ব্রিটিশরা বাংলা ভাগ করল ১৯০৫ সালে। ভারত যখন স্বাধীনতা লাভ করে, তখন সেই বিভক্ত বাংলার একাংশ যায় পাকিস্তানে, পূর্ব ভাগ পরিচিত হয় পূর্ব পাকিস্তান নামে, পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশ হিসেবে গণ্য হয়। পূর্ব পাকিস্তানের স্থায়িত্ব বেশিদিন ছিল না। ১৯৭১ সালে তারা পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলের দাবি দীর্ঘ দিন ধরেই উঠছে, কখনও তা রাজনৈতিক কারণে, কখনও প্রশাসনিক কারণে। প্রথম এ দাবি ওঠে ১৯৯৯ সালে, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর উদ্যোগে। সে সময়ে 'বাংলা' ও 'পশ্চিম বাংলা' এই নাম দুটি বিবেচনা করা হয়েছিল, কিন্তু দলগুলি ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি।
আরও পড়ুন, কেন তৃণমূলের পিছু ছাড়বে না সারদা
আরও নামের প্রস্তাব
নাম বদলের দাবির পিছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইংরেজি বর্ণমালার প্রথম অক্ষর। রাজ্যের নাম ওয়েস্ট বেঙ্গল হলে প্রথম অক্ষর 'ডবলিউ'। ইংরেজি বর্ণমালার শেষ দিক থেকে চতুর্থ অক্ষর। সেক্ষেত্রে রাজ্যওয়ারি নাম ডাকার সময়ে পশ্চিমবঙ্গের নাম আসে ৩০ নম্বরে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য যেখানে সমস্ত রাজ্যের উপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের পালা আসতে আসতে "হয় হল অর্ধেক খালি হয়ে যায়, নচেৎ শ্রোতারা দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েন"। নাম বদলে 'বাংলা' করলে এর ফলে রাজ্যের নাম আসবে চার নম্বরে। এই বাংলা নামেই মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিকতম আগ্রহ।
২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মুখ্যমন্ত্রী হন, সে সময় থেকে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো একাধিকবার এ দাবি তুলেছেন। তাঁর প্রথম দাবি ছিল ইংরেজিতেও রাজ্যের নাম 'পশ্চিম বঙ্গ' বা 'পশ্চিম বাংলা' রাখার। এ প্রস্তাব কেন্দ্র মানে নি। রাজ্যের নাম ডাকার ক্ষেত্রে অবশ্য আদ্যাক্ষর 'পি' হলে, তেমন কিছু সুবিধা হত না।
আরও পড়ুন, বন্দে মাতরম ও জনগণমন নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশ
পাঁচ বছর পর, আবার একটি প্রস্তাব বিধানসভায় পাশ হয়। এবার দাবি তোলা হয়, রাজ্যের নাম ইংরেজিতে 'বেঙ্গল', বাংলায় 'বাংলা' ও হিন্দিতে 'বঙ্গাল' রাখার। এ দাবির বিরুদ্ধে বিজেপি "বাংলা বাঁচাও স্বাক্ষর অভিযান" শুরু করে। এ প্রস্তাব কেন্দ্র ফেরত পাঠিয়ে বলে একটি নির্দিষ্ট নামই ঠিক করতে হবে।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে বিধানসভায় সর্বসম্মতভাবে রাজ্যের নাম 'বাংলা' রাখার সিদ্ধান্ত পাশ হয়। কিন্তু সে দাবিতেও কেন্দ্র কর্ণপাত করেনি। এর পর গত সপ্তাহে তৃণমূলের ১২ জনের প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে রাজ্যের দাবি পূরণের অনুরোধ জানান।
রাজ্যের নাম বদলের পদ্ধতি
রাজ্যের নাম বদল করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অনুমোদন প্রয়োজন। নাম বদল করতে গেলে লাগবে সাংবিধানিক সংশোধনী।
রাজ্য সরকার প্রথমে প্রস্তাব পাঠানোর পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক দায়িত্বভার গ্রহণ করে এবং সে ব্যাপারে তাদের সম্মতির আগে নো অবজেকশন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়। সে সার্টিফিকেট দেয় রেলমন্ত্রক, আইবি, ডাকবিভাগ, সার্ভে অফ ইন্ডিয়া এবং ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল। প্রস্তাব অনুমোদিত হলে সংসদে তা বিল হিসাবে পাঠানো হয় এবং তা আইনে পরিণত হয় ও রাজ্যের নামের আনুষ্ঠানিক বদল ঘটে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে রাজ্যের প্রস্তাব কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রক নাকচ করে দেয়। তাদের বক্তব্য ছিল 'বাংলা' ও 'বাংলাদেশ' এই দুটি নাম খুব কাছাকাছি।
আরও পড়ুন, কেন মমতা তড়িঘড়ি নিগৃহীত অধ্যাপককে ফোন করতে গেলেন
এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই রাজ্যসভায় বলেন, "কোনও রাজ্যের নাম বদলাতে গেলে সাংবিধানিক সংশোধনী প্রয়োজন। সংবিধান সংশোধনীর কোনও প্রস্তাব এখনও পর্যন্ত নেই।"
কেন্দ্র এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার কয়েক ঘণ্টা পর মমতা মোদীকে লেখেন, "একটি রাজ্যের নামের মাধ্যমে সে রাজ্যের বাসিন্দাদের মধ্যে পরিচয়ের জোরালো ভাবনা বহন করা উচিত এবং সে পরিচয় তৈরি হতে পারে যদি রাজ্যের নাম তার ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে বহন করে।"
স্বাধীন ভারতে প্রথম নাম পরিবর্তন হয়েছিল ১৯৫০ সালে। পূর্ব পাঞ্জাব হয়েছিল পাঞ্জাব। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাংলা নাম হতে সম্ভবত অনেক পথ পেরোতে হবে।
Read the full story in English