Advertisment

বিশ্লেষণ: সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ পিটিশন; কে-কখন-কীভাবে

২০১৪ সালের একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল মৃত্যুদণ্ডের সমস্ত মামলার রিভিউ পিটিশনের শুনানি হবে প্রকাশ্য আদালতে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Supreme Court, Review Petition

সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত মানেই তা আইন। সংবিধান এমনটাই বলেছে

সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তের ফলে রিভিউ পিটিশনের বিষয়টি গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে। বাবরি মসজিদ ও রাম জন্মভূমি মামলা এবং টেলিকম রাজস্ব মামলার রায়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে রিভিউ পিটিশনের পরিকল্পনা রছেন আবেদনকারীরা। এদিকে সুপ্রিম কোর্ট এ মাসেই শবরীমালা রায়ের রিভিউ পিটিশন নিয়ে শুনানিতে সম্মত হলেও রাফাল মামলার ক্ষেত্রে রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দিয়েছে।

Advertisment

রিভিউ পিটিশন কী এবং তা কখন ফাইল করা যায়?

সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত মানেই তা আইন। সংবিধান এমনটাই বলেছে। যেহেতু তা ভবিষ্যত মামলার সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে একধরনের নিশ্চয়তাপ্রদান করে, সে কারণে এ রায় চূড়ান্ত। তবে সংবিধানের ১৩৭ নং অনুচ্ছেদেই বলা রয়েছে যে সুপ্রিম কোর্টের হাতে নিজেদের রায় বা নির্দেশ রিভিউ করবার ক্ষমতা রয়েছে। যখন কোনও রিভিউ হয়, তখন ওই মামলায় বড়সড় গলদ এবং তার জেরে ন্যায়বিচারে গলতি শোধরানোর সুযোগ তৈরি হয়।

আদালত বড়সড় ভুল সংশোধন করতে পারে রিভিউয়ের মাধ্যমে। ১৯৭৫ সালের এক রায়ে বিচারপতি কৃষ্ণ আইয়ার এ বিষয়টি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলেন।



সুপ্রিম কোর্ট রিভিউয়ের আবেদন গ্রাহ্য করছে এমনটা বিরল। এ মাসে শবরীমালা মামলার রিভিউয়ের ব্যাপারে রায়ের ক্ষেত্রে বিচারপতিরা দ্বিধাবিভ্ত ছিলেন। তিনজন বিচারপতি রিভিউয়ের পক্ষে মত দেন, দুজন বিপক্ষে।  সুপ্রিম কোর্ট ২০১৮ সালে রাফাল মামলার তদন্ত হবে না বলে নির্দেশ দিয়েছিল, তার রিভিউ হবে না বলে ১৪ নভেম্বর জানিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। আবার গত বছরই সুপ্রিম কোর্ট তফশিলি জাতি ও উপজাতি আইন নিয়ে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে দেওয়ার রায়ের রিভিউয়ের আবেদনে সম্মতি দেয়।

কিসের ভিত্তিতে আবেদনকারী সুপ্রিম কোর্টের রায়ের রিভিউ চাইতে পারেন?

২০১৩ সালের এক রুলিংয়ে সুপ্রিম কোর্ট রিভিউয়ের জন্য তিনটি বিষয়কে জরুরি বলে জানিয়ে দিয়েছিল। ১) যথেষ্ট অধ্যবসায়ের ফলে নতুন কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও প্রমাণ যদি উঠে আসে যা আবেদনকারীর গোচরে ছিল না অথবা তাঁর পক্ষে তা জানানো সম্ভব হয়নি, ২) রেকর্ডে কোনও ভুল বা গলতি থাকলে, ৩) অথবা অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ কারণ। পরবর্তী রুলিংয়েই বলে দেওয়া হয় যে আদালতের কাছে অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ কারণ মানে অন্য দুটি কারণের অনুরূপ কোনও কারণ।

রিভিউ পিটিশন কে দাখিল করতে পারেন?

এরকম নয় যে কোনও রায়ের পর সে রায়ের সঙ্গে যুক্ত কোনও পক্ষই আবেদন করতে পারেন। সিভিল প্রসিডিওর কোড এবং সুপ্রিম কোর্টের বিধি অনুসারে যে কোনও ক্ষুব্ধ ব্যক্তিই রিভিউ চাইতে পারেন। তবে সব রিভিউ আবেদনে সাড়া দেয় না আদালত। রিভিউ পিটিশনের ভিত্তি বিবেচনা করে তা গ্রাহ্য করা হয়।

কিসের ভিত্তিতে আদালত রিভিউ পিটিশন গ্রাহ্য করে?

১৯৯৬ সালের সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম অনুসারে কোনও রায় বা নির্দেশের ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ পিটিশন দাখিল করতে হয়। আদালত যদি মনে করে রিভিউ পিটিশন দেরিতে ফাইল করবার কোনও যথাযথ কারণ রয়েছে, সেক্ষেত্রে ওই সময়সীমায় ছাড় দিতে পারে তারা।

আইনে বলা রয়েছে, সাধারণভাবে রিভিউ পিটিশন নিয়ে আইনজীবীদের মৌখিক সওয়াল শোনা হবে না। বিচারপতিরা নিজেদের চেম্বারে সার্কুলেশনের মাধ্যমে সওয়াল শুনবেন। যে বিচারপতির রায় দিয়েছিলেন, তাঁরাই যাতে রিভিউয়ের আবেদনের শুনানিতে বিচারপতির কাজ করেন তেমনটাই নিয়ম। যদি কোনও বিচারপতি অবসরগ্রহণ করেন বা তাঁকে না-পাওয়া যায়, তাহলে বিচারপতিদের সিনিয়রিটির বিষয়টি মাথায় রেখে বদলি বিচারপতি নিয়োগ করা হয়।

ব্যাতিক্রমী ক্ষেত্রে আদালতে মৌখিক সওয়ালে সম্মতি দিতে পারে। ২০১৪ সালের একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল মৃত্যুদণ্ডের সমস্ত মামলার রিভিউ পিটিশনের শুনানি হবে প্রকাশ্য আদালতে।

অযোধ্যা রায়ের রিভিউ চাওয়া হচ্ছে কিসের ভিত্তিতে?

এখনও পর্যন্ত কেবল অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড জানিয়েছে যে তারা রিভিউয়ের আবেদন করবে। এ ব্যাপারে উত্তর প্রদেশ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড ও অন্য আবেদনকারীদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। কিসের ভিত্তিতে রিভিউ চাওয়া হবে, তা এখনও জানানো হলেও, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বিনিময়ে উত্তর প্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ একর জমি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আবেদনকারীরা চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।

রিভিউ পিটিশন যদি ব্যর্থ হয়?

অন্তিম সম্বল হওয়ার কারণেই সুপ্রিম কোর্টের রায় ন্যায়বিচারে পরিপন্থী হতে পারে না। ২০০২ সালে রূপা হুরা বনাম অশোক হুরা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট স্বয়ং কিউরেটিভ পিটিশনের ধারণা নিয়ে আসে। রিভিউ পিটিশনে যদি ন্যায়বিচার হচ্ছে না বলে মনে হয়, তাহলে কিউরেটিভ পিটিশনের আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে। রিভিউ পিটিশনের মতই কিউরেটিভ পিটিশন খুব স্বল্প কারণেই গ্রাহ্য হয। এ ক্ষেত্রেও সাধারণভাবে মৌখিক সওয়ালজবাবের অনুমতি দেওয়া হয় না।

supreme court Rafale Ayodhya
Advertisment