মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) নাগপুরে বিজয়দশমীর ভাষণে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত, 'সাংস্কৃতিক মার্কসবাদী বা জাগ্রত' মানুষকে দেশের 'প্রতারক এবং ধ্বংসাত্মক শক্তি' হিসেবে অভিহিত করেছেন। ভারত যে অগ্রগতি করেছে ভাগবত তার সঙ্গে এই মার্কসবাদীদের বৈপরীত্য বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
ভাগবতের বক্তব্য
তিনি বলেছেন, 'যদিও এই শক্তিগুলো কোনও না-কোনও আদর্শের মুখোশ পরে এবং কিছু উচ্চ লক্ষ্যে কাজ করছে বলে দাবি করে, কিন্তু তাদের আসল উদ্দেশ্য অন্য কিছু। এই ধ্বংসাত্মক, সর্বগ্রাসী শক্তি নিজেদেরকে সাংস্কৃতিক মার্কসবাদী বা জাগ্রত বলে দাবি করে। কিন্তু, তারা ১৯২০ সাল থেকে মার্কসকে ভুলে গেছে। তাদের পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে মিডিয়া এবং একাডেমিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া, শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং সামাজিক পরিবেশকে বিভ্রান্তি, বিশৃঙ্খলা এবং দুর্নীতিতে নিমজ্জিত করা। 'woke' শব্দের উৎপত্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। যা, সাম্প্রতিক কালে সাংস্কৃতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
'woke' শব্দটি কোথা থেকে এসেছে?
'woke' শব্দের যাত্রা দীর্ঘ। যার অর্থ ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক সক্রিয়তার পক্ষে দাঁড়ানো। যদিও সেই শব্দের উদ্দেশ্য নিয়ে ইতিমধ্যেই কিছুটা সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক মহলে। প্রাথমিকভাবে, এটি কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যবহৃত হত। যা তাঁদের 'জাগ্রত' হওয়ার আহ্বান। Merriam-Webster অভিধান অনুযায়ী, “Woke হল এমন একটি শব্দ যা আফ্রিকান-আমেরিকান ভার্নাকুলার ইংলিশ (কখনও কখনও AAVE বলা হয়) নামে একটি উপভাষার কিছু বৈচিত্র্য থেকে মূলধারায় প্রবেশ করছে। যেমন, 'আমি ঘুমাচ্ছিলাম, কিন্তু এখন আমি জেগে আছি।' বিষয়টা এরকম বোঝায়।
কৃষ্ণাঙ্গ আন্দোলন
এটা হিংসার হুমকির মুখে সচেতন বা সজাগ থাকার প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয়। আইন এখনও কালো মানুষের মৌলিক অধিকারকে জীবনের অনেক ক্ষেত্রে অস্বীকার করে। তাদের অবাধ চলাচল থেকে শুরু করে ভোটদান পর্যন্ত, এই অস্বীকার বিভিন্ন পর্যায়ে চলে। সাংবাদিক আজা রোমানো, ভক্সের জন্য লিখেছেন যে, ১৯২৩ সালে জ্যামাইকান সামাজিক কর্মী মার্কাস গারভির আহ্বান ছিল, 'ইথিওপিয়া জাগো! জাগো আফ্রিকা!' বিশ্বব্যাপী কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের আরও সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতন হওয়ার আহ্বান হিসেবে তিনি এই ডাক দিয়েছিলেন। স্বীকৃতির জন্য সংগঠিত লড়াই দৃঢ় হওয়ায় এই আহ্বানের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে।
মার্টিন লুথার কিং-এর আহ্বান
১৯৬৫ সালে, নাগরিক অধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ওবারলিন কলেজে 'রেমেইনিং অ্যাওয়েক থ্রু এ গ্রেট রেভলিউশন' নামে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। যেখানে তিনি বলেছিলেন, 'একটি বিপ্লবের মধ্যে ঘুমোনোর চেয়ে দুঃখজনক কিছু নেই। পরিবর্তনের হাওয়া বইছে, এবং আমরা আমাদের দিনে এবং আমাদের যুগে একটি উল্লেখযোগ্য বিকাশ দেখতে পাচ্ছি। আজ স্নাতক হওয়া প্রতিটি ব্যক্তির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হল এই সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে জাগ্রত থাকা।'