Advertisment

রিলায়েন্স-ফেসবুক চুক্তি, কোন সংস্থা কী পাবে?

এই চুক্তির ফলে রিলায়েন্স সংস্থা ফেসবুককে তাদের একগুচ্ছ ডিজিটাল অ্যাপের অ্যাকসেসও দেবে। এর মধ্যে জিও মানি, জিও টিভি ইত্যাদি যেমন রয়েছে, থাকবে রিলায়েন্স ও তার অন্যান্য সংস্থাগুলির অধিগৃহীত স্টার্টআপও।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Reliance Fb Deal

ফাইল ছবি

বিশ্বের বৃহত্তম ইন্টারনেট সংস্থা ফেসবুক ভারতের বৃহত্তম টেলিকম সংস্থা রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ১০ শতাংশ শেয়ার কিনেছে। ৫.৭ বিলিয়ন ডলারের এখ চুক্তির ফলে রিলায়েন্সের বাজার হবে ৬৬ বিলিয়ন ডলারের।

Advertisment

ভারতের টেলিকম ক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য ফেসবুকের অপেক্ষা যেমন এর মাধ্যমে শেষ হল তেমনই তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগও হল এর ফলে।

রিলায়েন্সের কাছে এই চুক্তির অর্থ কী?

২০১৯ সালে সংস্থার বার্ষিক সাধারণ সভায় রিলায়েন্স গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি বলেছিলেন ১৮ মাসের মধ্যে সংস্থার নেট ঋণ যাতে শূন্য হয়, তার রোডম্যাপ তৈরি হচ্ছে।

ভারতে সরাসরি বিদেশি লগ্নি নীতিতে বদল কেন, তাতে চিনই বা অসন্তুষ্ট কেন?

ফেসবুকের সঙ্গে চুক্তি সে পথে সাহায্য করবে যার মাধ্যমে ২০১৯ সালের সেপ্টম্বেরের বকেয়া ২.৯২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের ৪৩,৫৭৫ কোটি টাকা মেটানো যাবে। এই ঋণ কমানো প্রকল্পে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হতে পারে সৌদি আরামকো, যারা রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে ১.০৫ লক্ষ কোটি টাকা চুক্তি করতে পারে এবং ব্রিটিশ সংস্থা বিপির কাছ থেকে আসতে পারে আরও ৭০০০ কোটি টাকা।

তবে কোভিড ১৯-এর জন্য আরামকোর সঙ্গে চুক্তি প্রশ্নের মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ছাড়াও ফেসবুকের সঙ্গে টুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল অত্যাবশ্যকীয় পণ্য অনলাইনে বিক্রির চাহিদা তুঙ্গে।

কোভিড ১৯ সংকটের মধ্যে আমেরিকায় অভিবাসন মুলতুবি রাখার সিদ্ধান্তের কারণ কী?

কোভিড প্রকোপের আগে ভারতের ৮০০০০ কোটি টাকার মুদির বাজারের এক শতাংশ মাত্র ছিল অনলাইনের দখলে। লকডাউনের পর অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এই বিক্রির পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশে পৌঁছিয়েছে।

অনলাইন মুদি সংস্থা বাগবাস্কেটের সিইও হরি মেনন বলেছেন, আমরা সেই হাতে গোনা সংস্থার মধ্যে পড়ি যাদের যথেষ্ট বাজার রয়েছে, কিন্তু যথেষ্ট সম্পদ নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন রিলায়েন্স রিটেল, জিও প্ল্যাটফর্ম এবং ফেসবুক অধিগৃহীত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রাহকদের নিকটতম মুদির দোকানে পৌঁছে দেবে যারা পণ্য ও পরিষেবা বাড়ি অবধি পৌঁছে দেবে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে জিওমার্টে লেনদেনের মাধ্যমে।

ভারতে হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪০০ মিলিয়ন।

ফেসবুকের কাছে এই চুক্তির অর্থ কী?

ফেসবুক বহুদিন ধরেই নানা ভাবে লাভের গুড় খাবার প্রচে্ষ্টায় রয়েছে। ২০১৫ সালে তারা ফ্রি বেসিকস নিয়ে নিরীক্ষা চালিয়েছিল, যে প্রকল্পে সার্ভিস প্রোভাইডরদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারা ফ্রি ইন্টারনেট দেবে। কিন্তু সে প্রকল্প বহুবিধ সমালোচনার মুখে পড়ে প্রত্যাহৃত হয়। এমনকি আকিলা নামের সৌরশক্তি চালিত ড্রোনের মাধ্যমে কম খরচে উচ্চ শক্তি সম্পন্ন ওয়াই ফাই ভারতের বিভি্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেবার কথাও উঠেছিল। তার নাম দেওয়া হয়েছিল এক্সপ্রেস ওয়াইফাই। কিন্তু তখন ডেটা ছিল দুর্মূল্য এবং ফ্রি ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়াই সহজতর বলে মনে করা হয়েছিল। এরপর রিলায়েন্স জিও চলে এল। ভারতের নতুন পরিষেবা প্রদানকারী এত কম দামে ডেটা দিতে শুরু করল যে তারা সারা পৃথিবীর অনলাইন বাজারে অন্যতম হয়ে উঠল।

জিওর দৌলতে ৩৮৮ মিলিয়ন ইউজার এখন অনলাইনে, যার এক তৃতীয়াংশের ভাগ পেতে চায় ফেসবুক। সে কারণেই জিও পৃথিবীর বৃহত্তম সোশাল নেটওয়ার্কের আগ্রহের কারণ হয়ে উঠেছে।

এ ছাড়াও রিলায়েন্সের সঙ্গে তাদের এই চুক্তি ভারতের নিয়ামক নীতিকেও খতিয়ে দেখতে সুবিধে দেবে, কারণ এর আগে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের বিতণ্ডাও হয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপ পে-র মত উদ্যোগ এখনও বারতে অনুমতি পায়নি।

ভারতের ইন্টারনেট দুনিয়ায় এর কী প্রভাব পড়তে পারে?

এই চুক্তির জেরে ফেসবুক ভারতের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সফটব্যাঙ্ক, আমাজন ও গুগলের মত এলিট বিনিয়োগকারীরদের সমগোত্রীয় হবে, যে সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই ভারতীয় স্টার্টআপে বহু বিলিয়ন ডলার লগ্নি করে রেখেছে। জিওর আগে ফেসবুক ২০১৯ সালে সোশাল কমার্স প্ল্যাটফর্ম মিশোতে ২০-২৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিল এবং এ বছরের গোড়ায় এডু-টেক সংস্থার ১১০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্পেও অংশ নিয়েছিল।

এই চুক্তির ফলে রিলায়েন্স সংস্থা ফেসবুককে তাদের একগুচ্ছ ডিজিটাল অ্যাপের অ্যাকসেসও দেবে। এর মধ্যে জিও মানি, জিও টিভি ইত্যাদি যেমন রয়েছে, থাকবে রিলায়েন্স ও তার অন্যান্য সংস্থাগুলির অধিগৃহীত স্টার্টআপও।

রিলায়েন্স নীতি

গত বছর জানুয়ারিতে ভাইব্র্যান্ট গুজরাট সম্মেলনে আম্বানি জোর দিয়ে বলেছিলেন ভারতের ডেটা ভারতের মানুষের হাতে থাকা উচিত, তাঁদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত।

ডেটা প্রাইভেসি বিষয়ে ফেসবুকের ট্র্যাক রেকর্ড নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। বুধবার উভয় সংস্থাই জানিয়ে দিয়েছে ডেটা শেয়ারিং এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত নয়।

জিওর এক আধিকারিক জানিয়েছেন আমরা একসঙ্গে চলব কিন্তু কিছু জায়গা থাকতেই পারে, যেখানে আমরা সহমত নই। ফেসবুক অবশ্য ডেটা নিয়ে তাদের নিজস্ব অবস্থানে অনড় রয়েছে।

jio Facebook Reliance
Advertisment