ট্র্যাক্ট পেয়েছে দাসো, সেই "সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়াকে সন্দেহ করার কোনও কারণ নেই", এবং এও মনে করার কোনও কারণ নেই যে সরকারিভাবে কাউকে বাণিজ্যিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

দরদামের প্রশ্নে কোনোরকম মন্তব্য করতে সোজাসুজি অস্বীকার করে আদালত: "বর্তমান বিষয়ের মতো কোনও বিষয়েই তুল্যমূল্য দামের বিচার করা কোনোভাবেই এই আদালতের কাজ নয়।"

শিল্পপতি অনিল আম্বানির মালিকানাধীন রিলায়েন্স এরোস্ট্রাকচার লিমিটেডকে অফসেট পার্টনার হিসেবে বেছে নেওয়ার দাসো'র সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আদালত জানায়, "প্রযুক্তিগত ভাবে কী সম্ভব বা সম্ভব নয়, সেই তর্কে এই আদালতের প্রবেশ করাও এই আদালতের অভিজ্ঞতার পরিসরেও নেই, এবং তার পক্ষে যথাযথও নয়।"

রায়ে একথাও উল্লেখ করা হয় যে ডিফেন্স প্রকিওরমেন্ট পলিসি (DPP) ২০১৩ অনুযায়ী "ভেন্ডর/অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যাফাকচারার (OEM) নিজেরাই তাদের ইন্ডিয়ান অফসেট পার্টনার (IOP) বেছে নেবে", এবং "এই প্রক্রিয়ায় সরকারের কোনও ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না..."। আদালতের রায়ে এও বলা হয় যে "আমরা এমন কোনও নথিভুক্ত প্রমাণ পাই নি যাতে বলা যায় ভারত সরকারের তরফে কোনও পক্ষকে বাণিজ্যিক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যেহেতু IOP বেছে নেওয়ার সুযোগ ভারত সরকারের কাছে নেই।"

সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া নিয়ে বেঞ্চের বক্তব্য: "মোটের উপর সমস্ত প্রক্রিয়া মেনে চলা হয়েছে। এই বিমানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। বিমানের গুণগত মান নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। একথাও সত্যি যে ১২৬ টি MMRCA কেনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী আলোচনার কোনও ফল হয় নি, এবং প্রাথমিক আরএফপি (রিকুয়েস্ট ফর প্রোপোজাল) থেকেই চুক্তি হতে পারত, এই জল্পনারও কোনও অর্থ নেই। কঠিন তথ্য এই যে, শুধু যে চুক্তি হয় নি তা নয়, আলোচনাও বন্ধের পর্যায়ে এসে ঠেকেছিল, যার ফলে আরএফপি প্রত্যাহার করা হয়।"

আদালত আরও বলে: "১২৬ এর পরিবর্তে ৩৬ টি বিমান কেনার যৌক্তিকতার বিচার আমরা করতে পারি না। কোনোভাবেই আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় ১২৬ টি বিমান কিনতে সরকারকে বাধ্য করতে।"

রিভিউ পিটিশনে অতিরিক্ত কী তথ্য ছিল?

সিনহা, শৌরি, এবং ভূষণের পিটিশনে বলা হয়, সিল করা খামে পেশ করা সরকারের তরফে "স্পষ্টতই ভ্রান্ত" দাবির ওপর ভরসা করে সেই বেঞ্চ, যার সামনে মূল আবেদনের শুনানি হয়। তাছাড়া, তার পর থেকে সামনে এসেছে আরও কিছু তথ্য, যা বিবেচনা না করলে ন্যায়বিচারের ঘোরতর অপলাপ হবে। এই পিটিশনের ভিত্তি ছিল চুক্তি সংক্রান্ত কিছু নথি, যা প্রথম প্রকাশ্যে আনে 'দ্য হিন্দু' সংবাদপত্র, এবং তারপরে সংবাদ সংস্থা এএনআই।

১০ এপ্রিল, ২০১৯ এর নির্দেশে কী বলে সুপ্রিম কোর্ট?

নতুন তথ্যপ্রমাণ আদালতে পেশ করা নিয়ে সরকারি আপত্তি খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সরকারের বক্তব্য ছিল, এই সমস্ত নথি অবৈধভাবে ফটোকপি বা জেরক্স করে ফাঁস করা হয়েছে, এবং এগুলি ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট দ্বারা সুরক্ষিত।

সরকারের দাবি, মামলার নথি থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক রেকর্ড থেকে, যেহেতু সেগুলি স্পর্শকাতর, এবং প্রকাশ্যে এলে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি হতে পারে।

Rafale
Advertisment