Advertisment

Ram Rajya: শুধু মোদীই নন, গান্ধীজিও বলেছিলেন রাম রাজ্যের কথা, রামকে শ্রদ্ধা করতেন মহাত্মাও

Gandhi Ram Rajya: ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকায় গান্ধীজি লেখেন, 'আমার কল্পনার রাম এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকুক বা না থাকুক, রামরাজ্যের প্রাচীন আদর্শ নিঃসন্দেহে সত্যিকারের গণতন্ত্রের মধ্যে একটি।'

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Mahatma Gandhi। Ram Rajya

Mahatma Gandhi-Ram Rajya: ১৯২৯ সালে হিন্দ স্বরাজে গান্ধী লিখেছিলেন, 'আমি রামরাজ্য বলতে চাই, ঈশ্বরের রাজ্য।' (Pixabay-এর মাধ্যমে ছবি)

Modi and Gandhi: অযোধ্যায় রাম মন্দিরের অভিষেক অনুষ্ঠানে সোমবার (২২ জানুয়ারি) অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার প্রেক্ষিতে উঠে এসেছে 'রাম রাজ্য' শব্দটি। এই 'রাম রাজ্য' হল একটি আদর্শ রাষ্ট্র। যা রাম ফিরে আসার পরে এবং তাঁর শাসন প্রতিষ্ঠার পরে অযোধ্যায় লাগু হয়েছিল বলেই মনে করা হয়। উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় চলতি মাসের শুরুতে বলেছিলেন যে 'রাম রাজ্য'-র চেতনা সংবিধানে নিহিত রয়েছে। আর, সংবিধান প্রণেতারা চিন্তাভাবনা করেই ভগবান রাম, লক্ষ্মণ এবং দেবী সীতার ছবি মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত অধ্যায়ের শীর্ষে রেখেছেন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ গত বছর বলেছিলেন, 'ইউপি রাম রাজ্যের দেশ। সেই চেতনা নিয়েই এগিয়ে চলেছে। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, একটি উন্নয়নমুখী সমাজ এবং রাজনৈতিক সততাই প্রতিটি নাগরিকের জীবনে সুখ আনতে পারে।'

Advertisment
  • গান্ধীজি ধর্ম এবং রাজনীতিকে আলাদা করেননি।
  • গান্ধীজি, ধর্ম এবং রাজনীতিকে ঐক্য গঠনের স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন।
  • মহাত্মাজি চেয়েছিলেন স্থায়ী সংস্কার।

রাম রাজ্য সম্পর্কে গান্ধীজি কী বলেছিলেন?
অতীতে প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছেন, মহাত্মা গান্ধী রাম রাজ্য সম্পর্কে ঠিক কী ভাবতেন? ২০১৪ সালে অযোধ্যায় একটি রাজনৈতিক সমাবেশে, মোদী তাঁর বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, 'যব লোগ মহাত্মা গান্ধী কো পুঁছা করতে থে, রাজ কেয়সা হোনা চাহিয়ে… তো মহাত্মা গান্ধী একহি শব্দ মে সমঝায়া, কি আগর কল্যাণকারী রাজ কি কল্পনা করনি হ্যায়, তো রাম রাজ হোনা চাহিয়ে।' (মানুষ যখন মহাত্মা গান্ধীকে জিজ্ঞেস করত, কি ধরনের শাসন হওয়া উচিত, তখন মহাত্মা গান্ধী শুধুমাত্র একটি বাক্যাংশে ব্যাখ্যা করতেন যে আমরা যদি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কথা চিন্তা করি, তাহলে রাম রাজ্য হওয়া উচিত)। অর্থাৎ, 'যেখানে সবাই সুখী এবং কেউ দুঃখী নয়', এমন রাজ্য।

বিভিন্ন লেখায়, গান্ধী একটি নিখুঁত রাষ্ট্র সম্পর্কে তাঁর ধারণা বর্ণনা করেছেন। ১৯২৯ সালে 'হিন্দ স্বরাজ' লিখে তিনি বলেছিলেন, 'রামরাজ্য বলতে আমি হিন্দু রাজ বলতে চাই না। আমি রামরাজ্য বলতে বুঝিয়েছি, ঈশ্বরের রাজ্য। আমার কাছে রাম ও রহিম এক ও অভিন্ন দেবতা। আমি সত্য ও ন্যায়ের এক ঈশ্বর ছাড়া অন্য কোন ঈশ্বরকে স্বীকার করি না।' সেবছরই ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকায় গান্ধীজি লেখেন, 'আমার কল্পনার রাম এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকুক বা না থাকুক, রামরাজ্যের প্রাচীন আদর্শ নিঃসন্দেহে সত্যিকারের গণতন্ত্রের মধ্যে একটি। যেখানে নিচুস্তরের নাগরিকরাও দ্রুত ন্যায়বিচারের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছেন। এমনকী, কুকুরও রামরাজ্যের অধীনে ন্যায়বিচার পেয়েছে বলেই বর্ণনা করেছেন কবি।'

গান্ধীজির লেখার এই শেষ লাইনটি কবি বাল্মীকির রামায়ণের একটি ঘটনাকে নির্দেশ করে। যেখানে একটি কুকুর অযোধ্যা আদালতে একটি ব্রাহ্মণ ভিক্ষুকের দ্বারা আঘাত করা একটি ক্ষত সম্পর্কে অভিযোগ করতে যাওয়ার কথা রয়েছে। এই গল্পের একটি সংস্করণ বলে যে মানুষ এবং কুকুর উভয়েই খাবার নিয়ে লড়াই করছিল। আর, ফলস্বরূপ ভিক্ষুক কুকুরটিকে আঘাত করেছিল। রাম তাঁর গল্প শোনেন এবং সিদ্ধান্ত অনুসারে লোকটিকে একটি শাস্তি দেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে মানুষটিকে ভাল কাজ করার জন্য একটি বাসস্থান এবং সম্পদ দেওয়া উচিত। তাঁর জন্য একটি ভাল জীবন তৈরি করা উচিত।

Mahatma Gandhi
'জাতির জনক' মহাত্মা গান্ধী।

আরও পড়ুন- শুধু ভারত না! প্রাচীনকালে রামায়ণ ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে

ধর্ম, রাজনীতি ও গান্ধী
অতএব, গান্ধীর জন্য রাম রাজ্য শুধুমাত্র একটি গোষ্ঠী বা বিশেষ ধর্ম ছিল না। গান্ধীজি ১৯৪৭ সালে লিখেছিলেন, 'আমার হিন্দু ধর্ম আমাকে সব ধর্মকে সম্মান করতে শেখায়। এর মধ্যেই রামরাজ্যের রহস্য লুকিয়ে আছে।' এই রাম রাজ্যের ধারণা এমন একটি সময়কালেও ছিল যখন এই দেশ, ঔপনিবেশিক শাসন, স্বাধীনতা আন্দোলন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও হিংসার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। সম্ভবত গান্ধীও ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আর সেটা, ধর্মের সঙ্গে যুক্ত একটি ধারণা জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে। তিনি দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন যে, অন্যদের সঙ্গে সহাবস্থান করা সম্ভব।

ধর্মকে সম্মান করা সংবিধানেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের মাধ্যমে। এটি একটি মৌলিক অধিকার যা জাতি, ধর্ম, জন্মস্থান বা লিঙ্গ নির্বিশেষে আইনের অধীনে সমতা নিশ্চিত করে। অনুচ্ছেদ ১৫-এ আরও বলা হয়েছে, 'শুধু ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, জন্মস্থান বা তাদের যে কোনও একটির ভিত্তিতে রাষ্ট্র কোনও নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করবে না।'

গান্ধী রাজনীতির শৈলীর কথাও বলেছিলেন। যেখানে তিনি ধর্ম এবং রাজনীতিকে আলাদা করেননি। বরং, তিনি ধর্ম ও রাজনীতিকে ঐক্য গঠনের স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন। ১৯১৯ সালের প্যান-ইসলামিক খিলাফত আন্দোলন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে (১৯১৪-১৯১৮) মিত্র শক্তির (ব্রিটেন-সহ) হাতে পরাজয়ের পর অটোমান সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি রোধ করার জন্য শুরু হয়েছিল। গান্ধী একে সমর্থন করেছিলেন এবং একে ভারতে একটি ব্রিটেন বিরোধী আন্দোলন হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। তিনি খিলাফত আন্দোলনের আওতায় হিন্দু ও মুসলমানদের একত্রিত করতে চেয়েছিলেন।

Gandhi Ashram। Panihati
Gandhi Ashram-Panihati: সোদপুরের গান্ধী আশ্রমে বারবার এসেছিলেন মহাত্মা।

আরও পড়ুন- স্বাধীনতার পর নয়, রাম মন্দির আন্দোলন ২০০ বছরের এক যাত্রা, পার হয়েছে বহু মাইলফলক

সাম্য ও অহিংসার রূপ রাম রাজ্য
১৯৩৪ সালে গান্ধী লিখেছিলেন, 'আমার স্বপ্নের রামরাজ্য রাজপুত্র এবং দরিদ্রদের সমান অধিকার নিশ্চিত করে।' তিনি একে 'বিশুদ্ধ নৈতিক কর্তৃত্বের ভিত্তিতে জনগণের সার্বভৌমত্ব' হিসেবেও বর্ণনা করেছেন। যার অর্থ এই ধারণা গণতান্ত্রিক হবে।

অন্য একটি প্রবন্ধে, গান্ধীজি একটি ন্যায়সম্মত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আরও আধ্যাত্মিক দিকের কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন, 'আপনি যদি ভগবানের দরবারকে রামরাজ্য রূপে দেখতে চান, তবে প্রথম প্রয়োজন আত্মদর্শন। আপনার নিজের দোষগুলোকে হাজার গুণ বড় করতে হবে। প্রতিবেশীর দোষে চোখ বন্ধ করে থাকতে হবে। এটাই প্রকৃত অগ্রগতির একমাত্র উপায়।'

গান্ধীজি অহিংসা বা অহিংসার নিজস্ব ধারণার সঙ্গেও রামরাজ্যের ধারণাটিকে যুক্ত করেছিলেন। গান্ধী বলেছিলেন, 'অন্যায়-অসাম্যের বর্তমান রাজ্যে এমন কোনও রামরাজ্য থাকতে পারে না, যেখানে জনসাধারণ যথেষ্ট পরিমাণে খেতে পায় না। আমি চাই কোনও স্থায়ী সংস্কার।' এইভাবে, তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে রাম রাজ্য একটি শক্তিশালী নৈতিক শক্তি হয়ে উঠবে। যা বিপ্লবী পদ্ধতিতে অর্জিত হবে না। কিন্তু, অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্জিত হবে।

bjp Mahatma Gandhi modi
Advertisment