মাস্ক, জীবাণুনাশক, স্ক্যান- সারা পৃথিবীতে মাস্ক প্রায় সব রেস্তোরাঁর জন্য বাধ্যতমূলক হয়ে গিয়েছে
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রক এরটি সাধারণ পরিচালনা প্রণালী প্রকাশ করেছে। যেসব মল, হোটেল ৮ জুন নতুন করে খুলছে, তাদের সেই দিন থেকে এই প্রণালী মেনে চলতে হবে। রেস্তোরাঁগুলির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে, যার মধ্যে কর্মী ও খদ্দেরদের (খাওয়ার সময়টুকু বাদে) মাস্ক পরা, স্যানিটাইজারের ব্যবহার, ধারণক্ষমতা হ্রাসের মত বিষয় সারা বিশ্বেই পালিত হবে।
Advertisment
কে কী করছে
মাস্ক, জীবাণুনাশক, স্ক্যান- সারা পৃথিবীতে মাস্ক প্রায় সব রেস্তোরাঁর জন্য বাধ্যতমূলক হয়ে গিয়েছে। অনেকেই প্রবেশ পথ ও টেবিলে হ্যান্ড স্যানিটাইজিং ও থারমাল চেক আপের ব্যবস্থা করেছেন, কেউ কেউ তাঁদের কর্মীদের প্রতিদিনের তাপমাত্রা প্রকাশ করছেন। চিনে মার্চ মাসে রেস্তোরাঁ ফের খুলে দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে সাংহাইয়ের একটি রেস্তোরাঁ প্রবেশপথে সারা শরীরের জীবাণুনাশের কথা বলেছিল।
শারীরিক দূরত্ব- রেস্তোরাঁগুলি তাদের অন্দর নতুন করে সাজিয়ে ধরাণক্ষমতা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কমিয়েছে। ভারতে সরকার ৫০ শতাংশ হ্রাসের সীমা নির্ধারণ করেছে। রেস্তোরাঁগুলিতে টেবিলের সংখ্যা কমানো হচ্ছে, সেগুলিকে আরও দূরে দূরে রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে। চিনের অনেক ছোট খাবারের দোকান টেবিলে কার্ডবোর্ডের পার্টিশন তৈরি করেছে, বড় রেস্তোরাঁগুলি কাচের পার্টিশন দিয়েছে, আমস্টার্ডামের একটি রেস্তোরাঁ কাচের বুথ বা কিউবিকলের ব্যবস্থা করেছে।
ম্যানিকিন, পুতুল- ভার্জিনিয়ার একটি রেস্তোরাঁয় কিছু টেবিলে ম্যানিকিন বসানো হয়েছে, যা কেবল গ্রাহকদের একে অপরের থেকে দূরত্বই বজায় রাখবে না, একইসঙ্গে রেস্তোরাঁ ভরভরন্ত রয়েছে এমন একটা বিভ্রমও তৈরি করবে। আরও বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ ম্যানিকিন, ব্লো আপ ডল ব্যবহার করছে। ব্যাঙ্ককের একটি রেস্তোরাঁয় স্টাফড পান্ডা ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফোটো আবার ভাইরালও হয়েছে।
রোবোকর্মী- মানবকর্মীর সংখ্যা কমাতে হল্যান্ডের একটি ম্যাকডোনাল্ড আউটলেটে খাবার পরিবেশনের জন্য স্বয়ংক্রিয় হুইল কার্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংস্থার তরফ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এই পদ্ধতি যদি সাফল্যের মুখ দেখে, তাহলে দেশের ১৮০টি বৃহত্তম আউটলেটে এই প্রক্রিয়া কার্যকর করা হবে। ২০১৬ সালে চিনে প্রথমবার রাঁধুনি ও ওয়েটার হিসেবে রোবোকর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল, কিন্তু মানুষের মত দক্ষ না হওয়ার ফলে তাদের প্রায় সকলের চাকরি যায়। এখন আবার কিছু রেস্তোরাঁ এই পদ্ধতির কথা ভাবছে। যেমন নেদারল্যান্ডেরই আরেকটি রেস্তোরাঁয় খদ্দেরদের সম্ভাষণ ও পরিবেশনের জন্য রোবট নিয়োগ করেছে।
সারফেসের সঙ্গে ন্যূনতম সংস্পর্শ- আসবাব ও কাচের সামগ্রী নিয়মিত স্যানিটাইজ করা ছাড়াও (যা ভারতের সাধারণ পরিচালনা প্রণালীর মধ্যে রয়েছে), সারা পৃথিবীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় এ ধরনের জিনিস কমানো হচ্ছে। ভারত সরকার ডিজপোজেবল মেনু কার্ড ব্যবহারের সুপারিশ করেছে, পৃথিবীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় ফিজিক্যাল মেনু কার্ড ব্যাপারটা তুলে দিয়ে স্ক্যানেবল কোডের ব্যবস্থা করেছে, যার মাধ্যমে খদ্দেররে ফোনেই মেনু দেখা যাবে।
বুফে বাদ- জাপানের জাতীয় সংবাদমাধ্যম NHK মে মাসে কাওয়াসাকির মারিয়ানা ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি গবেষণা করে। কত দ্রুত বুফে থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, সে নিয়ে পরীক্ষার জন্য তারা একজনের হাতে কাশির ড্রপলেটের ওপর ফ্লুরোসেন্ট রং দিয়ে দেয়। খাওয়াপর্ব শেষে দেখা যায়, ওই রং সকলের হাতেই ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক রেস্তোরাঁই বুফে ব্রাঞ্চ সহ অন্যান্য বুফে ধরনের ব্যবস্থা তুলে দিচ্ছে। ভারতে সরকার বুফের সময়ে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
ভারতের রেস্তোরাঁ
ভারতের বহু রেস্তোরাঁ পদক্ষেপ গ্রহণের কাজ শুরু করেছে। এ দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমভাগে ম্যাকডোনাল্ডস চালায় ওয়েসটলাইফ ডেভেলপমেন্ট। তারা ৪২ পয়েন্টের চেকলিস্ট দিয়েছে, য়ার মধ্যে নিয়মিত জীবাণুনাশ, থার্মাল স্ক্রিনিং, দূরত্বের জন্য মার্ক করা, সংস্পর্শ হীন অর্ডার, পিকআপ ও টেকআউটের মত বিষয় রয়েছে।
কিছু রেস্তোরাঁ তাদের রান্নাঘরের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে খদ্দেরদের নিশ্চিতি দেওয়ার জন্য রান্নাঘরের লাইভ স্ট্রিমিং শুরু করেছে।
ভারতের পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের সেন্টার ফর কন্ট্রোল অফ ক্রনিক কন্ডিশনসের ডিরেক্টর অধ্যাপক ডি প্রভাকরণ বলেছেন, চারটি পদক্ষেপ রেস্তোরাঁগুলিকে গ্রহণ করতেই হবে।
"প্রথম হল সামাজিক দূরত্ব, যা টেবিলের মধ্য দূরত্ব বাড়িয়ে বা খদ্দেরের সংখ্যা কমিয়ে নিশ্চিত করা যায়। দ্বিতীয় হল মাস্কের ব্যবহার, তৃতীয় হল স্ক্রিনিং, যদিও বহু সংখ্যত উপসর্গবিহীন রোগী রয়েছেন, তবে উপসর্গযুক্তদের মাধ্যমে সংক্রমণ বেশি ছড়াচ্ছে। এবং সর্বোপরি কর্মী ও খদ্দেরদের নিয়মিত হাত ধোওয়া, সাবান ও জল দিয়ে হলে সবচেয়ে ভাল।"