উত্তর কেরালার ওয়েনাড় নির্বাচনী কেন্দ্রটি সম্প্রতিই তৈরি হয়েছে বলা চলে। ডিলিমিটেশনের পর, ২০০৯ সালে এই কেন্দ্রের সূচনা। এ কেন্দ্র আদিবাসী অধ্যুষিত বলা চলে। এখানে কংগ্রেসের সমর্থন যথেষ্ট। এর আগের দুবারের ভোটেই এখান থেকে জিতেছিলেন কংগ্রেস এমআই শানবাস। তিনি গত বছর মারা যান। তবে ২০১৪ সালের ভোটে তাঁর মার্জিন কমেছিল অনেকটাই। কংগ্রেস এখানে জয় দেখতে পাচ্ছে আরও একটি কারণে। যে সাতটি বিধানসভা নিয়ে এই লোকসভা কেন্দ্র, তার মধ্যে তিরুবামবাডি এবং এরনাড বিধানসভা কেন্দ্র দুটি কংগ্রেসের সঙ্গী মুসলিম লিগের দুর্গ বলে পরিচিত।
ফলে ওয়েনাড় থেকে রাহুলকে কোনওভাবেই কোনও বিপদের সম্ভাবনা নেই। কেরালা থেকে রাহুলই প্রথম গান্ধী-নেহরু পরিবারের হয়ে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন। কংগ্রেসের অন্দরমহলের ধারণা, এ ঘটনার ফলে গোটা দক্ষিণ ভারতেই কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করবে। শেষ পর্যন্ত দিল্লিতে সরকার গড়তে গেলে দক্ষিণে ভাল ফল অত্যন্ত জরুরি হয়ে দেখা দেবে।
আরও পড়ুন, রাহুল গান্ধীর মাসে ৬০০০ টাকার প্রতিশ্রুতি: লাভবান কারা?
কংগ্রেসের পক্ষে কেরালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। এখানে রাজ্য় নেতৃত্ব ভাল-মন্দের মধ্যে আটকে পড়েছেন। প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কেসি বেণুগোপাল সোনিয়া-রাহুল গোষ্ঠীর।
ওয়েনাড় কেন্দ্রে রাহুলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি নয়, এলডিএফের শরিক সিপিআই। ২০০৯ ও ২০১৪ সালে এখানে এলডিএফ ভোট পেয়েছিল যথাক্রমে ৪২.৩১ শতাংশ এবং ৩৮.৯ শতাংশ। কংগ্রেসের এমআই শানবাসের পরেই স্থান ছিল তাদের। অন্যদিকে বিজেপি এখানে দুবারই ভোট পেয়েছিল ১০ শতাংশের কম। এখানে তাদের কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই ধরেনি।
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন গত সপ্তাহে ওয়েনাড় থেকে রাহুলের প্রার্থী হওয়া নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। সাধারণত সংযতবাক হিসিবে পরিচিত বিজয়ন এ ব্যাপারে অবশ্য কোনও রাখঢাক করেননি।
কান্নুরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "সারা দেশের কাছে কী বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে তা কংগ্রেসের ভেবে দেখা উচিত... রাহুল এখানে বিজেপির সঙ্গে লড়তে আসছেন না, আসছেন এলডিএফের সঙ্গে লড়তে।"
আরও পড়ুন, আজমগড়ে কেন এবার মুলায়মের বদলে অখিলেশ?
দ্বিতীয়ত, রাহুলকে ওয়েনাড় থেকে ভোটে দাঁড় করানোর আরও একটা সুদূরপ্রসারী চিন্তা ভাবনা রয়েছে কংগ্রেসের। কেরালা কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ভুগছে। কংগ্রেস 'এ' গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উমেন চান্ডি এবং 'আই' গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন বিরোধী দলনেতা রমেশ চেন্নিতালা। দলের মধ্যে এ কথাও উঠেছে যে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে নয়, কোন গোষ্ঠীর কে টিকিট পেল, সেটাই বিবেচ্য হয়ে উঠেছিল। রাহুল যদি এখান থেকে না দাঁড়াতেন, তাহলে টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল টি সিদ্দিকির, যিনি চান্ডি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
ওয়েনাড়ের এক সিপিআই নেতা বলছিলেন, "কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তি দিনে দিনে দুর্বল হয়ে পড়ছে কেবল এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে।"
কেরালায় কংগ্রেস ও সিপিএমের মধ্যে সম্পর্ক যে মধুর নয়, সে কথা সর্বজনবিদিত। দ্বিভাজনের রাজনীতির এই রাজ্যে এদের কারও কাছেই, একটা বা দুটো আসন ছাড়া বিজেপি কোনও বিপদই নয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ২০০৪ সালের সংসদ নির্বাচনে কংগ্রেসকে বাঁচিয়েছিল এই বামেরা। কংগ্রেস ও বিজেপি দু পক্ষই সেবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল। সেবারই প্রথম কেরালা থেকে একটি আসনও পায়নি কংগ্রেস।