Advertisment

শবরীমালা, রাহুল গান্ধী, বিজয়নের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ

২০১৯-এর ভোটে সিপিএমের সামনে বড় প্রশ্ন হল শবরীমালা নিয়ে বিজয়নের যে কঠোর ভূমিকা তার জেরে দলকে হিন্দু ভোট খোয়াতে হবে কিনা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
pinnarai vijayan

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পিনারাই বিজয়ন এখন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। সরকার তথা দলের মেশিনারির ওপর তাঁর কর্তৃত্ব প্রশ্নাতীত। তা সত্ত্বেও শবরীমালা মন্দির নিয়ে তাঁর ভূমিকা এবং বিভিন্ন পরিকাঠামো প্রকল্প সম্পর্কে তাঁর উদ্যমের উপরেই দাঁড়িয়ে থাকবে কেরালায় লোকসভা নির্বাচন।

Advertisment

কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর ওয়ানাড় থেকে ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত বামেদের প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিঃসন্দেহে। শাসক এলডিএফের মুখ্য প্রচারমুখ হওয়ার সুবাদে রাহুল গান্ধী এফেক্টকে আটকানোর ব্যাপারে বিজয়নের ভূমিকার দিকেই লক্ষ্য থাকবে।

শবরীমালাকে কেন্দ্র করেই কেরালায় প্রচার করতে চলেছে বিজেপি। ২৮ সেপ্টেম্বরের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বহাল করতে গিয়ে রাজ্যে বিক্ষোভের সামনে পড়েছিল সরকার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল সব বয়সের মহিলাদের এই মন্দিরে প্রবেশাধিকার দিতে হবে। ভোটের মরশুমে আদালতের সিদ্ধান্ত বিশ্বাসী হিন্দুদের পক্ষে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধীরা বামপন্থীদের থেকে সরে গিয়ে বিজেপি ও কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকবে এমনটাই ধরে নেওয়া যায়।

২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে সিপিএম নেতৃত্বাধীন এলডিএফ মাত্র চারটি আসন পেয়েছিল, অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ পেয়েছিল ১৬টি আসন। রাজ্যে লোকসভার আসন সংখ্যা মোট ২০টি। সেবার এ ফলের জন্য দায়ী করা হয়েছিল সন্ত্রাসবাদে যুক্ত মাদানির সংগঠন পিডিপি-র সঙ্গে হাত মেলানোর বিজয়নের সিদ্ধান্তকে। বিজয়নের লক্ষ্য ছিলি মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক। এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা সিপিআই তো করেইছিল, দ্বিমত পোষণ করেছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অচ্যুতানন্দনের নেতৃত্বে সিপিএমের একটা বড় অংশও।

পিডিপির সঙ্গে হাত মেলানোর সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ব্যাকফায়ার করেছিল, হিন্দু ভোটাররা বামেদের প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ২০০৯ সালের ভোটের পর সিপিএমের আভ্যন্তরীণ পর্যালোচনায় বলা হয়েছিল, "আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা সুনিশ্চিত করতে হবে।"

২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে এলডিএফের আসন বেড়ে হয়েছিল ৮। সিপিএমের পর্যালোচনা ছিল মোদী ঢেউয়ের জেরে বেশ কিছু হিন্দু ভোট বিজেপিতে গেছে।

২০১৯-এর ভোটে সিপিএমের সামনে বড় প্রশ্ন হল শবরীমালা নিয়ে বিজয়নের যে কঠোর ভূমিকা তার জেরে দলকে হিন্দু ভোট খোয়াতে হবে কিনা। শবরীমালা ইস্যু সামনে আসার পর থেকে বিজয়ন বামেদের অবস্থানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, বলছেন কেরালার রেনেশাঁ এবং রাজ্যের প্রগতিশীল ঐতিহ্যের কথা। শবরীমালা নিয়ে সরকারের সমর্থনে বেশ কিছু হিন্দু সংগঠনকেও জড়ো করেছেন তিনি।

শবরীমালা বিতর্কে যে ক্ষতি হয়নি, সে কথা তুলে ধরতে দলের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারির বিভিন্ন স্থানীয় উপনির্বাচনের কথা তুলে ধরা হচ্ছে, যেখানে এলডিএফ ৩০টির মধ্যে ১৬টি আসনে জিতেছে। বিরোধী পক্ষ অবশ্য বলছে স্থানীয়স্তের ২১৬৮৫টি আসনের মধ্যে ৩০ কোনও সংখ্যাই নয়।

বিজেপি এ রাজ্যে লোকসভায় আজাবধি কোনও আসন পায়নি। সেদিক থেকে বামেদের খারাপ ফল এবং বিজেপির প্রথম পদক্ষেপ বিজয়নের শেষের শুরু হিসেবে দেখা দিতে পারে।

হিন্দু ভোটব্যাঙ্কে ক্ষয়রোধ করতে সিপিএম ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল ভোটকে একজোট করতে উদ্যোগী হয়েছে। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র যে একমাত্র বামেরাই রক্ষা করতে পারে এবং কংগ্রেস যে আসলে বিজেপি-র সঙ্গে আঁতাত করে রয়েছে, এ কথাই প্রচার করছে তারা।

সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য এম এ বেবি দলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আশাবাদী। তাঁর মতে, শবরীমালা ইস্যুতে প্রগতিশীল মানুষজন বামেদের সঙ্গেই আছেন।

শবরীমালার বাইরে বিজয়ন গত তিন বছরে বিভিন্ন পরিকাঠামোগত প্রকল্পের উপরে জোর দিয়েছেন। এ ব্য়াপারে বিভিন্ন দলের আপত্তি ও প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি, বাদ যায়নি তাঁর নিজের দলও। কোচি থেকে বেঙ্গালুরু ও ম্যাঙ্গালুরু পর্যন্ত গেইল পাইপলাইন, যা কেরেলার সাতটি জেলার মধ্যে দিয়ে গেছে তা শেষের পথে। এ প্রকল্পের কথা প্রথম ভাবা হয়েছিল ২০০৭ সালে। শুরু থেকেই এ প্রকল্প নিয়ে বেশ কিছু আন্দোলন হয়েছে, যার কয়েকটির পুরোভাগে ছিল সিপিএমও। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিক্ষোভ উড়িয়ে দিয়ে বিজয়ন কুডানকুলাম-কোটি ৪০০ কেভি পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইনের কাজও এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

গত দু দশক ধরে সর কটি ভোটেই সিপিএম গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে আক্রান্ত ছিল, এই সময়কাল জুড়ে জলে ধারাবাহিকভাবে বিদ্রোহী ভূমিকা পালন করে গিয়েছিলেন অচ্যুতানন্দন। অচ্যুতানন্দন ফ্যাক্টর এখন আর নেই, এবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের আড়ালও আর নিতে পারবেন না বিজয়ন।

রাজ্য কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জোসেফ ভাজাক্কান বলেছেন "এবারের ভোট বিজয়নের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ভোটের ফল দলে তাঁর ভবিষ্যৎ স্থির করে দেবে।"

বিজেপি মুখপাত্র এম এস কুমারও এ ব্যাপারে সহমত। "বিজয়ন সরকার এবং দল দুয়েরই নেতৃত্বে। সিপিএমে আমরা এ জিনিস আগে দেখিনি। এবার সিপিএম ভাল ফল করতে না পারলে ওঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অবশ্যম্ভাবী।"

Read the Full Story in English

Cpm kerala Pinarayi Vijayan
Advertisment