গত মাসের শেষের দিকে, ইজরায়েলের তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানিয়েছেন যে তাঁরা গাছপালা দ্বারা সৃষ্টি হওয়া যন্ত্রণাদায়ক শব্দ যন্ত্রের সাহায্যে প্রকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। গবেষকরা জানান যে এই উদ্ভিদগুলোর প্রতিটি আলাদা জায়গায় ছিল। বিশেষ সময়ে সেগুলো তিক্ষ্ণ শব্দ তৈরি করেছে। যখন জলের প্রয়োজন হয়েছে, তখনও ওই সব উদ্ভিদের থেকে এমন শব্দ শোনা গিয়েছে।
এই প্রথমবার গাছপালাও যে কোনও ধরনের শব্দ করে, সেটা ধরা পড়ল। আর, এই যুগান্তকারী গবেষণার ফলাফল বিশ্বব্যাপী সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। কিন্তু, ভারতীয়র কাছে এই ধারণা নতুন কিছু নয়। জগদীশচন্দ্র বসু এক শতাব্দীরও বেশি আগে দেখিয়েছিলেন যে গাছপালা সংবেদন অনুভব করে এবং পশুদের মতোই আনন্দ ও ব্যথা অনুভব করে। বাচ্চাদের প্রায়ই পাতা, ফুল বা ডাল না-কাটতে পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এটি গাছ বা গাছের ব্যথার কারণ হতে পারে।
গাছপালা যে যন্ত্রণায় 'কাঁদে' সেই আবিষ্কার, তাই ভারতীয়দের কাছে তেমন বিস্ময়কর কিছু মনে হয়নি। কারণ, জগদীশচন্দ্র বসুর পরবর্তী সময় থেকে বংশপরম্পরায় ভারতীয়রা এমনটাই জেনে এসেছে। তাই ভারতীয়দের কাছে ইজরায়েলের বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার জেসি বোসের কাজের একটি যুক্তিযুক্ত সম্প্রসারণ বলেই মনে হয়েছে।
আরও পড়ুন- ভারতে ব্যবসা বাড়াচ্ছে অ্যাপল, চালু করল নিজস্ব স্টোর, কী তার বিশেষত্ব?
জগদীশচন্দ্র বোস বর্তমান প্রজন্মের কাছে খুব একটা পরিচিত নাম না-ও হতে পারে। কিন্তু, তিনি ভারতীয় বিজ্ঞানের এক বিশাল ব্যক্তিত্ব। একজন পদার্থবিদ থেকে জীববিজ্ঞানী, সবকিছু। জগদীশচন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৭ সালে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। তিনি পদার্থবিজ্ঞান এবং জীববিজ্ঞান, উভয়ক্ষেত্রেই অগ্রণী অবদান রেখেছিলেন। শ্রীনিবাস রামানুজন, সিভি রমন বা সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অনেক আগেই তিনি আধুনিক বিজ্ঞানের ওপর নিজের অসামান্য অবদানের পরিচয় দিয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে সত্যেন্দ্রনাথ বোস ছিলেন জগদীশচন্দ্র বোসের ছাত্র।
অনেকেই মনে করেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও অনেক আগে জগদীশচন্দ্র বোসের নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন তাঁর দীর্ঘকালের বন্ধু। সেই সুবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে জগদীশচন্দ্র বোসের হামেশাই চিঠিপত্র, লেখালেখি বিনিময় চলত।