রাশিয়া কি ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে? রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রকাশ করা ভিডিওয় সেনা প্রত্যাহারের ছবিটা দেখা গেলেও, অনেকে তা মানতে নারাজ। হোয়াইট হাউসের এক সিনিয়র আধিকারিকদের বক্তব্য হল, পুরো ভুল ভিডিও এটা। রাশিয়া এর উল্টো পথে হাঁটছে। আরও ৭ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে ইউক্রেন সীমান্তে। এদিকে সীমান্তে কিন্তু গোলাবারুদ চালু হয়ে গিয়েছে। রাশিয়া-সমর্থিত বিদ্রোহীদের সঙ্গে ইউক্রেনের সেনার শেল বিনিময় চলছে।
স্বাভাবিক ভাবেই কিয়েভ রাশিয়ার দিকে আঙুল তুলেছে এ নিয়ে। বলছে, বিদ্রোহীদের উসকানি দেওয়া বন্ধ করা হোক। বলছে, সরিয়ে নাও সেনা। ইউক্রেনের উপর হামলা করার পরিকল্পনা রয়েছে মস্কোর, আমেরিকার মতো অনেকের এই অভিযোগ। যা খণ্ডন করে যাচ্ছে রাশিয়া। ওই ছবি তুলে ধরে, রাশিয়া বলছে, দেখছেনই তো সেনা প্রত্যাহার চলছে, তা হলে কী করে হামলার অভিপ্রায়ের অভিযোগ ধোপে টেকে! এক লক্ষ সেনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া।
কেন রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহারের এই ছবি দেখানো?
ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন করে আন্তর্জাতিক পরিসরে রাশিয়া চাপে রয়েছে। সেই চাপের জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে বলা যেতে পারে। অনেকেরই মত, এবার দ্বিমুখী নীতি নিয়েছে রাশিয়া। একদিকে ছবি দেখিয়ে দাবি করছে সেনা সরানো হচ্ছে। অন্য দিকে, আমেরিকার দাবি যদি সত্যি হয়, সেনা বাড়াচ্ছে তারা ইউক্রেন সীমান্তে। সেনা বাড়িয়ে ইউক্রেনের উপর চাপ বাড়ানো, এবং সেনা সরানোর ছবি দেখিয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে হাতের বাইরে না যেতে দেওয়া। এই দ্বিধর্মিতা, এক ধরনের রণনীতি বৈকি! তবে অনেকেরই মত, সেনা যদি বাড়িয়ে চলে রাশিয়া, তা হলেও ওই সেনা সরানোর ছবি দেখানো থেকে স্পষ্ট যে, রুশ তরফে ইউক্রেনে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা কম।
আরও পড়ুন ইউক্রেন ছাড়তে কেন বলা হয়েছে ভারতীয়দের, কতটা ঘোরাল পরিস্থিতি, জানেন কী?
আবার বিশেষজ্ঞদের অন্য অংশ বলছেন, যদি রাশিয়া পশ্চিম ও দক্ষিণ মিলিটারি জেলাগুলি থেকে সেনা প্রত্যাহার করেও নেয়, তা হলেও তাদের মোতায়েন করা যথেষ্ট সেনা থাকবে, যার মাধ্যমে হেসেখেলে রাশিয়া হামলা চালাতে পারবে ইউক্রেনে। বিশেষ করে উত্তর দিকে, যে দিকটায় ইউক্রেনের খারকিভ শহর। এই অঞ্চলে রাশিয়া যে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করে রেখেছে, তার মধ্যে রয়েছে বিমান বাহিনী এবং আরআরএসএফ (rapid response special forces)। রুশ নৌবাহিনীর ভাল সংখ্যক সেনা মোতায়েন রয়েছে কৃষ্ণ সাগরে এবং আজভ সাগরে। এর মধ্যে রয়েছে ২ হাজার সেনা, ২০০টি ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া গাড়ি, এ সব রয়েছে বিশাল ছ'টি ল্যান্ডিং ক্রাফটের উপর। শুধুমাত্র নির্দেশের অপেক্ষায়, আক্রমণ বললেই ছিঁড়েখুঁড়ে দেবে ইউক্রেনকে।
আরও পড়ুন Explained: নিষেধের নয়া কোপে চিনা অ্যাপ, কেন এমন সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের?
কী বলছে ইউক্রেন?
ইউক্রেন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছে। বিদেশমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা বলছেন, যখন আমরা নিজেদের চোখে দেখব সেনা সরছে, তখন আমরা বিশ্বাস করব। একটি টুইটে তাঁর বক্তব্য়, 'রাশিয়া বলেছে তারা সেনা প্রত্যাহার করছে। ইউক্রেনের মানুষজনের একটা নীতি রয়েছে, আমরা শোনা কথায় নয়, নিজেদের চোখে দেখে তার পর বিশ্বাস করি। বিবৃতি তো দিয়েছে রাশিয়া, এবার সেই অনুযায়ী চললেই প্রকৃত সেনা প্রত্যাহার শুরু হবে।'
আরও পড়ুন Explained: দেশের বৃহত্তম আর্থিক প্রতারণায় অভিযুক্ত, গুজরাটের জাহাজ কোম্পানির উত্থান ও পতন