Role of Army in India's Freedom Struggle: ১৯৪৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক টাইমস (New York Times)-এ প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে, '১৯২১ সাল থেকে ভারতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ক্রমাগত চলেছে। কিন্তু, তারপর সেই হিন্দু ও মুসলিমরাই মিলিতভাবে বোম্বে, কলকাতা ও দিল্লিতে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেমেছে। এক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে জাপান সমর্থিত সুভাষচন্দ্র বোস প্রতিষ্ঠিত আজাদ হিন্দ ফৌজ (INA)।' ব্রিটিশ সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিক কর্নেল হিউ টয় বন্দি আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈনিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, 'এবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে আইএনএ (INA) এর প্রভাবেই ১৯৪৬ সালের গোড়ার দিকে নৌ বাহিনীতে বিদ্রোহ হয়েছিল। পাশাপাশি, স্থলবাহিনী এবং বিমান বাহিনীতেও ভয়ানক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।'
সংবাদমাধ্যমে যা প্রকাশিত হয়েছিল
টাইমস অফ ইন্ডিয়া (Times of India) এই প্রসঙ্গে ১৯৪৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি লিখেছিল, 'আজাদ হিন্দ ফৌজ ও তার জওয়ানদের লাল কেল্লার বিচার নিয়ে অতিরিক্ত প্রচার ও খ্যাতির কারণেই সেনা বিদ্রোহ হয়েছে। বোম্বে, কলকাতা এবং দিল্লিতে ব্যাপক জনরোষ তৈরি হয়েছে, যার চরিত্র অহিংস ছিল না।' আবার, ভারতের প্রাক্তন গভর্নর বড়লাট লর্ড ওয়াভেল সেক্রেটারি অফ স্টেটস কে বলেছিলেন, 'ভারতীয় সৈন্যদের দ্বারা তাঁদেরই দেশবাসীকে দমন করা একটি মূর্খতার পরিচয় হবে। কারণ যত দিন যাচ্ছে, ততই যেন ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং পুলিশের আনুগত্য সমস্যা হয়ে উঠছে।'
ফিল্ড মার্শাল ক্লড অকিনলেক (Commander in chief, India,1943-47) বলেছিলেন, 'যুদ্ধের আগে সেনাবাহিনীতে ভারতীয় অফিসারের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৯৬ জন। যুদ্ধের জন্য সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬,৭০৪ জনে। সৈন্য সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকটাই। অফিসার এবং সৈন্য মিলিয়ে সংখ্যাটা ২২ লক্ষ ৫০ হাজার। তাছাড়া বিমান বাহিনীতে আছেন ৫,২০০ জন এবং নৌ বাহিনীতে ৩৩ হাজারেরও বেশি সৈন্য। গোপন সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, এই সৈন্যদের প্রতি ৮০ জনের মধ্যে ৭৬ জনই আজাদহিন্দ বাহিনীর জওয়ানদের বিচারের বিরোধী। আরও জানা গিয়েছে যে, সেনা অফিসারদের মধ্যে প্রায় সবাই নাকি স্বাধীনতার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। একইভাবে প্রতি ৮০ জন সেনার মধ্যে ৭৫ জন জওয়ানই স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করেছেন।'
আরও পড়ুন- ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মানবাধিকারের বুলি আউড়ালেন ইউনুস, ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে দিলেন না আশ্বাস
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি (১৯৪৫-৫১) বলেছিলেন, 'আমরা আগ্নেয়গিরির ওপর বসে আছি। ( We were sitting on the top of the volcano!)' বিলেতের পত্রিকা লন্ডন অবজারভর (London Observer) লিখেছিল, 'ভারতবর্ষ আজ বিপুল পরিমাণ বারুদের ওপর বসে আছে। তা যে কোনও মুহূর্তে ফেটে যেতে পারে। এমন বিস্ফোরণ ১৮৫৭ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পরে আর হয়নি।' স্বয়ং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি ভারতে এসে বলেছিলেন, 'ভারত ছাড়ার পিছনে অনেক কারণ ছিল। তবে, প্রধানত নেতাজির সামরিক অভিযান আর তাতে প্রভাবিত হয়ে ভারতীয় সেনা এবং নৌবাহিনীর ব্রিটিশ বিরোধিতাই আমাদের ভারত ছাড়ার প্রকৃত কারণ।'