যেন, ব্যবসার জগতে এক নক্ষত্রের খসে পড়া। একটা সময় জাহাজ তৈরির কথা বললে এদেশে প্রথমেই উঠে আসত গুজরাটের এবিজি শিপইয়ার্ডের নাম। ১৬,৬০০ কোটি টাকার অর্ডার সাপ্লাই করেছে এই সংস্থা। আর, এখন! সেই সংস্থাই প্রতারণার অভিযোগে কাঠগড়ায়। তার বিরুদ্ধে ২৮টি ব্যাংককে প্রতারণার অভিযোগে।
স্টেট ব্যাংকের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করছে সিবিআই। শুধু এই সংস্থাই না। এর ডিরেক্টরদের, এমনকী এবিজি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধেও চলছে তদন্ত। সব মিলিয়ে ২২,৮৪২ কোটি টাকা আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ। যাকে বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতারণা বলা হচ্ছে। কিংফিশার থেকে সারদার মতো সংস্থাগুলো যার প্রতারণার কাছে স্রেফ নস্যি!
একদশক আগেই কিন্তু, ছবিটা ছিল একদম উলটো। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে এবিজির নেট প্রফিট ছিল ১০৭ কোটি টাকা। সেটাই যেন গ্রাফিক্স চিত্রের শেষ শীর্ষবিন্দু। কারণ, তারপর থেকে শুরু এবিজির পতনের। ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে ১৯৯ কোটি টাকা ক্ষতির মুখ দেখে এবিজি।
২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে সেই ক্ষতি বেড়ে হয় ৮৯৭ কোটি টাকা। ২০১৬-য় সংস্থার নেট ক্ষতি অনেকটাই বেড়ে হয় ৩,৭০৪ কোটি টাকা। ক্ষতি সামলাতে গিয়ে সংস্থার আয়ও একধাক্কায় অনেকটাই কমে যায়। ৪০১ কোটি টাকা থেকে কমে হয় ৩৭ কোটি টাকা।
এবিজির বার্ষিক রিপোর্ট বলছে, সেই সময় সংস্থার জাহাজ এবং ভেসেলের অর্ডার বাতিল হয়। ব্যাংকের কাছে ঋণ বাড়ে। ঋণের সুদ দিতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। সুরাটে এর দহেজ জাহাজ কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। একইসঙ্গে জাহাজ তৈরির জন্য দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের ভর্তুকির মেয়াদও ফুরিয়ে যায়।
আরও পড়ুন- জওহরলালকে নেহেরুকে আদর্শ নেতার আসনে বসাল সিঙ্গাপুর
২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে, সংস্থার বার্ষিক রিপোর্ট বলছে, এই সময় একের পর এক আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়ে এবিজি। কিছু অর্থ লগ্নিকারী সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেন। রাজস্ব দফতরের গোয়েন্দা বিভাগ এবিজির কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায়। সব মিলিয়ে যেন এক পতনের সূচনা। যে পতন এক দশক পর ২০২২-এ এসে এই সংস্থাকে দেখতে হচ্ছে। দেশের বৃহত্তম আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে এবিজি শিপইয়ার্ডকে।
Read story in English