ইন্টারপোল তার রেড কর্নার নোটিসের ডাটাবেস থেকে পলাতক হিরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসির নাম প্রত্যাহার করেছে। কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই), ইন্টারপোলের কাছে ফের রেড কর্নার নোটিস জারির আবেদন করেছে। ভারতের বিরোধী দলগুলোও ইন্টারপোলের এই নোটিস প্রত্যাহারের তীব্র নিন্দা করেছে।
মেহুল চোকসি কোন মামলায় অভিযুক্ত?
মেহুল চোকসি গীতাঞ্জলি গ্রুপের মালিক। ভারতে ৪,০০০ দোকান-সহ একটি জুয়েলারি সংস্থার তিনি কর্তা। তিনি, তাঁর ভাগ্নে নীরব মোদীর সঙ্গে মিলে, পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের (পিএনবি) ১৩,৫০০ কোটি টাকার কেলেঙ্কারিতে ওয়ান্টেড। চোকসি এবং মোদীর বিরুদ্ধে ব্যাংকের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগসাজশ করার অভিযোগ রয়েছে। যার দৌলতে তাদের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর পক্ষে জাল লেটার অফ আন্ডারটেকিং (এলওইউ) এবং ফরেন লেটার অফ ক্রেডিট জারি করা হয়েছিল। অথচ, এই এলওইউ ইস্যু করার আগে পিএনবি কোনও সিকিউরিটিজ জমা রাখেনি।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মামলাটি প্রকাশ্যে আসে। সেই সময় পিএনবি ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে এই জালিয়াতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এক সপ্তাহ পরে ঘটনায় এফআইআর দায়ের করে সিবিআই। ততক্ষণে অবশ্য চোকসি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। ভারতে তার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অপরাধমূলক বিশ্বাস লঙ্ঘন, প্রতারণা এবং আর্থিক অপব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। আর, সেই কারণেই সে ওয়ান্টেড। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
চোকসি ২০১৭ সালে অ্যান্টিগুয়া এবং বারবুডার নাগরিকত্ব পায়। আর, ২০১৮ সাল থেকে সেখানেই বসবাস করছিল। যাইহোক, ২০২১ সালের ২৩ মে সে অ্যান্টিগুয়া এবং বারবুডা থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। আর, শীঘ্রই ডোমিনিকাতে ধরা পড়ে। চোকসির দাবি ছিল, তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। আর ডোমিনিকার পুলিশ তার বিরুদ্ধে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগ এনেছিল। গত বছরের মে মাসে ডমিনিকা পুলিশ অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিস কী?
অপরাধী বা সন্দেহভাজনরা প্রায়ই বিচারের মুখোমুখি হতে অন্য দেশে পালিয়ে যায়। একটি রেড কর্নার নোটিস বা রেড নোটিশ (আরএন) আন্তর্জাতিকভাবে পলাতক ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে পুলিশ বাহিনীকে সতর্ক করে।
ইন্টারপোলের কথায়, 'পলাতকদের জন্য রেড নোটিশ জারি করা হয় বিচারের জন্য বা সাজা দেওয়ার জন্য। একটি রেড নোটিশ হল বিশ্বব্যাপী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে প্রত্যর্পণ, আত্মসমর্পণ বা অনুরূপ আইনি পদক্ষেপের জন্য পলাতক ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা এবং সাময়িকভাবে গ্রেফতার করার একটি অনুরোধ।'
আরএন-এর মধ্যে এমন তথ্য থাকে যা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সনাক্ত করতে সাহায্য করে। যেমন তাদের নাম, জন্ম তারিখ, কোন দেশের বাসিন্দা, শারীরিক বৈশিষ্ট্য, যেমন তাদের চুল ও চোখের রঙ, সেই সঙ্গে ছবি এবং বায়োমেট্রিক ডেটা যেমন আঙ্গুলের ছাপ, যে অপরাধের জন্য তাদের খোঁজা হচ্ছে, তার উল্লেখ ইত্যাদি। একটি আরএন বা রেড নোটিস শুধুমাত্র একজন আন্তর্জাতিক ওয়ান্টেড ব্যক্তিকে খোঁজা বা সনাক্ত করার নোটিস। এটা কোনও আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা নয়।
আরও পড়ুন- চোকসি থেকে জাকির, ভারতের রেড কর্নার নোটিস জারির আবেদন বারবার ফেরাচ্ছে ইন্টারপোল
রেড নোটিস প্রত্যাহারের অর্থ কী?
রেড নোটিস অপসারণের অর্থ হল- চোকসি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হওয়ার ভয় ছাড়াই অবাধে বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করতে পারবেন। অবশ্যই ব্যতিক্রম থাকবে ভারত। কারণ, ভারতে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে। তবে রেড নোটিস প্রত্যাহার, চোকসিকে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের চেষ্টাকে কার্যত দুর্বল করে দিল।