মরু রাজ্যের রাজনীতিতে পরতে পরতে নাটক। মঙ্গলবার রাতেই রাজস্থান বিধানসভার স্পিকার সি পি যোশী শচীন পাইলট সহ কংগ্রেসের ১৯ জন 'বিদ্রোহী' বিধায়ককে নোটিস দেন। অধ্যক্ষের কাছে এঁদের বিধায়ক পদ খারিজের আবেদন জানানোর বিষয়টি ওই নোটিসে উল্লেখ ছিল।
সোম ও মঙ্গলবার দলের পরিষদীয় বৈঠকে অনুপস্থিতির জন্য শচীন পাইলটকে উপমুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতির পদ থেকে অপসারিত করা হয়েছে।
এক কথায় কংগ্রেসের অন্দরের বিবাদ তীব্র। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রেখেছে বিজেপি।
স্পিকার কেন শচীন পাইলট ও তাঁর সমর্থকদের নোটিস দিলেন?
মূলত দুটি কারণে এই নোটিস জারি করা হয়েছে।
প্রথমত, 'বিদ্রোহী' পাইলটের সঙ্গে কারা রয়েছেন এই নোটিসের মাধ্যমে তা স্পষ্টর হয়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত, মুখ্যমন্ত্রী সংখ্যার খেলায় এখনও পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে তা মনে হলেও, প্রথমদিকে রাজস্থানের রাজনীতিতে সংখ্যার খেলা যতটা হবে অনুমান করা হয়েছিল বাস্তবে তার থেকে তা অনেক বেশি।
বর্তমানে কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা কত?
২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস ১০০ আসনে জয় লাভ করে। পরে রামগড় আসন থেকে জয় পায় হাত শিবির। ফলে ২০০ আসনের রাজস্থান বিধায়সভায় 'ম্যাজিক
ফিগার' (১০১) ছুঁয়ে ফেলে কংগ্রেস। একই সঙ্গে সরকারকে সমর্থন করেছে বিএসপির ৬ বিধায়ক। খাতায়-কলমে এখনও শাসক শিবিরের কাছে ১০৭ বিধায়কের সমর্থন রয়েছে।
দলের ১৯ বিধায়ককে নোটিস ধরানোর পর বর্তমানে রাজস্থান বিধানসভায় কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৮।
মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট কি বলেছেন?
ছোট রাজনৈতিক দলের বিধায়ক ও নির্দলদের সমর্থন মিলিয়ে তাঁর সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট।
কিন্তু ১০৯ বিধায়ক সরকারের সমর্থনে রয়েছে বলে দাবি করেছে কংগ্রেস। পাইলট শিবিরেরের ১৯ জনকে ছাড়লে মুখ্যমন্ত্রীকে শক্তি প্রদর্শনের জন্য ১৩ নির্দল, বিটিপি (ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টি) ও সিপিএম বিধায়কদের উপর প্রবলভাবে নির্ভর করতে হবে।
ছোট রাজনৈতিক দলের বিধায়করা তাঁকেই সংমর্থন দেবেন, কীভাবে এত নিশ্চিৎ হচ্ছেন গেহলট?
ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টির দুই বিধায়ক গেহলট, নাকি পাইলট শিবিরের দিকে ঝুঁকে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে।
শক্তি প্রদর্শেনের সময় দুই সিপিএম বিধায়ক আদৌ কংগ্রেসকে ভোট দেবেন, নাকি সভায় অনুপস্থিত থাকবেন তা এখনও নিশ্চিৎ নয়। উল্লেখ্য, গত মাসে রাজ্যসভা ভোটে কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দেওয়ায় সিপিএম দলীয় বিধায়ক ও পরিষদীয় দলনেতা বলওয়ান পুনিয়াকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে।
সংখ্যাতত্বের কোন সমীকরণে বিজেপির লাভ?
বর্তমানে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৭২। এছাড়াও গেরুয়া শিবিরের সমর্থনে রয়েছে হনুমান বেনিয়াওয়াল নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক দলের ৩ বিধায়ক। সবমিলিয়ে বিজেপির হাতে ৭৫ বিধায়ক রয়েছে। বিজেপির নজরে গেহলট সরকারের পতন। তবে কাঠ-খর পোড়াতে হবে গেরুয়া দলটিকে। নির্দল, ছোট দলের বিধায়করা যাতে কংগ্রেসকে সমর্থন না দেয় তার চেষ্টা যেমন চালাতে হবে, তেমনই 'বিদ্রোহী' সাংসদরা স্পিকারে দেওয়া নোটিসের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করলে আদালতের রায়ের দিকেও চেয়ে থাকতে হবে কেন্দ্রের শাসক দলকে।
কংগ্রেসের ১৯ 'বিদ্রোহী' বিধায়ককে শুক্রবার পর্যন্ত নোটিসের জবাব দেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে। তবে এই সময়সীমার আগে বা পরে 'বিদ্রোহী'রা স্পিকারের নোটিসকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন। রাজস্থানে ক্ষমতা ধরে রাখার খেলায় এই পদক্ষেপ অন্য মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এক্ষেত্রে বিধায়ক পদ খারিজের বিষটিতে আদালত স্থগিতাদেশ জারি করলে বিজেপির লাভ। ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, 'বিদ্রোহী' কংগ্রেস বিধায়করা বিজেপিকে সমর্থন করবেন। তখন বিজেপির দিকে থাকবে মোট ৯৪ (৭৫+১৯) বিধায়কের সমর্থন। গেহলটের হাতে থাকবেন মাত্র ৮৮ জন। এই অবস্থায় বিধানসভায় শক্তি প্রদর্শনের সময় বিপদে পড়তে হতে পারে মুখ্যমন্ত্রী গেহলটকে।
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস সরকারের ভিবিষ্যৎ নির্ভর করবে ১৩ নির্দল ও ছোট রাজনৈতিক দলের বিধায়কদের সমর্থনের উপর।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন