মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) তাঁর বার্ষিক বিজয়াদশমীর ভাষণে আরএসএসের সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত শ্রোতাদেরকে সংবিধানের গণপরিষদে বিআর আম্বেদকরের শেষ দুটি বক্তৃতা পড়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। যেভাবে তাঁরা আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা কেবি হেডগেওয়ার সম্পর্কে পড়েছেন, সেই মনোযোগ নিয়েই। আরএসএস প্রধানের আম্বেদকরের প্রশংসার মধ্যে অবশ্য নতুন কিছু নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোয়, বিশেষ করে ২০১৪ সালে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সংঘ আম্বেদকরের উত্তরাধিকারী হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু, অনেকেই তাতে প্রশ্ন তুলেছেন আম্বেদকর তো হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। সেই ব্যাপারটা সংঘ কীভাবে দেখবে?
আম্বেদকরকে নিয়ে আরএসএসের সমালোচনা
আম্বেদকর যখন ভারতীয় সংবিধান চূড়ান্ত করছিলেন এবং হিন্দু ব্যক্তিগত আইনের সংস্কারের পরামর্শ দিচ্ছিলেন, তখন সংঘ এবং তার ইংরেজি ভাষার জার্নাল অর্গানাইজার তাকে এবং তাঁর কাজকে আক্রমণ করেছিল। ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ তাঁর নিবন্ধ 'কোন আম্বেদকর?'-এ ২০১৬ সালে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে এই ব্যাপারে লিখেছিলেন। গুহ স্মরণ করিয়ে দেন যে ১৯৪৯ সালের ৩০ নভেম্বর, অর্গানাইজার সংবিধানের ওপর একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছিল। তখন, সংবিধানের চূড়ান্ত খসড়াটি আম্বেদকর সবেমাত্র গণপরিষদে উপস্থাপন করেছেন।
ভারতজুড়ে বিক্ষোভ
সেই সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, 'ভারতের নতুন সংবিধান সম্পর্কে সবচেয়ে খারাপ (জিনিস), এটি সম্পর্কে ভারতীয় বলতে কিছুই নেই। এখানে প্রাচীন ভারতীয় সাংবিধানিক আইন, প্রতিষ্ঠান, নামকরণ এবং শব্দগুচ্ছের কোনও চিহ্ন নেই।' সঙ্ঘ হিন্দু বিধি বিল পাসেরও বিরোধিতা করেছিল। কারণ, সেই বিল হিন্দু মহিলাদেরকে তাঁদের বর্ণের বাইরে বিয়ে করার, তাঁদের স্বামীকে তালাক দেওয়ার এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকার পাওয়ার অধিকার দিতে চেয়েছিল। ১৯৪৯ সালে, আরএসএস বিলটি বন্ধ করার জন্য ভারতজুড়ে শত শত সভা এবং বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল। সেই সব সভায় সাধু-সন্ন্যাসীদের বক্তব্য রাখতে আহ্বান জানানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন- দশেরায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, জাতপাত, আঞ্চলিকতার মূলোৎপাটনের আহ্বান মোদীর
হিন্দুদের একতা রক্ষায় আরএসএসকে বাধা
আরএসএস সর্বদা 'হিন্দু ঐক্য' রক্ষার কথা বলেছে। ১৯২৫ সালে গঠনের পর থেকেই তারা একথা বলে আসছে। তবে, বিরোধীরা বারবার আরএসএসকে, উচ্চবর্ণের হিন্দু বা ব্রাহ্মণদের সংগঠন বলে দাগিয়ে দিয়েছে। যার ফলে, আরএসএসের 'হিন্দুদেরকে একত্রিত করার' চেষ্টা ধাক্কা খেয়েছে। তার মধ্যে একটি ছিল, আম্বেদকরের নেতৃত্বে দলিতদের বড় আকারে ধর্মান্তর। ১৯৫৬ সালের বিজয়াদশমীতে, যেদিন আরএসএস সরসঙ্ঘচালক নাগপুরের রেশমবাগে স্বয়ংসেবকদের কাছে বার্ষিক ভাষণ দিচ্ছেন, সেদিন আম্বেদকর প্রায় পাঁচ লক্ষ অনুগামীকে নিয়ে নাগপুরের অন্য অংশে দীক্ষাভূমিতে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন।