Advertisment

প্রধানমন্ত্রীর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ, কেন লালকেল্লা থেকেই দেওয়া হয়?

বর্তমান লালকেল্লায় মুঘলদের পাশাপাশি ব্রিটিশ ছাপ স্পষ্ট বলেই দাবি ইতিহাসবিদদের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Nehru in Red Fort

পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ১৬ আগস্ট, ১৮৪৭ তারিখে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাচীর থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। (এক্সপ্রেসের আর্কাইভ ছবি)

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ১৫ আগস্ট ভোরে দিল্লির লালকেল্লা থেকে তেরঙ্গা উত্তোলন করেছিলেন। দিয়েছিলেন জাতির উদ্দেশে ভাষণ। এই ঐতিহ্যের শুরুটা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর মাধ্যমে। তিনি ১৯৪৭ সালে এই ঐতিহ্যের সূচনা করেছিলেন। যদিও তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন ১৬ আগস্ট, ক্ষমতার আনুষ্ঠানিক হস্তান্তরের একদিন পরে। তাঁর বক্তৃতায় নেহরু নিজেকে স্মরণীয়ভাবে 'ভারতের প্রথম সেবক' বলে উল্লেখ করেছিলেন। তার পর বছরের পর বছর ধরে, লালকেল্লা ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। যা জাতি এবং সরকারের ভাবনার পরিচয় হয়ে উঠেছে।

Advertisment

‘হিন্দুস্তানের রাজধানী’

দিল্লি সাম্রাজ্যের অধীনে (১২০৬-১৫০৬) দিল্লি একটি প্রধান রাজধানী শহর হয়ে ওঠে, যেখান থেকে উত্তর ভারতের একটি বড় অংশের শাসনকার্য চলত। মুঘল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বাবর (১৪৮৩-১৫৩০) ষোড়শ শতকে প্রথমে দিল্লিকে 'সমস্ত হিন্দুস্তানের রাজধানী' হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। আকবরের অধীনে (১৫৪২-১৬০৫) মুঘলরা কিছু সময়ের জন্য তাদের রাজধানী আগ্রায় স্থানান্তরিত করলেও, তাদের দিল্লির শাসক হিসেবেই বরাবর দেখা হয়েছে।

পুরোনো দিল্লি

অবশেষে শাহজাহানের (১৫৯২-১৬৬৬) অধীনে ১৬৪৮ সালে শাহজাহানাবাদ (যা আমরা আজকে পুরোনো দিল্লি নামে জানি) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দিল্লি আবারও মুঘল রাজধানী হয়ে ওঠে। মুঘলরা শাহজাহানাবাদের সুরক্ষিত দুর্গ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত শাসন চালিয়ে গিয়েছিল। এই সুরক্ষিত দুর্গই লালকেল্লা নামে পরিচিত। ঔরঙ্গজেবের পরবর্তীতে মুঘলদের ক্ষমতা হ্রাস পেলেও তারাই ভারতের প্রতীকী শাসক হিসেবে স্বীকৃত পেয়ে গিয়েছে। এর অন্যতম বড় কারণ, দিল্লির সঙ্গে তাদের সংযোগ।

মুঘলদের নামেই শাসন

২০২১ সালে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের জন্য ইতিহাসবিদ স্বপ্না লিডল লিখেছেন, 'শুধু মুঘল অঞ্চলগুলিই পরবর্তী পর্যায়ে কমে আসেনি। মুঘল সম্রাটও ক্রমশই ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছিলেন।' আর, সেই সুযোগে বেশ কিছু নতুন রাজ্য গড়ে উঠেছিল। যার অন্যতম ছিল নবাগত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। তারও কিন্তু, মুঘলদের নামেই শাসন চালিয়ে যেত। শুধু তাই নয়, ১৯ শতক পর্যন্ত মুঘলদের নামেই মুদ্রা জারি হত এদেশে।

লালকেল্লার ওপর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কর্তৃত্বের ছাপ

বিদ্রোহীদের থেকে দিল্লি দখলের পর, ব্রিটিশরা প্রাথমিকভাবে পুরো শহর (শাহজাহানাবাদ) মাটিতে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। তাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল শহর থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের স্মৃতি মুছে ফেলা। তারা সুন্দর মুঘল দালানগুলো যেমন দরিয়াগঞ্জের কাছে আকবরাবাদী মসজিদ বা চাঁদনি চকের কাছে জমজমাট উর্দু বাজার ধ্বংস করেছে।

আরও পড়ুন- আগে চাঁদে পৌঁছবে রাশিয়ার চন্দ্রযান, খেতাব পাওয়ার সুযোগ হারাল ভারত?

লালকেল্লায় ব্রিটিশ ছাপ

যদিও তারা লাল কেল্লাকে সম্পূর্ণরূপে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া থেকে বিরত ছিল। তবে, ব্রিটিশরা লালকেল্লার অভ্যন্তরের মূল্যবান শিল্পকর্ম এবং সাম্রাজ্যের কোষাগার (১৮৫৭ সালেও যা অবশিষ্ট ছিল) তা লুঠ করেছিল। আর, লালকেল্লার অনেক অভ্যন্তরীণ কাঠামো ভেঙে সেখানে ব্রিটিশ কাঠামো তৈরি করেছিল। ইতিহাসবিদদের অনুমান, ব্রিটিশরা লালকেল্লার মূল অভ্যন্তরীণ কাঠামোর প্রায় ৮০ শতাংশ ভেঙে দিয়েছিল। সেখানে ব্রিটিশ ভবন তৈরি করেছিল সৈন্যদের থাকার জন্য এবং তাঁদের প্রয়োজন মেটানোর ব্যবস্থাও সেখানে করা হয়েছিল। প্রাসাদটিকে ব্রিটিশ সৈন্যদের আবাসস্থল আর, বিখ্যাত দেওয়ান-ই-আমকে একটি হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। আজ আমরা যে লালকেল্লা দেখতে পাচ্ছি সেটা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ছাপ মারা। যা আসলে মুঘল সাম্রাজ্যের জাঁকজমকের একটি ধ্বংসাবশেষ হিসেবে বর্তমানে দাঁড়িয়ে আছে।

delhi Prime Minister Independence Day Red Fort
Advertisment