Advertisment

রশিদ চৌধুরি কে? আমারিকা কেন তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তে নামছে?

২০০৯ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে রশিদ চৌধুরীসহ আরও ১২ জন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Rashed Chowdhury, the Bangladeshi against whom the US has reopened a case

এম এ রশিদ চৌধুরির ছবি উইকিপিডিয়া থেকে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যায় (১৯৭৫) অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী এম এ রশিদ চৌধুরির মামলা পুনরায় তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল, পলিটিকো-র প্রতিবেদন অনুযায়ী এমনটাই জানা যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন এম এ রশিদ চৌধুরি। হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরই বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের উপর থেকে কূটনৈতিক রক্ষাকবচ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা। সেই সময় থেকেই আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করেন এম এ রশিদ চৌধুরি।

Advertisment

কে এই রশিদ চৌধুরি?

এম এ রশিদ চৌধুরি বাংলাদেশের এক প্রাক্তন সেনাকর্মী এবং পরবর্তীকালে কূটনীতিক। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানকে হত্যা এবং সেনা অভ্যুত্থানের সময় অন্যতম ভূমিকা পালন করেছিলেন তত্কালীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত এম এ রশিদ চৌধুরি, এমনটাই জানা যায়।

তখন রশিদ চৌধুরিকে বিচার হয়েছিল?

বঙ্গবন্ধুর হতার পর সে দেশে শাসন ক্ষমতায় আসে সেনা। এই সেনা সরকার ক্ষমতায় এসেই সেনা অভ্যুত্থানে যুক্ত সকল ব্যক্তির জন্য রক্ষাকবচ হিসেবে একটি অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) জারি করে। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এই অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তরিত করে। সে সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। মুজিব হত্যার পরের দিনই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান হয়েছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। ১৯৭৭ সালে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন এবং ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালের মে মাসে জিয়াউর রহমানকেও হত্যা করা হয়। এরপর তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া বিএনপি-র প্রধান নেত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

খালেদা জিয়া পাঁচ বছরের মেয়াদে দুই পর্বে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত। তবে ১৯৯৬ সালে একবার ক্ষমতায় আসে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার সরকার। আর সে সময়েই বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের রক্ষাকবচ প্রত্যাহার করা হয় এবং ২০ ব্যক্তিকে মুজিব হত্যায় অভিযুক্ত করে কাঠগড়ায় তোলে। ১৯৯৬ সালে যখন হাসিনা প্রথমবারের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন, সে সময় ব্রাজিলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পদে আসীন ছিলেন রশিদ চৌধুরি। তাঁকে হাসিনা সরকার ঢাকায় ডেকে পাঠালে তিনি সপরিবারে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পালিয়ে যান।

আমেরিকায় কী হল?

মার্কিন মুলুকে পৌঁছনোর পর রশিদ চৌধুরি কূটনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করলেন। কিন্তু আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি কূটনৈতিক আশ্রয় পেলেন না, তা পেলেন আরও 8 বছর পর। এরপর যখন বাংলাদেশ সরকার মুজিব হত্যায় রশিদ চৌধুরির ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তাকে দোষী সাব্যস্ত করল এবং তার এই কূটনৈতিক আশ্রয়ের বিরোধিতা করল, তখন (২০০৪) মার্কিন অভিবাসন দফতর জানায়, ‘মুজিব হত্যার ষড়যন্ত্রে একদম শেষ মুহূর্তে ছিলেন চৌধুরি এবং তিনি অপেক্ষাকৃত লঘু ভূমিকা পালন করেছিলেন’। আমেরিকার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (অভ্যন্তরীণ বিষয়ক দফতর) কিন্তু অভিবাসন বিভাগের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত হল না। বরং মুজিব হত্যা ষড়যন্ত্রে চৌধুরির যোগসাজশের কথা উল্লেখ করে তাকে যাতে কূটনৈতিক আশ্রয় দেওয়া না হয় সে বিষয়ে সচেষ্ট হলেন হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কর্তারা। মার্কিন সরকারের দুই বিভাগের এই পরস্পরবিরোধী অবস্থানের ফলে গোটা বিষয়টা সে দেশের ‘বোর্ড অফ ইমিগ্রেশন আপিলস’ পর্যন্ত গড়াল। এরপর ২০০৬ সালে ‘বোর্ড অফ ইমিগ্রেশন আপিলস’ চৌধুরিকে কূটনৈতিক আশ্রয় মঞ্জুর করে।

১৫ বছর পর হঠাৎ আমেরিকা কেন পুনরায় তদন্ত শুরু করল?

ট্রাম্প প্রশাসনের হঠাৎ এই তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চৌধুরির আইনজীবীরা। এক আইনজীবী বলেছেন, “মার্কিন সরকার যে বাংলাদেশ সরকারকে তুষ্ট করার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা স্পষ্ট”। উল্লেখ্য, কূটনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মার্কিন সরকার আসলে বাংলাদেশের হাসিনা সরকারকে খুশি করতে চাইছে। কারণ, এই মুহূর্তে বেশ কিছু ক্ষেত্রে চিনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ। বিশেষত, বাংলাদেশের পরিকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে চিনের সাহায্য কিছুটা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে ওয়াশিংটন ডিসি-র কপালে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের দাবি, বেইজিংয়ের আরবান কন্সট্রাকশন গ্রুপের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সিলেটে একটি বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পে অগ্রসর হয়েছে হাসিনা সরকার। আর এই বিমানবন্দরটি আসাম মেঘালয় এবং ত্রিপুরা সীমান্তের খুবই কাছে।

বাংলাদেশ কি রশিদ চৌধুরীর বিষয়ে বিশেষ তৎপরতা দেখিয়েছে?

বেশ কয়েক বছর ধরেই মার্কিন সরকারকে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে চৌধুরীকে হস্তান্তর করার জন্য। উল্লেখ্য ২০০৯ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে রশিদ চৌধুরীসহ আরও ১২ জন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন।

২০১১ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশের তত্কালীন বিদেশমন্ত্রী দীপু মনি এই বিষয়ে সে সময়কার মার্কিন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে ওয়াশিংটন ডিসিতে আলোচনায় বসেছিলেন। এর পরেই ২০১২ সালের ২৯ মার্চ মার্কিন মুলুকে তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের বেশ কয়েকজন কংগ্রেস সদস্যকে এবং মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতরের পদাধিকারীদের চৌধুরীকে হস্তান্তর করার বিষয়ে অনুরোধ করেছিলেন।

২০১২ সালে হিলারি ক্লিন্টন ঢাকায় এলে তখনও একই বিষয়ে তাঁকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন দীপু মনি। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বর্তমান মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেওকে একাধিকবার অনুরোধ করেছেন যাতে চৌধুরীকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

Read in English

Advertisment