রাফাল রায়ের রিভিউ: আদালতের নজরদারিতে তদন্ত এবং দামের বিশদ বিবরণ
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি এস কে কাউল এবং বিচারপতি কে এম জোসেফকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ গত বছরের ১৪ ডিসেম্বরের রাফাল রায়ের রিভিউ চেয়ে যত আবেদন জমা পড়েছিল সে সব সম্পর্কিত আবেদনের রায় দেবে। ১৪ ডিসেম্বরের রায় ফ্রান্স থেকে ভারতের ৩৬টি রাফাল যুদ্ধ বিমান কেনার চুক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল।
আবেদনকারী ছিলেন তিনজন। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ, এবং প্রাক্তন মন্ত্রী অরুণ শৌরী ও যশোবন্ত সিনহা। এই চুক্তির আদালতের নজরদারিতে তদন্তের প্রয়োজন আছে কিনা সে সম্পর্কিত রায় দেওয়া ছাড়াও, মনে করা হচ্ছে রাফাল চুক্তিতে দামের যে বিশদ বিবরণ ছিল তা জনসমক্ষে আনা হবে কিনা সে নিয়েও রায় দেবে বেঞ্চ।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: অযোধ্যা মামলায় বিচার্য বিষয়গুলি
গত ডিসেম্বরে আবেদন খারিজ করার সময়ে বেঞ্চ বলেছিল, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, দাম এবং অফসেট পার্টনার বাছাইয়ের গোটা প্রক্রিয়াকে সন্দেহ করার কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বেঞ্চ বলেছিল সরকার কাউকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করেছে এমন কোনও নথিও পাওয়া যায়নি। এই পর্যালোচনার সময়ে, কেন্দ্র বলে এসেছে নিরাপত্তার কারণে দামের বিষয়ে প্রকাশ করা যাবে না। তবে প্রশান্ত ভূষণ প্রশ্ন তোলেন ১২৬টি বিমান কেনার প্রস্তাবের অনুরোধে সমস্ত বিষয়েরই যখন উল্লেখ রয়েছে, তখন কীভাবে রাফালের দাম প্রকাশ করলে তা জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে উঠবে!
শবরীমালা রায়ের পর্যালোচনা: নিষেধাজ্ঞা, প্রত্যাহার এবং সমতার অধিকার
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেওয়া শবরীমালা রায়ের পর্যালোচনা নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৮-র রায়ে শবরীমালা মন্দিরে ১৬ থেকে ৭০ বছর বয়সী (ঋতুযোগ্য) মহিলাদের প্রবেশে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
ফেব্রুয়ারি মাসে এ ব্যাপারে ৬৫টি রিভিউ পিটিশন ও রিট পিটিশনের ভিত্তিতে একটি গোটা দিন ধরে শুনানি হয়। সেদিন রায় দান স্থগিত রাখে আদালত। নায়ার সার্ভিস সোসাইটির তরফে আইনজীবী কে পরাশরন তাঁর সওয়ালে বলেন, বিক্ষোভ সত্ত্বেও যে দুই মহিলা বিন্দু এবং কনকদুর্গা মন্দিরে প্রবেশ করেছিলেন, তাঁদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং রিভিউয়ের বিরোধিতা করেছেন। কেরালা সরকার এবং ত্রাভাঙ্কোর দেবস্বম বোর্ডও রিভিউয়ের বিরুদ্ধে। তারা বলেছে নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয় এমন ধর্মীয় বিধি নাকচ করা করতে পারে আদালত।
আরও পড়ুন, কী বলছেন বাবরি ধ্বংসের সময়কার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব?
২০১৮ সালে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ ঋতুযোগ্য বয়সী মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞাকে সমতার অধিকারের পরিপন্থী বলে রায় দেয়। রায়ে বলা হয় ঋতুর ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা অস্পৃশ্যতার সমতুল্য এবং এ দুইই পবিত্রতার ধারণার সঙ্গে যুক্ত।
তবে বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা তাঁর আপত্তি জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন আবেদনকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ইন্ডিয়ান ইয়ং লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন আদালতে এ সম্পর্কিত আবেদনের অধিকারী নয়।
তথ্যের অধিকারের আওতায় বিচারবিভাগ: সীমারেখা বিষয়ক প্রশ্ন
২০১০ সালে দিল্লি হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট এবং প্রধান বিচারপতিও ২০০৫ সালের তথ্যের অধিকার আইনের আওতাধীন। সে রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের কেন্দ্রীয় জন তথ্য আধিকারিক। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং বিচারপতি এনভি রামান্না, ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, দীপক গুপ্তা ও সঞ্জীব খান্নাকে নিয়ে গঠিত এক সাংবিধানিক বেঞ্চ এ ব্যাপারে রায় দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন, মহারাষ্ট্রে বিজেপি-শিবসেনা জোট ও তাদের টানাপোড়েন
কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন এক আবেদনকারীর আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সম্পত্তির পরিমাণ প্রকাশ্যে আনার ব্যাপারে সম্মতি দেয়। সে সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় দেয় দিল্লি হাইকোর্ট।
বেঞ্চ এর আগে বলেছিল, কতটা তথ্য জনসমক্ষে আনা হবে সে নিয়ে "একটা সীমারেখা টানা উচিত" যাতে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। প্রধান বিচারপতি গগৈ বলেছিলেন, "কেউই অস্বচ্ছ ব্যবস্থার পক্ষে নয়। কেউই অন্ধকারে থাকেতে চায় না। কেউই কাউতে অন্ধকারে রাখতে চায় না। প্রশ্ন হল কোথায় লাইন টানতে হবে। কোথাও একটা লাইন টানতে হবে। স্বচ্ছতার নামে আপনি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলতে পারেন না।"