Advertisment

Explained: মোদীর কর্মসূচি 'হর ঘর তিরঙ্গা', কিন্তু আরএসএসের সঙ্গে জাতীয় পতাকার সম্পর্কটা কেমন?

বিজেপি নেতাদের একাংশ সেই নির্দেশ মেনে সোশ্যাল সাইটের ছবি তিরঙ্গা করে দিয়েছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
rss

ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মোদী সরকার 'হর ঘর তিরঙ্গা' কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। আর, তাতেই জাতীয় পতাকার সঙ্গে বিজেপির পরামর্শদাতা সংগঠন আরএসএসের সম্পর্কটা আলোচনার মধ্যে এসে গেছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ৩ আগস্ট প্রশ্ন তুলেছেন, ' কেন গত ৫২ বছর ধরে আরএসএস তার সদর দফতরে তিরঙ্গা উত্তোলন করেনি?' এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি আবার ৪ আগস্ট টুইট করেছেন, 'আরএসএস ভারতের স্বাধীনতা এবং জাতীয় পতাকাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।' ৭৫ বছর আগে যখন জাতীয় পতাকা গণপরিষদে গৃহীত হয়েছিল, তখন ঠিক কী ঘটেছিল?

Advertisment

আরএসএস এবং বিজেপি অবশ্য বলেছে যে, 'স্বাধীনতা দিবস উদযাপন নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। আরএসএসের শরীরের প্রতিটি কণা দেশপ্রেমে ভরপুর।' এনিয়ে সর্বশেষ বিতর্ক কী? কেন আরএসএস নাগপুরে তার সদর দফতরে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেনি? কেনই বা দ্বিতীয় সরসংঘচালক এমএস গোলওয়ালকর তিরঙ্গাকে 'ধারাবাহিকভাবে চলে আসা এক অনুকরণের' ঘটনা বলেছিলেন?

আরএসএস-তিরঙ্গা নিয়ে সর্বশেষ বিতর্কটা কী?

'হর ঘর তিরঙ্গা' কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে বিজেপি সরকারি দফতর এবং দলীয় কর্মীদের বাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে নিজেদের সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্টের ছবিতে জাতীয় পতাকা প্রদর্শনের জন্য বলেছে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি নেতাদের একাংশ সেই নির্দেশ মেনে সোশ্যাল সাইটের ছবি তিরঙ্গা করে দিয়েছেন। কিন্ত, আরএসএস এখনও তা করেনি। আর, এর ফলে বিরোধীরা এই সংগঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ টুইট করেছেন, 'সোশ্যাল সাইটের অ্যাকাউন্টে আমরা আমাদের নেতা নেহরুর হাতে জাতীয় পতাকা রেখে দিচ্ছি। কিন্তু, মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা তাঁর পরিবারের কাছেই পৌঁছয়নি। যারা ৫২ বছর ধরে নাগপুরের সদর দফতরে পতাকা উত্তোলন করেননি, তারা কি প্রধানমন্ত্রীর কথা মানবেন?' এই সব কটাক্ষের জবাবে আরএসএস তার সোশ্যাল সাইটের অ্যাকাউন্টের ছবি পরিবর্তন করবে কি না জানায়নি। তবে, 'হর ঘর তিরঙ্গা' প্রচার নিয়ে রাজনীতিকরণের নিন্দা করেছে।

আরএসএসের প্রচার বিভাগের প্রধান সুনীল আম্বেকর বলেন, 'আজাদি কা অমৃত মহোৎসব একটি জাতীয় উত্সব এবং সমগ্র দেশকে একসঙ্গে এটি উদযাপন করতে হবে। ৯ জুলাই, আরএসএস ভারত সরকার, রাজ্য সরকার এবং অন্যান্য সংস্থার দ্বারা আয়োজিত কর্মসূচিকে সমর্থন করেছে। আরএসএস তার সমস্ত কর্মীদের উত্সাহের সঙ্গে এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আজাদি কা অমৃত মহোৎসব নিয়ে কোনও রাজনীতি করা উচিত নয়। সকলের উচিত রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এই উৎসব উদযাপন করা।'

আরও পড়ুন- বিদ্রোহের সুর বিজেপিতে, ঋণখেলাপি ব্যবসায়ীদের নিয়ে দলকেই কটাক্ষ সাংসদের

গত ৫২ বছরে নাগপুরে আরএসএসের কার্যালয়ে তিরঙ্গা ওঠেনি

আরএসএস তাদের শাখায় গেরুয়া ধ্বজ তোলে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট এবং ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি নাগপুরে আরএসএসের সদর দফতরে জাতীয় পতাকা তোলা হয়েছিল। পাঁচ দশকের ব্যবধান শেষে ফের ২০০২ সালের ২৬ জানুয়ারি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। কিছু আরএসএস কর্তার বক্তব্য ছিল, ২০০২ সালের আগে বেসরকারি সংস্থার দ্বারা জাতীয় পতাকা তোলা নিষিদ্ধ ছিল। সেই কারণে তারা জাতীয় পতাকা তোলেনি।

২০০১ সালের ২৬ জানুয়ারি, রাষ্ট্রপ্রেমী যুবদলের তিন সদস্য নাগপুরের আরএসএস স্মৃতি ভবনে জোর করে তিরঙ্গা উত্তোলন করেছিলেন বলে অভিযোগ। ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট পিটিআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'নাগপুরে আরএসএসের প্রাঙ্গণের ইনচার্জ সুনীল কাথলে প্রথমে তাদের প্রাঙ্গণে প্রবেশ করা থেকে বিরত করার চেষ্টা করেছিলেন। পরে তিরঙ্গা উত্তোলন থেকে তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।' তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল কিন্তু প্রমাণের অভাবে ২০১৩ সালে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বছরের পর বছর তিরঙ্গার সঙ্গে আরএসএসের সম্পর্ক

২০১৮ সালে, আরএসএস প্রধান সরসংঘচালক ডা. মোহন ভাগবত, নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, 'প্রশ্ন উঠেছে, শাখায় গেরুয়াধ্বজ কেন? জাতীয় পতাকা নয় কেন? সংঘ তার জন্ম থেকেই তিরঙ্গার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আসছে।' আবার ২০১৫ সালে চেন্নাইয়ের এক সম্মেলনে আরএসএস বলেছিল যে, 'জাতীয় পতাকার একমাত্র রং হওয়া উচিত ছিল গেরুয়া। কারণ, অন্যান্য রং একটি সম্প্রদায়ের চিন্তার প্রতিনিধিত্ব করে।'

এমএস গোলওয়ালকার তাঁর বই, 'বাঞ্চ অফ থটস'-এ লিখেছেন, 'আমাদের নেতারা আমাদের দেশের জন্য একটি নতুন পতাকা তৈরি করেছেন। কেন তারা এমন করলেন? এটি ধারাবাহিকতা এবং অনুকরণের একটি নমুনা মাত্র। কীভাবে এই পতাকাটি তৈরি হল? ফরাসি বিপ্লবের সময়, ফরাসিরা 'সমতা', 'ভ্রাতৃত্ব' এবং 'স্বাধীনতা'-র ত্রিবিধ ধারণা প্রকাশের জন্য তাঁদের পতাকায় তিনটি স্ট্রাইপ স্থাপন করেছিলেন। অনুরূপ নীতি দ্বারা অনুপ্রাণিত আমেরিকান বিপ্লব কিছু পরিবর্তনের সাথে এটি গ্রহণ করেছিল। তিনটি স্ট্রাইপ তাই আমাদের বিপ্লবীদের জন্যও এক ধরণের আকর্ষণ তৈরি করেছিল। সুতরাং, কংগ্রেস এটি গ্রহণ করেছে।'

Read full story in English

modi Har Ghar Tiranga campaign RSS
Advertisment