রাজস্থানে মধ্যপ্রদেশের ছায়া দেখতে শুরু করেছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। শনিবার দুপুরে হঠাৎই সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বোমা ফাটিয়েছিলেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। বলেছিলেন, বিজেপি নাকি রাজস্থানে সরকার ফেলার ষড়যন্ত্র করছে। অনেক কংগ্রেস বিধায়ককে ১৫ কোটি টাকা করে অফারও করেছে তারা। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফের নাটক। রবিবার সকালে হঠাৎই নিজের অনুগামীদের নিয়ে দিল্লি চলে গিয়েছেন কংগ্রেস নেতা তথা রাজস্থানের উপমুখ্যমন্ত্রী শচীন পাইলট। আর এতেই যেমন দুই নেতার বিবাদের গভীরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তেমনই ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কারও ঘণীভূত হচ্ছে।
যদিও, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব দাবি করছেন, 'রাজস্থানে অশোক গেহলট সরকার পতনের কোনও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু বিষয়টি যে অতটা সহজ নয়, তা কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব জানেন। স্মৃতিতে এখনও টাটকা তিন মাস আগের জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দল থেকে চলে যাওয়া ও কমলনাথ সরকারের পতনের বিষয়টি। হাত শিবিরের বেশিরভাগ স্থানীয় নেতার মুখেই এখন সেই কথা ঘোরাফেরা করছে।
জয়পুরে ডামাডোলকে গেহলট ও শচীন পাইলটের মধ্যে চূড়ান্ত অবিশ্বাসের পরিণতি বলে ব্যাখ্যা করছেন হাত শিবিরের এক নেতা। এআইসিসি-র প্রাক্তন এক সচিব ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য প্রসঙ্গে উত্থাপণ করে বলেন, 'এই পরিস্থিতিকে কোনও কিছুই স্থায়ী হতে পারে না।' দলের নেতাদের কথায়, 'কংগ্রেসের প্রবীণ নেতৃত্বের সঙ্গে নবীন নেতাদের বিরোধ সমস্যার কারণ হয়ে উঠছে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে চিন্তিত নবীন নেতৃত্ব অধৈর্য হয়ে পড়ছেন। এই ঝামেলা এখনও নেতৃ্ত্ব সমাধান করতে পারেনি এবং করার কোনও লক্ষণও নেই।'
রাজস্থানে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ বিবাদ আজকের নয়। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে রাজস্থানে কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয়ের পরে তরুণ নেতা শচীন পাইলটকে সেখানকার সভাপতি করেছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। নিজের দায়িত্ব শচীন কত ভালভাবে পালন করেছেন, তার পরিচয় পাওয়া যায় ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। বিজেপিকে হারিয়ে যে কংগ্রেস ফের রাজস্থানের ক্ষমতা দখল করেছিল। এর সিংহভাগ কৃতিত্ব ছিল শচীন পাইলটের। সবাই ভেবেওছিলেন রাজস্থানের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হবেন তিনিই। কিন্তু তাঁকে না করে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড বর্ষীয়ান অশোক গেহলটকে ফের রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী করেন। মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র, অর্থ দফতর সহ ৯টি পদ পাইলট শিবিরকে দেওয়া হয়। তবে এতে কাজ হয়নি। তখন থেকেই বিবাদের শুরু। যা বর্তমানে মহীরুহে পরিণত হয়েছে।
২০১৯ সালে মেয়র পদের প্রার্থী নির্বাচন থেকে গেলট সরকারের এক বছরপূর্তি ঘিরেও মুখ্যমন্ত্রী-উপমুখ্যমন্ত্রী বিবাদ প্রকাশ্যে এসে পড়ে। এছাড়া কোটায় সরকারি হাসপাতালে শিশু মৃত্যুকে কেন্দ্র করেও দু'জনের মতপার্থক্য লক্য করা যায়। মর্মান্তিক সেই ঘটনায় রাজ্য সরকারের আরও 'সংবেদনশীল ও দরদী' হওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন উপমুখ্যমন্ত্রী। যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওই ঘটনার জন্য পূর্বতন বিজেপি সরকারের কাজকেই দায়ী করেছিল। মৃত শিসুর বাড়ি যাওয়া নিয়েও দুই নেতার মদ্যে টানাপোড়েন লক্ষ্য করা গিয়েছিল। ২০১৯ সালে যোধপুর থেকে হেরে যান কংগ্রেসের প্রার্থী তথা গেহলটের পুত্র বৈভব। রাজস্থানে ভরাডুবি হয় কংগ্রেসের। এর জন্য পাইলট শিবির দায়ী করে অশোক গেহলটদের।
গত মাসে রাজ্যসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট অভিযোগ ছিল যে, বিজেপি তাঁর সরকার ফেলতে কংগ্রেস বিধায়কদের টোপ দিচ্ছে। তবে দলের দুই প্রার্থীই প্রত্যাশা মতো ভোট পেয়ে জয় হাসিল করেন। এরপরই শচীন পাইলট বলেছিলেন, 'যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলি ভিত্তিহীন।' নাম না নিলেও তাঁর নিশানায় যে হেগলট ছিলেন তা স্পষ্ট।
রাজস্থান পরিস্থিতি নিয়ে সানডে এক্সপ্রেসকে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি শচীন পাইলট। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে বিজেপি। সুযোগ বুঝে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ বিবাদকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা হাসিলে মরিয়া গেরুয়া শিবির।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন