কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে সোমবার অসমের বটদ্রভা থান পরিদর্শনে বাধা দেওয়া হয়েছে। অসমে তিনি 'ভারত জোড় ন্যায় যাত্রা'য় অংশ নিয়েছেন। নগাঁওয়ের হাইবারগাঁওয়ে তাঁর যাত্রা দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে, শুধুমাত্র কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ ও বটদ্রভার বিধায়ক শিবমণি বোরাকে ব্যারিকেড পেরিয়ে থান পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রবিবার, থান ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি বোরাকে চিঠি দিয়ে বলেছিলেন যে রাহুলকে সোমবার বিকেল ৩টার আগে প্রাঙ্গণের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। কারণ, অযোধ্যায় রাম মন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠা উপলক্ষে হাজার হাজার মানুষ সকালে বটদ্রভা থানে জড় হবেন। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও বলেছিলেন যে, অযোধ্যায় অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে রাহুলের থান পরিদর্শন করা উচিত।
- কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ ও বটদ্রভার বিধায়ক শিবমণি বোরাকে ব্যারিকেড পেরিয়ে থান পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
- এক শরণ নাম ধর্ম, ভগবান কৃষ্ণের প্রতি ভক্তি উপাসনার পদ্ধতি।
- ২০২১ সালে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বটদ্রভা থানে একটি সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প চালু করেছিলেন।
বটদ্রাব থান কী?
নগাঁও জেলায় অবস্থিত বটদ্রভা থান বা বর্দোয়া থান, অসমিয়া বৈষ্ণবদের অন্যতম পবিত্র স্থান। থানটি শ্রদ্ধেয় বৈষ্ণব সংস্কারক-সন্ত শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের (১৪৪৯-১৫৬৮) জন্মস্থানে অবস্থিত। নগাঁও জেলার ওয়েবসাইট অনুসারে, 'অসমে পঞ্চদশ শতাব্দীতে নব্য বৈষ্ণব ধর্মের অনুশীলন ও প্রচারের জন্য শঙ্করদেব ১৪৯৪ খ্রিস্টাব্দে বর্দোয়াতে প্রথম কীর্তন ঘর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এক শরণ নাম ধর্ম প্রচার করেছিলেন।'
আরও পড়ুন- স্বাধীনতার পর নয়, রাম মন্দির আন্দোলন ২০০ বছরের এক যাত্রা, পার হয়েছে বহু মাইলফলক
শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের দর্শন কী ছিল?
এক শরণ নাম ধর্ম, ভগবান কৃষ্ণের প্রতি ভক্তি উপাসনার পদ্ধতি। শ্রীকৃষ্ণের নামগান এবং সমবেত শ্রবণ এই উপাসনার মাধ্যম। শঙ্করদেব জাতিভেদ, গোঁড়া ব্রাহ্মণ্য আচার-অনুষ্ঠান এবং ত্যাগ থেকে মুক্ত, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ওপর ভিত্তি করে একটি সমাজকে সমর্থন করেছিলেন। তাঁর শিক্ষা, মূর্তি পূজার বদলে প্রার্থনা এবং জপ (নাম)-এর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল। তাঁর ধর্ম ছিল দেব (ভগবান), নাম (প্রার্থনা), ভকত (ভক্ত) এবং গুরু (শিক্ষক)- এই চারটি উপাদানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। শঙ্করদেব যে নব্য-বৈষ্ণব সংস্কারবাদী আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তার পিছনে রয়েছে থানস/সত্রাস নামে সন্ন্যাসী প্রতিষ্ঠান। যা অসমের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে। যেহেতু সাধক শঙ্করদের অসমজুড়ে ভ্রমণ করেছিলেন, তাঁর শিক্ষা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন এই সত্র বা থানগুলোয়। ষোড়ক শতকে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংস্কারের কেন্দ্র হিসেবে এই থানগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আজ, এই থানগুলো সংগীত (বোরগীত), নৃত্য (ক্ষত্রিয়) এবং থিয়েটার (ভৌনা)-সহ শঙ্করদেবের অনন্য 'শিল্পের মাধ্যমে উপাসনা' পদ্ধতির প্রচার করে। প্রতিটি সত্রের কেন্দ্র হল একটি নামঘর (উপাসনাস্থল)। যার নেতৃত্বে থাকেন একজন প্রভাবশালী 'সত্রাধিকার'।
আরও পড়ুন- শুধু মোদীই নন, গান্ধীজিও বলেছিলেন রাম রাজ্যের কথা, রামকে শ্রদ্ধা করতেন মহাত্মাও
এই থানগুলো কি রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ?
সবসময়। অসমের রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা বহন করে এই থানগুলো। থানস/সত্ররা অসমিয়াদের পরিচয়ের একটি উপাদান। এই সব থানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিশিষ্ট হল বটদ্রভা থান। যা প্রায়ই রাজনীতিবিদরা পরিদর্শন করেন। বিজেপি, বিশেষ করে, 'অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা সত্রার চারপাশের জমি দখল' একটি নির্বাচনী ইস্যু। গত বছরের সেপ্টেম্বরে, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছিলেন যে অসম সরকার বটদ্রভা থানের আশপাশে আট কিলোমিটার ব্যাসার্ধে 'অ-আদিবাসীদের' জমি কেনা থেকে বাধা দেওয়ার জন্য একটি আইন আনার পরিকল্পনা করছে । শঙ্করদেবের ৫৭৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন, হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছিলেন, 'আমরা একটি আইন আনার চেষ্টা করছি, যাতে আদিবাসী ছাড়া অন্য লোকেরা এর আশেপাশে জমি কিনতে না পারে। ইতিমধ্যে, আমি জেলাশাসককেও বলেছি যে আইনটি চূড়ান্ত না-হওয়া পর্যন্ত তাঁরা যেন আদিবাসী ছাড়া অন্য লোকদের এখানে জমি কেনা-বেচা করার অনুমতি না দেন। ২০২১ সালে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বটদ্রভা থানে একটি সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প চালু করেছিলেন। যার উন্নয়নের জন্য ১৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল।