লকডাউনের দ্বিতীয় পর্যায় শেষ হয়েছে। ভারত এবার শিথিলতর লকডাউন ৩.০-তে প্রবেশ করল। মুম্বই এবং পুনের মত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাতেও এখন বেশ কিছু ছাড় থাকবে। এ অবস্থায় সংক্রমণ সংখ্যার ব্যাপক বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, এবং গত চারদিন ধরে প্রতিদিন এই সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বাড়ছে।
রবিবারের শেষে দেশে মোট নিশ্চিত সংক্রমণের সংখ্যা ৪২৫০০ ছুঁয়েছে। ২৩ মার্তের মধ্যরাতের লডাউন শুরুর সময়ে ভারতে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৫২৫। মধ্যবর্তী ৬ সপ্তাহে রোগ ছড়ানো প্রতিরোধ করার জন্য তেমন কিছু করাই হয়নি। এই অবস্থায় লকডাউনের অনুপস্থিতিতে সংখ্যাটা কয়েকগুণ বাড়তে পারে।
জানুয়ারির শেষে কেরালায় প্রথম তিনজন সংক্রমিতের কথা যদি ছেড়েও দেওয়া হয়, এবং ২ মার্চে চতুর্থ সংক্রমণ থেকে যদি হিসেব করা হয়, তাহলে করোনা সংক্রমণ ০ থেকে ১০০-তে ছড়াতে সময় লেগেছে ঠিক ১৪ দিন এবং ২০ মার্চ, আবার ওই ১৪ দিনেই ১০০ থেকে সংখ্যাটা ১০০০-এ পৌঁছিয়েছে। আরও ১৫ দিনে সংখ্যাটা পৌঁছিয়েছে ১০ হাজারে। রোগ ছড়ানোর এই হিসেবটা পরিভাষায় যাকে বলে এক্সপোনেনশিয়াল গ্রোথ, তেমন চিত্রই তুলে ধরছিল। এবং এই হারে চললে এপ্রিলের শেষে ওই সংখ্যা ১ লক্ষে পৌঁছবার কথা।
৪ মে ঠিক কোথায় কোথায় মদের দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার?
কিন্তু এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে লকডাউনের প্রভাব দেখা দিতে শুরু করে। বৃদ্ধির লেখচিত্র বদলায় তাৎপর্যপূর্ণ হারে, এবং সংক্রমণ সংখ্যা বাড়লেও এক্সপোনেনশিয়াল গ্রোথ হলে যা হত, তার চেয়ে অনেক কম বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। এপ্রিলের শেষে সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৩৫ হাজারের কম। এঁদের মধ্যে ১০ হাজার সেরে ওটায়, অন্যকে সংক্রমিত করতে সক্ষম এমন রোগির সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি ছিল না।
এবার এমনকি রেড জোনেও নিষেধাজ্ঞা অনেকটা শিথিল হওয়ার ফলে সংখ্যার ব্যাপক বৃদ্ধি অপ্রত্যাশিত নয়। গত চার পাঁচদিন ধরে দৈনিক হিসেবে সংক্রমিতের সংখ্যা ব্যাপক বেড়েছে যদিও এর সংঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউন শেষ হওয়ার কোনও সম্পর্ক ছিল না।
বিধিনিষেধ লাগু হওয়া এবং তার প্রভাব পরিলক্ষিত হওয়ার মধ্যে একটা সময়ান্তর ছিল বলে দেখাই যাচ্ছে। ফলে লকডাউন শিথিল করার ফলে সংখ্যাবৃদ্ধি দেখা দিতে এখন থেকে এক সপ্তাহ বা তার কিছু বেশি সময় লাগবে।
রবিবার ভারতে নতুন করো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২৬৯৩ জন, যা এখনও পর্যন্ত দৈনিক বৃদ্ধিতে সর্বাধিক। নতুন কিছু প্রবণতাও সামনে আসছে। শনিবার দিল্লিতে নতুন সংক্রমণ ঘটে ৩৮৪ জনের, রবিবার আরও ৪২৭ জনের। এর কারণ কী তা বোঝা যাচ্ছে না। এই সপ্তাহান্তের আগে দিল্লিতে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যাবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ১০০ থেকে ১৫০ জনের, যদিও মাঝে কয়েকদিন এই সংখ্যা ২০০-র বেশি ছিল।
লকডাউনের আঁধারে বাংলার বই প্রকাশনার দুনিয়া
পাঞ্জাবেও সংক্রমণ সংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটতে শুরু করেছে। মহারাষ্ট্রের নান্দেড থেকে ফেরা তীর্থযাত্রীরা এর একটা বড় ক্লাস্টার। এ রাজ্যে আগে যেখানে ১০ থেকে ২০টি দৈনিক সংক্রমণ দেখা যাচ্ছিল, এখন সেখানে প্রতিদিন শয়ে শয়ে সংক্রমণ ঘটনা দেখা যাচ্ছে।
রবিবার ৩৩১ জনের নতুন সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে তাদের মধ্যে ২৭০ জন নান্দেড তীর্থযাত্রী। রাজ্যে সংক্রমণ সংখ্যা এখন ১১০২, এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ নান্দেড ফেরত তীর্থযাত্রী। গত পাঁচদিনে রাজ্যে সংক্রমণ সংখ্যা বেড়েছে তিগুণ এবং এই প্রথমবার সংক্রমণের দিক থেকে শীর্ষ ১০ রাজ্যের মধ্যে উঠে এসেছে পাঞ্জাব।
তামিলনাড়ুতে গত কয়েকদিনের মধ্যে সংক্রমণ হার দ্রুতগতিতে বাড়ছে এবং তা এখন সংক্রমণ সংখ্যায় মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। রবিবার এ রাজ্যে নতুন সংক্রমণণের সংখ্যা ২৬৬, মোট সংখ্যা ৩০০০ ছাড়িয়েছে, যা মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও দিল্লির পরেই।
রবিবার মৃত্যুর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম ছিল। শনিবার ৯৩ জনের মৃত্যুর পর, রবিবার সে সংখ্যা ৬৬তে কমেছে। এর আগে গত সপ্তাহে পর পর চারদিন মৃত্যু সংখ্যা ছিল ৭০-এরও বেশি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন