Advertisment

Explained: ভারতীয় বংশোদ্ভূত মন্ত্রীর চাকরি খেলেন ঋষি সুনাক, কিন্তু কেন?

সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান পেশায় আইনজীবী।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Suella Braverman

ব্রিটেনের সদ্যপ্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর, লন্ডনে তাঁর বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন। (REUTERS/Tby Melville)

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক সোমবার (১৩ নভেম্বর) তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যানকে বরখাস্ত করেছেন। লন্ডনে প্যালেস্তাইনপন্থী মিছিলে পুলিশের ধরপাকড়ের সমালোচনা করার মাত্র কয়েকদিন পর তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা থেকে। এর আগে লন্ডন পুলিশের সমালোচনা করায় ব্র্যাভারম্যানকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছিলেন বিরোধী জনপ্রতিনিধিরা। ব্র্যাভারম্যান ব্রিটিশ রাজনীতিতে কট্টরপন্থী রক্ষণশীল নেতা, ভারতীয় বংশোদ্ভূত মন্ত্রিসভার সদস্য, অভিবাসী, বিক্ষোভকারী, পুলিশ এবং গৃহহীনদের ব্যাপারে নানারকম মন্তব্যের জন্য হামেশাই সংবাদ শিরোনামে থাকেন। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় ব্র্যাভারম্যান এর আগে বলেছিলেন, 'স্বরাষ্ট্রসচিব হিসেবে কাজ করা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য। সময় আসুক, আমিও কিছু বলব।'

Advertisment

ব্রেভারম্যান কী বলেছেন?

একটি প্রতিবেদনের পরে নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হয়। সেখানে ব্র্যাভারম্যান লিখেছেন, 'পুলিশকে অবশ্যই প্রতিবাদীদের সঙ্গে সমান আচরণ করতে হবে।' তাঁর এই প্রতিবেদন ৮ নভেম্বর টাইমস-এ প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর লেখায়, সদ্যপ্রাক্তন মন্ত্রী পুলিশের বিরুদ্ধে 'দ্বৈত ভূমিকা' গ্রহণ করার অভিযোগ করেছেন। ১১ নভেম্বর হওয়া প্যালেস্তাইনপন্থী বিক্ষোভের সমালোচনা করে ব্র্যাভারম্যান লিখেছেন, 'আগ্রাসনে জড়িত ডানপন্থী এবং জাতীয়তাবাদী প্রতিবাদকারীরা পুলিশের কঠোর প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হন। কিন্তু, প্রায় একইরকম আচরণ দেখানো প্যালেস্তাইনপন্থী জনতাকে উপেক্ষা করা হয়। এমনকী যখন স্পষ্টভাবে আইন ভঙ্গ, তখনও! আমি চাকরিরত এবং প্রাক্তন পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদেরও পুলিশের এই দ্বৈত ভূমিকা নজরে পড়েছে।'

ব্রেভারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ

সদ্যপ্রাক্তন মন্ত্রী তাঁর লেখায় আরও অভিযোগ করেছেন, বিক্ষোভের আয়োজকদের সঙ্গে হামাস-সহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর সম্পর্ক আছে। এই বিক্ষোভকারীরা ঘৃণার পক্ষে মিছিল করেছেন। বিক্ষোভের দিনে, ডানপন্থী পালটা বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্যালেস্তাইনপন্থী মিছিলে প্রায় তিন লক্ষ সমর্থক অংশ নিয়েছিলেন। পুলিশ তাঁদের থেকে ইজরায়েলপন্থী বিক্ষোভকারীদের দূরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের দাবি, এই ঘটনায় ১৪০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিরোধী লেবার পার্টি অভিযোগ করেছে যে ব্রেভারম্যানের মন্তব্যের কারণেই উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল। কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরাও ব্রেভারম্যানের সমালোচনা করেছিলেন। আর, ব্রেভারম্যানকে বরখাস্ত করার ব্যাপারে ঋষি সুনাক দেরি করায় তা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। এই ব্যাপারে একজন কনজারভেটিভ জনপ্রতিনিধি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, 'এটি প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্বকে আরও ক্ষুণ্ন করবে।'

কে এই ব্রেভারম্যান?

তিনি ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির একজন নেতা। পেশায় আইনজীবী, ২০১৫ সালে ফেয়ারহ্যাম থেকে ব্রিটেনের পার্লামেন্টে নির্বাচিত হন। ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। আর, ব্রেক্সিট দফতরে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। সেটা প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে থাকাকালীন। কিন্তু, মে-এর প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তির প্রতিবাদে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। সেই সময় ব্রেভারম্যান বলেছিলেন যে তাঁর পদত্যাগের কারণ, ব্রিটেন ব্রেক্সিট থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে যথেষ্ট এগোয়নি। ২০২২ সালে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কিন্তু, দ্বিতীয় রাউন্ডেই হেরে যান। তারপরে তাঁকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের অধীনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু, তখনও তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। যার কারণে তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়। ব্রেভারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ইমেল অ্যাকাউন্ট থেকে একটি অফিসিয়াল নথি পাঠিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন- হাসপাতালেও সুরক্ষা নেই! গাজায় চিকিৎসা কেন্দ্রই যুদ্ধভূমি

ব্রেভারম্যানের মা-বাবা

ব্রেভারম্যানের বাবা-মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তাঁরা ১৯৬০-এর দশকে ব্রিটেনে চলে আসেন। তাঁর মা মরিশাস থেকে এবং তাঁর বাবা ছিলেন কেনিয়ার বাসিন্দা। যদিও তাঁর মা ছিলেন হিন্দু তামিল বংশোদ্ভূত। আর, তাঁর বাবা গোয়ান বংশজাত। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে, ব্র্যাভারম্যান ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতাকে রক্ষা করেছেন এবং অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি অভিবাসীদের রুয়ান্ডায় নির্বাসন সমর্থন করেছেন। তাঁর পদত্যাগ পত্রে, ট্রাস সরকারের বিরুদ্ধে ব্রেভারম্যান সমালোচনায় লিখেছিলেন, 'আমরা কেবলমাত্র আমাদের ভোটারদের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মূল প্রতিশ্রুতিগুলোই ভঙ্গ করিনি। সামগ্রিকভাবে অভিবাসন হ্রাস করার যে কথা ইশতেহারে আছে, সেই সব প্রতিশ্রুতি পালন নিয়েও আমার গুরুতর সংশয় আছে। অভিবাসীদের সংখ্যা কমানো, অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করা, বিশেষ করে বিপজ্জনক ছোট নৌকোয় চেপে ব্রিটেনে প্রবেশ, এগুলো বন্ধ করা উচিত।'

Rishi Sunak party UK Prime Minister Britain Conservative Party
Advertisment