Advertisment

Explained: ব্রহ্মার কন্যা, কে এই 'পানৌতি'? প্রধানমন্ত্রীকে বলায় কমিশন নোটিশ ধরাল রাহুল গান্ধীকে !

বিভিন্ন মন্দিরে হনুমানের পায়ের কাছে পড়ে থাকেন পানৌতি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Shani panauti

শনির সঙ্গে পানৌতির যোগ আছে বলে জ্যোতিষমতে বিশ্বাস। (ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স)

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তাঁর মন্তব্যের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। রাহুল তাঁর মন্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে 'পকেটমার' এবং 'পানৌতি' বলেছেন। রাজস্থানে নির্বাচনী জনসভার তিনি ওই মন্তব্য করেছেন। ২১ নভেম্বর ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতের পরাজয়ের পর রাহুল গান্ধী বালোত্রার এক সমাবেশে বলেছিলেন, 'পানৌতি… পানৌতি… আচ্ছা ভালা হামারে লড়কে ওয়াহাঁ বিশ্বকাপ জিতনে ওয়ালে থে, পার পানৌতি হারওয়া দিয়া। টিভি ওয়ালে ইয়ে না-কাহেঙ্গে, মাগর জনতা জানতি হ্যায় ( আমাদের ছেলেরা বিশ্বকাপ জিততে যাচ্ছিল, কিন্তু পানৌতি হারিয়ে দিল। টিভি চ্যানেলগুলো এটা বলবে না। কিন্তু, জনতা জানে)।'

Advertisment

কমিশন বলেছে
কমিশন তাঁর নোটিশে বলেছে যে, 'পানৌতি' শব্দের ব্যবহার আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের আওতায় পড়ে। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫১ অনুযায়ী, একজন নির্বাচক অর্থাৎ ভোটারকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা হয়েছে, যা সত্য নয় এমন কিছু। এখানে ঐশ্বরিক অসন্তুষ্টি বা আধ্যাত্মিক প্রসঙ্গ টেনে জনগণের বিশ্বাস জেতার চেষ্টা হয়েছে। 'পানৌতি' শব্দের সাধারণ অর্থ অশুভ লক্ষণ বা অপয়া। শব্দটি এমন কোনও ব্যক্তি বা পরিস্থিতির জন্য ব্যবহার হয়, যা সমস্যা বা দুর্ভাগ্য ডেকে আনে। এই শব্দের উৎপত্তি জ্যোতিষশাস্ত্রে। যেখানে 'পানৌতি', কষ্ট দেওয়া দেবতার নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জ্যোতিষশাস্ত্রে পানৌতি কী?
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, পানৌতি শব্দটি শনিদেব বা শনির গতিবিধির কারণে একজন ব্যক্তির জীবনে যে দুর্ভোগ বা কঠিন সময় শুরু হয়, তাকে বোঝায়। বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির রাশি জন্মের সময় চাঁদের অবস্থান দ্বারা নির্ধারিত হয়। একজন ব্যক্তির জন্মের সময় চন্দ্র যে রাশিতে ছিল, ব্যক্তি সেই রাশির জাতক বলে মনে করা হয়। পানৌতি এবং সাড়ে-সাতি (সাড়ে সাত বছরের অসুবিধার সময়কাল) শুরু হয় যখন শনি আপনার জন্ম রাশির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অবস্থানে চলে যায়। ডা. দীপকভাই জ্যোতিষাচার্য, গুজরাটের ভাপিতে পরাশর জ্যোতিষালয় চালান। তিনি দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, 'একটি সাড়েসাতি, বা বড়ি (বড়) পানৌতি, প্রতিটি আড়াই বছরের তিনটি ধাপে গঠিত। প্রথম ধাপ হল যখন শনি আপনার জন্ম চিহ্ন থেকে ১২তম রাশির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। দ্বিতীয় পর্বটি হল, যখন শনি আপনার জন্ম চিহ্নের মধ্যে দিয়ে যান। আর, তৃতীয়টি হল যখন শনি দ্বিতীয় রাশির মধ্যে দিয়ে যান। শনি যখন আপনার জন্মচিহ্ন থেকে চতুর্থ এবং অষ্টম রাশির মধ্যে দিয়ে যান, তখন তাকে ধিয়া বা ছোট (ছোট) পানৌতি বলা হয়। এটি একটি ছোট দুর্ভাগ্যের সময়কাল যা আড়াই বছর চলে।'

Sarangpur hanuman temple
গুজরাটের সারাংপুর মন্দিরে কষ্টভঞ্জন (কষ্টের বিনাশকারী) হনুমান মূর্তি, হনুমানের পায়ের কাছে শুয়ে পানৌতি। (ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স)

পানৌতি কীভাবে বোঝা যায়?
পানৌতি সেই সময়কে বলা হয়, যখন কোনও ব্যক্তি যা করতে যান, ঠিক তার বিপরীত ঘটে। তাঁর জীবন উদ্বেগে ভরা থাকে। জীবন দুঃখময় হয়ে ওঠে। দীপকভাই বরোদার এমএস ইউনিভার্সিটি থেকে জ্যোতিষশাস্ত্রে পিএইচডি করেছেন। তাঁর দাবি, শনি শাস্তি বা দুর্ভাগ্য আনেন না। তবে, এই জীবনে বা গত জীবনে যে খারাপ কাজগুলি মানুষ করে, তার বিচার তিনি করে থাকেন। দীপকভাই বলেন, 'শনি একবার তাঁর বাবা সূর্যের সঙ্গে ঝগড়ার পরে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তারপর তিনি ভগবান শিবের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যে তাঁর সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে, তার বিচারের পাশাপাশি তিনি যেন সকলের ন্যায়বিচার করতে পারেন। ভগবান শিব তাঁকে সেই বর দেন। সেই থেকে শনি ন্যায়বিচার করেন।' দীপকভাই জানিয়েছেন, এই কারণে যখন কেউ শনির কুপ্রভাবের শিকার হন, তাঁর প্রকৃত সমস্যা উপলব্ধি করা উচিত। আর, আধ্যাত্মিক উপায়ে সেই সমস্যার মোকাবিলা করা উচিত।

আরও পড়ুন- স্ত্রীকে বলেছিলেন ফিরে ফোন করবেন, অপেক্ষায় রেখেই শহিদ ভারতীয় সেনার ক্যাপ্টেন

পানৌতিকে দেখতে কেমন?
পানৌতিকে নারী রূপেও কল্পনা করা হয়। তাঁকে কষ্টের দেবী হিসেবে ধরা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে ভগবান হনুমান সাড়েসাতি এবং পানৌতির প্রভাবে কষ্ট পাওয়া লোকেদের উদ্ধার করেন। সেই কারণে কিছু মন্দিরে পানৌতিকে হনুমানের পায়ের নীচে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তেমনই একটি মন্দির হল গুজরাটের সারাংপুর হনুমান মন্দির। রাজকোটের জ্যোতিষী কৌশিক ত্রিবেদী দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন যে পানৌতি হলেন ভগবান ব্রহ্মার মানসকন্যা (ব্রহ্মার কল্পনা থেকে জন্ম নিয়েছিলেন)। হিন্দু পুরাণে, তাঁকে কষ্টের দেবী বলে মনে করা হয়। ত্রিবেদী বলেন, 'পানৌতি জীবদ্দশায় প্রত্যেক প্রাণীকে তিনবার আঘাত করে। প্রত্যেকটি সাড়ে সাত বছর ধরে। তিনি একজন ব্যক্তির হৃদয়, মস্তিষ্ক এবং পায়ে আঘাত করেন। যার ফলে ওই ব্যক্তির আবেগ, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং গতিশীলতা প্রভাবিত হয়।' ত্রিবেদী বলেন, 'শনি হল গ্রহদের মধ্যে বিচারক। তিনি কর্মের ভিত্তিতে কোনও ব্যক্তিকে আশীর্বাদ বা অভিশাপ দেন। শনি যখন একজনের রাশিফলের জেরে কোনও জাতকের মধ্যে প্রবেশ করেন, তখন সেই ব্যক্তিকে পানৌতিও আঘাত করে।' ত্রিবেদী জানিয়েছেন, ভগবান হনুমানের উপাসনা করলে এই ধরনের সময় কাটিয়ে ওঠা যায়। ত্রিবেদী বলেন, 'শনি হলেন সূর্যদেবের পুত্র। আর, হনুমান হলেন সূর্যদেবের শিষ্য। সূর্যদেব হনুমানকে আশীর্বাদ করেছিলেন, যে বা যাঁরা হনুমানের উপাসনা করবেন, তাঁরা শনির থেকে এবং পানৌতির থেকে রক্ষা পাবেন।'

rahul gandhi election commission modi Astrology Saturn
Advertisment