৫৩ বছরের রাজীব কুমার ১৯৮৯ ব্যাচের আইপিএস। সহকর্মীদের কাছে তিনি অতীব দক্ষ অফিসার বলেই পরিচিত। কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার রাজীব কুমারকে সিবিআই এখন খুঁজছে। রাজীবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সারদা চিট ফান্ড মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথি নষ্ট করেছেন তিনি।
রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই অফিসাররা হানা দেওয়ার পর গত ৪ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা শহরে ধর্নায় বসেছিলেন। এ ঘটনার পরে কলকাতা পুলিশ ও সিবিআইয়ের মধ্যে নাটকীয় সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়। মমতার এই ভূমিকার পিছনে ছিল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যের অবস্থান ও বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থান স্পষ্ট করে দেয়। এ ঘটনা বর্তমান এডিজি, সিআইডি রাজীব কুমারের হাত যে শক্ত করেছিল তাতে সন্দেহ নেই।
রাজীব কুমারের কেরিয়ার যাঁরা কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁদের মতে, গোপন অপারেশন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করার ক্ষমতা এবং ইলেকট্রনিক নজরদারির ব্যাপারে তাঁর দক্ষতা রাজীব কুমারকে সিপিএম নেতৃত্বের কাছে এনে দিয়েছিল। ২০১১ সাল পর্যন্ত, যতদিন বামফ্রন্ট ক্ষমতায় ছিল ততদিন পর্যন্ত এই নৈকট্যও বজায় ছিল।
মমতা ক্ষমতায় আসার পর যে কয়েকজন অফিসার সম্পর্কে খোঁজ খবর করেন, রাজীব কুমার তাঁদের অন্যতম। মুখ্যমন্ত্রীর শুরুতে খুঁতখুঁতুনি থাকলেও সিনিয়র পুলিশ অফিসাররা মমতাকে বোঝান যে রাজীব কুমার কাজে আসবেন।
এক সিনিয়র পুলিশ আধিকারিক বলেন, ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর মমতা রাজীব কুমারকে গুরুতর দায়িত্ব দেবার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন না, কিন্তু রাজীবের ক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকবহাল এক প্রবীণ পুলিশ আধিকারিকের পরামর্শে তিনি রাজীবকে সরিয়ে দেননি।
২০১২ সালে রাজীব কুমারকে নবগঠিত বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে সারদ চিট ফান্ড কেলেংকারি ফাঁস হবার পর রাজীবকে এ ব্যাপারে তদন্তের জন্য গঠিত স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের শীর্ষে বসানো হয়। রাজীব ও তাঁর দল সুদীপ্ত সেন ও তাঁর দুই সহযোগীকে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে জম্মু কাশ্মীর থেকে গ্রেফতার করে।
২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট সারদা সংক্রান্ত সমস্ত মামলা সিবিআইয়ের হাতে অর্পণ করে। সারদা কেলেংকারি বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল বলেই এই রায় দেয় শীর্ষ আদালত। মামলার সমস্ত কাগজপত্র, প্রমাণ ও ধৃত ব্যক্তিদের সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেবার দায়িত্ব পড়ে এ ব্যাপারে গঠিত বিশেষ তদন্তদলের উপর।
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে রাজীব কুমারকে কলকাতা পুলিশের কমিশনার পদে নিযুক্ত করা হয়। এ পদে যাওয়ার জন্য তাঁর কার্যকারিতা যেমন কাজে লেগেছিল, তেমনই বলা হয়, এ সিদ্ধান্তের পিছনে ছিল মুখ্যমন্ত্রীর কাছেক লোক হওয়াও। তবে বিজেপি ও কংগ্রেস রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে বিরোধী নেতাদের ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ এনেছিল।
নির্বাচন কমিশন রাজীব কুমারকে কমিশনার পদ থেকে সরিয়ে দিতে বলে। তাঁর জায়গায় আসেন তৎকালীন এডিজি, সিআইডি সৌমেন মিত্র। কিন্ত তাঁর মেয়াদ ছিল মেরেকেটে এক মাস। ২০১৬ সালের ২১ মে ফের কমিশনার পদে ফিরিয়ে আনা হয় রাজীব কুমারকে।
কলকাতা পুলিশের এক প্রবীণ আধিকারিকের কথায়, "মমতা সরকার যখন মাওবাদীদের উৎখাত শুরু করে, সে সময়ে রাজীব তাঁর যোগ্যতা প্রমাণ করেন। লালগড় আন্দোলনের নেতা ছত্রধর মাহাতো এবং মাওবাদী নেতাদের গ্রেফতারে (২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে) তিনিই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের প্রধান হিসেবে অভিযুক্ত সম্ত্রাসবাদী পাকড়াও ও জাল নোট বাজেয়াপ্ত করার ঘটনায়ও তিনি অন্যতম ভূমিকা পালন করেন। দিল্লি ও মুম্বই পুলিশের এসটিএফের সঙ্গে যোগাযোগের সুবাদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খবরও পান তিনি। আমোরিকান সেন্টারে ২০০২ সালের হামলা এবং খাদিম কর্তা অপহরণ (২০০১) মামলাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন রাজীব।"
রুরকি বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমান রুরকি আইআইটি) থেকে কম্পিউটার সায়েন্সের বিই রাজীব কুমার পশ্চিমবঙ্গ ও কলকাতা পুলিশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বীরভূমের এসপি, এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের স্পেশাল এসপি, কলকাতা পুলিশের জেপুটি কমিশনার, এসটিএফের জয়েন্ট কমিশনার, সিআইডি-র ডিআইজি ইত্যাদি।
Read the Full Story in English