রাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্ট তৈরি হয়েছে। এই ট্রাস্ট অযোধ্যায় রাম মন্দির বানানোর দায়িত্বে। ট্রাস্টের প্রথম ট্রাস্টি হিসেবে মনোনীত হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বরিষ্ঠ আইনজীবী তথা প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল কে পাসারান। অযোধ্যা মামলায় তিনিই ছিলেন হিন্দু পক্ষের আইনজীবী।
৯২ বছর বয়সী পাসারানের নয়া দিল্লির বাসভবন R-20, Greater Kailash Part-1 ট্রাস্টের রেজিস্টার্ড অফিস হবে। তিনিই সে দফতরের কর্তা।
১৯২৭ সালে তামিল নাড়ুর শ্রীরঙ্গমে জন্মেছিলেন পাসারান। তাঁর ঐতিহ্য ধর্মীয় হিন্দুর। পাসারানের বাবা কেশব আয়েঙ্গারও একজন আইনজীবী ছিলেন, ছিলেন বেদজ্ঞও। পাসারানের তিন ছেলে মোহন, সতীশ ও বালাজিও আইনজীবী। ইউপিএ- ২-এর সময়ে স্বল্পকালের জন্য পাসারান সলিসিটর জেনারেল হিসেবে কাজ করেছিলেন। এই পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মও আইনি পেশায় যোগ দিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে পেশা শুরু করেছিলেন ১৯৫৮ সালে। জরুরি অবস্থার সময়ে তিনি তামিলনাড়ুর অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে নিযুক্ত হন এবং ১৯৮০ সালে দেশের সলিসিটর জেনারেল পদে যোগ দেন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত তিনি দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন।
শবরীমালা মামলায় আয়াপ্পা মন্দিরে ঋতুমতী মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার পক্ষে নায়ার সার্ভিস সোসাইটির হয়ে মামলা লড়েছিলেন তিনি। তবে পাঁচ সদস্যের সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ তাঁর সওয়ালের বিরুদ্ধে গিয়ে মহিলাদের প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল।
আদালতে প্রায়শই তিনি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ উদ্ধৃত করে থাকেন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি তথা মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কৌশল তাঁকে ভারতীয় আইন ব্যবস্থায় পিতামহ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন, ধর্মের সঙ্গে আপস না করে পাসারানের আইন বিষয়ে অবদানের জন্য।
রাজনৈতিকভাবে, পাসারান ১৯৭০ থেকে প্রায় প্রতিটি প্রশাসনেরই নয়নের মণি। তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করতে তিনি কখনও পিছ পা হননি। ১৯৮৫ সালে সলিসিটর জেনারেল হিসেবে তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বিল্ডিং ভেঙে ফেলার ব্যাপারে শো কজ নোটিসের ব্যাপারে সরকারকে পদক্ষেপ না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
তবে ইন্দিরা গান্ধী সরকার তাঁর মতামত অগ্রাহ্য করার পর তিনি আদালতে সরকারের হয়ে সওয়াল করতে অস্বীকার করেন, এবং তাঁকে এ ব্যাপারে জোর করা হলে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়ে দেন। সরকার, তাঁর এই প্রকাশ্য বিবৃতি সত্ত্বেও তাঁকে শুধু নিজ পদে বহালই রাখেনি, দু মাসের মধ্যে পাসারানকে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল পদে উন্নীত করা হয়।
১৯৯৯-২০০৪ এনডিএ পর্যায়ে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী তাঁকে সংবিধান পর্যালোচনার একটি কমিটিতে রাখেন। পূর্ববর্তী সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ খেতাব দেয়। প্রথম ইউপিএ সরকার তাঁকে পদ্ম বিভূষণ খেতাব দেয় এবং রাজ্যসভায় মনোনীত করে।
২০১৬ সাল থেকে, পাসারানের আদালতে উপস্থিতি কমে যায়। এর পর তিনি মাত্র দুটি মামলা নিয়েছিলেন, একটি শবরীমালা ও অন্যটি অযোধ্যা।
পাসারানের সঙ্গে অভিনেতা কামাল হাসানেরও আত্মীয়তা রয়েছে। পাসারানের স্ত্রী সরোজা হাসানের তুতো বোন।