Advertisment

Explained: সুড়ঙ্গ থেকে শ্রমিক উদ্ধারে সাফল্যের পিছনে বিশেষ পদ্ধতি, কী এই 'ব়্যাট হোল মাইনিং'?

ঝাঁসি থেকে আনা হয়েছে অভিজ্ঞ শ্রমিকদের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Silkyara-Barkot tunnel

দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই পদ্ধতি প্রচলিত আছে। (এক্সপ্রেস ছবি: চিত্রল খামভাটি)

ধসে পড়া সিল্কিয়ারা-বারকোট সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ শ্রমিককে উদ্ধারকাজ রবিবার বড় ধাক্কা খেয়েছিল। ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দিয়ে ড্রিলিং মেশিন চালাতে গিয়ে অগার জয়েন্ট ভেঙে যায়। উদ্ধারকারীরা ভিতরে আটকে থাকা মেশিনের ব্লেডটি কেটে ফেলেন। তা সরাতে গত দু'দিন ব্যয় হয়েছে। এরপর, উদ্ধারকারীরা পদ্ধতি বদলান। 'ব়্যাট হোল মাইনিং' পদ্ধতি নেন। যাতে সাফল্য এসেছে।

Advertisment

শ্রমিকরা জানিয়েছেন

এই পদ্ধতি কাজে লাগাতে ঝাঁসি থেকে শ্রমিক আনা হয়েছে। ঝাঁসির বাসিন্দা পার্সাদি লোধি তাঁদেরই একজন। তিনি জানান, উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত পাইপের মধ্যে ঢুকেছেন। হাতে ধরা সরঞ্জাম দিয়ে সুড়ঙ্গে গর্ত করেছেন। লোধি বলেন, 'আমি দিল্লি এবং আহমেদাবাদে গত ১০ বছর ধরে একাজ করছি। তবে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারের জন্য একাজ আমি প্রথম করলাম। ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। সুড়ঙ্গ ৮০০ মিটার চওড়া। ধ্বংসাবশেষ প্রায় ১২ মিটার ছড়ানো। মাটি হলে কাটতে ২৪ ঘণ্টা লাগে। পাথর হলে ৩২ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় লাগবে।' পার্সাদি লোধির মতই ব়্যাট হোল মাইনিংয়ের জন্য ঝাঁসি থেকে বিপিন রাজপুত নামে আরও এক শ্রমিককেও আনা হয়েছে। তিনি আবার তিন বছর ধরে ব়্যাট হোল মাইনিং পদ্ধতিতে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করছেন।

ব়্যাট হোল মাইনিং কী?

ব়্যাট হোল মাইনিং গর্ত খোঁড়ার এক পদ্ধতি। মেঘালয়-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এই পদ্ধতি প্রচলিত আছে। পাহাড়ের গা থেকে কয়লা নেওয়ার জন্য এই পদ্ধতি কাজে লাগানো হয়। সরু গর্ত করা হয়। তবে সেই গর্তে একজন শ্রমিক অনায়াসে নামতে পারেন। আর, গর্ত থেকে কয়লাও তুলতে পারেন। এরপর সেই গর্ত বড় করা হয়। যেখানে আরও শ্রমিক দড়ি এবং বাঁশের মই ব্যবহার করে খনির গর্তে নামেন। তাঁরা গাঁইতি, ঝুড়ির মত বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করে কয়লা তুলতে শুরু করেন।

আরও পড়ুন-  চিন-এ নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব কি কোভিড-১৯ এর মতই ভয়ংকর? আতঙ্কিত হু, কেন ছড়াচ্ছে সংক্রমণ?

বিশেষজ্ঞের বক্তব্য

শিলং-এর নর্থ ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটি (এনইএইচইউ)-এর পরিবেশ বিদ্যার অধ্যাপক ওপি সিং ২০১৮ সালে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছিলেন যে, 'ব়্যাট হোল মাইনিং দুই ধরনের। তার মধ্যে একটি হল পাশ থেকে সুড়ঙ্গ কাটার পদ্ধতি। পাহাড়ের ঢালে পাশ থেকে সরু সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়। যতক্ষণ না কয়লার স্তর দেখা যাচ্ছে, শ্রমিকরা সুড়ঙ্গ খুঁড়ে যান।' আরেকটি পদ্ধতি হল বক্স কাটিং। এর মাধ্যমে উপর থেকে খনন করা হয়। যেখানে ৪০০ ফুট গভীর পর্যন্তও উপর থেকে সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়। কয়লার স্তরের কাছে পৌঁছলে শ্রমিকরা তারপর পাশ থেকে সুড়ঙ্গ খোঁড়া আর কয়লা তোলা শুরু করেন।

পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

ব়্যাট হোল মাইনিং, নিরাপত্তা সংকট এবং পরিবেশগত বিপদ তৈরি করে। কারণ, এই খনিগুলো সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত হয়। বায়ু চলাচলের যথাযথ ব্যবস্থা থাকে না। পরিকাঠামোগত ব্যবস্থা থাকে না। শ্রমিকদের সুরক্ষার অভাব আছে। উপরন্তু, এই খননের পদ্ধতি ভূমিক্ষয়, বন উজাড় হয়ে যাওয়া এবং জল দূষণের কারণ হতে পারে। এই খনন পদ্ধতিটি তাই বিপজ্জনক বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু মনে করাই নয়। পরিবেশগত ক্ষতি এবং অসংখ্য দুর্ঘটনার জন্য বারবার ব়্যাট হোল মাইনিং পদ্ধতি সমালোচনার মুখে পড়েছে। এই পদ্ধতিতে কাজ করতে গিয়ে আহত হওয়া এবং মৃত্যুর সংখ্যা নেহাত কম নয়। ব়্যাট হোল মাইনিং পদ্ধতিতে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করতে তাই উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। কিন্তু, অর্থনৈতিক কারণ এবং স্থানীয় জনগণের সুবিধার কারণে বিকল্প জীবিকা হিসেবে এই পদ্ধতি টিকে আছে।

ব়্যাট হোল মাইনিং কখন নিষিদ্ধ হল?

২০১৪ সালে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি) ব়্যাট হোল মাইনিং পদ্ধতিকে নিষিদ্ধ করে। ২০১৫ সালেও এই নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল। এনজিটির পর্যবেক্ষণ, 'বর্ষায় খনি এলাকা জলে প্লাবিত হয়ে যায়। সেই সময় এই পদ্ধতিতে কাজ করতে গিয়ে বহু শ্রমিকের মৃত্যু হয়।' জাতীয় পরিবেশ আদালতের এই নির্দেশ বিশেষ করে মেঘালয়ের কথা মাথায় রেখে দেওয়া হয়েছিল। কারণ, সেখানে কয়লা তোলার জন্য ব়্যাট হোল মাইনিং, একটি চিরাচরিত পদ্ধতি। কিন্তু, নানা কারণে মেঘালয় সরকার এনজিটির এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছে।

Uttarkashi Tunnel Collapse Migrant labourer Uttarkashi tunnel trapped Uttarakhand
Advertisment