পার্লামেন্টে জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে জাতীয় বিতর্কে, সুপ্রিম কোর্ট এবং সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আলোচনাতেও, 'মানুষ' বা সেখানকার বাসিন্দা শব্দটি বারবার উঠে এসেছে। মানুষের অধিকার সুরক্ষিত বা অস্বীকার করার প্রেক্ষাপটে এবং তাদের স্বার্থে বা বিপক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেই উঠে এসেছে এই শব্দ।
বারবার উঠেছে বাসিন্দাদের প্রসঙ্গ
জম্মু ও কাশ্মীর সংরক্ষণ (সংশোধন) বিল, ২০২৩ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধন) বিল, ২০২৩ পাসের আগে ৬ ডিসেম্বর লোকসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন যে প্রস্তাবিত আইনগুলি অভিবাসী কাশ্মীরি এবং সেই সব নারীদের উপকার করবে, 'যাঁরা গত ৭০ বছর ধরে তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত।' আর এক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠছে, জম্মু-কাশ্মীরের রাষ্ট্রীয় বিষয়, স্থায়ী বাসিন্দা এবং আবাসিক বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে? পূর্ববর্তী রাজ্যের ডোগরা শাসকদের সময় থেকে, পরবর্তী সরকারের জমানায় জম্মু ও কাশ্মীরের প্রকৃত বাসিন্দাদের সংজ্ঞায়িত করার প্রশ্ন তাই বারবার উঠেছে। এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে, ১৯২৭ সালে মহারাজা হরি সিং-এর রাষ্ট্রীয় ধারণায় নাগরিকদের মধ্যে চারটি শ্রেণি ছিল।
নাগরিকদের প্রথম শ্রেণি
২০ এপ্রিল, ১৯২৭-এ, জম্মু ও কাশ্মীরের ডোগরা শাসক, মহারাজা হরি সিং সরকারি আদেশ নম্বর আইএল/৮৪ জারি করেছিলেন। তাঁর রাজ্যের বাসিন্দাদের 'রাষ্ট্রীয় প্রজা' হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। তাঁদের চারটি বিভাগে বিভক্ত করেছিলেন। ১৮৪৬ সালে প্রথম ডোগরা রাজা মহারাজা গুলাব সিংয়ের রাজত্ব শুরু হওয়ার আগে যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং রাজ্যে বসবাস করেছিলেন তাঁরা রাজ্যের প্রথম শ্রেণির প্রজা ছিলেন। সেই সঙ্গে সেই সব ব্যক্তিরাও প্রথম শ্রেণির প্রজা ছিলেন, যাঁরা ১৯৪২ সালের সম্বত শুরু হওয়ার আগে থেকেই জম্মু-কাশ্মীরে এসে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেছিলেন।
নাগরিকদের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণি
দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক ছিলেন তাঁরা, যাঁরা অন্যান্য স্থান থেকে এসে স্থায়ীভাবে জম্মু ও কাশ্মীরে বসতি স্থাপন করেছিলেন। আর, মহারাজা প্রতাপ সিং সিংহাসনে থাকাকালীন ১৯৬৮ সম্বত বা (১৯১১ খ্রিস্টাব্দ) শেষ হওয়ার আগেই জম্মু-কাশ্মীরে স্থাবর সম্পত্তি অর্জন করেছিলেন। তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক ছিলেন তাঁরা, যাঁরা 'রায়তনামা' (ছাড়)-এর অধীনে জম্মু-কাশ্মীরে কোনও স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ করেছিলেন। আর, পরবর্তীতে 'ইজাজতনামা' (অনুমতি)-এর ভিত্তিতে জম্মু-কাশ্মীরের সম্পত্তি পেয়েছিলেন।
নাগরিকদের চতুর্থ শ্রেণি
মহারাজার বিশেষ আদেশ অনুযায়ী, চতুর্থ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল তৎকালীন রাজ্যের মধ্যে নথিবদ্ধ সরকারি ধাঁচের বিভিন্ন কোম্পানি। যেগুলো নিয়ে সরকার আর্থিকভাবে আগ্রহী ছিল। অথবা, ওই সব সংস্থার আর্থিক স্থিতিশীলতার ব্যাপারে সরকার সন্তুষ্ট ছিল। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সুবিধার স্বার্থে মহারাজার একটি বিশেষ আদেশে এই সব সংস্থাগুলোকেও জম্মু-কাশ্মীরের প্রজা বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন- সংবিধানের ৩৭০ ধারা একটা আইনি চ্যালেঞ্জ, কী তা, যার মুখোমুখি হল সুপ্রিম কোর্ট?
নাগরিকদের বিশেষ সুবিধা
১৯২৭ সালের নির্দেশে বলা হয়েছিল, জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম শ্রেণির নাগরিকরা অন্যান্য শ্রেণির সমস্ত নাগরিকদের চেয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকরা রাজ্যের বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে, কৃষির জন্য রাষ্ট্রীয় জমি পাওয়ার ব্যাপারে, বাড়ি নির্মাণ এবং চাকরি পাওয়ার ব্যাপারে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকদের চেয়ে বেশি অধিকার পাবেন। আর, যে কোনও শ্রেণির রাষ্ট্রীয় প্রজাদের বংশধররা একই শ্রেণির রাষ্ট্রীয় প্রজা হওয়ার অধিকারী হবেন। যে কোনও শ্রেণির রাষ্ট্রীয় প্রজার স্ত্রী বা বিধবা তাঁর স্বামীর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা অর্জন করবেন। তবে সেটা ততক্ষণই, যতক্ষণ তিনি রাষ্ট্রে থাকবেন এবং অন্য কোথাও স্থায়ীভাবে বসবাস করবেন না।