Advertisment

Explained: ইউরোপকে গ্যাস রফতানিতে বড় কোপ, ইইউ-র ললাটে চরম চাপ, কী করবে তারা?

জীবাশ্ম জ্বালানি বা ফসিল ফুয়েল বিরুদ্ধে দেশগুলি পদক্ষেপ করলেও, জার্মানি আইন পাশ করে কয়লা-বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি অস্থায়ী ভাবে চালু করেছে, যদিও তাদের লক্ষ্য ২০৩০-এর মধ্যে কয়লা থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে যাওয়ার।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
putin

গত সপ্তাহে পাঁচটি ইউরোপীয় দেশে গ্য়াস রফতানিতে কাটছাঁট করেছে রাশিয়া। এর মধ্যে রয়েছে জার্মানিও। যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম অর্থনীতি। নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপ লাইন চলে যাচ্ছে বাল্টিক সাগরের ভিতর দিয়ে, রাশিয়া থেকে জার্মানিতে। এই লাইনটি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা গাজপ্রোমের। যে লাইনের মাধ্যমে গ্যাস রফতানি কমানো হয়েছে ৬০ শতাংশ।

Advertisment

পোল্যাল্ড, বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, এবং নেদারল্যাল্ডসের রুশ গ্যাস আমদানি হ্রাস পেয়েছে সম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে। তবে, তা নিয়ে কথা হয়নি বিশেষ। কারণ রাশিয়ার জ্বালানি নেওয়া ধাপে ধাপে বন্ধ করার পরিকল্পনা করে ফেলেছে অনেকেই। এবং নেমে পড়েছে সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পথে। এখানে পোল্যান্ডের কথা ধরা যেতে পারে। তারা ঠিক করেছে বছর-শেষের মধ্যে রাশিয়ার থেকে গ্যাস নেওয়া বন্ধ করে দেবে পুরোপুরি।

এখন এই যে জ্বালানি ছেদনের নয়া তলোয়ারটি চালিয়েছে রাশিয়া, তাতে বড় অর্থনীতিগুলি চাপের মুখে। যেমন রাশিয়ার থেকে জার্মানির আমদানি-কৃত গ্যাসের পরিমাণ মোট গ্যাস-আমদানির ৩৫ শতাংশ। ইতালির ক্ষেত্রে যা ৪০ শতাংশ। ফলে এরা গভীর চিন্তায় পড়ে গিয়েছে।

এত চিন্তা কেন?

রাশিয়ার এই পদক্ষেপ আতঙ্কের শিহরণ ধরিয়েছে ইউরোপের মেরুদণ্ডে। কারণ, যদি পুরো গ্যাস রফতানি বন্ধ করে দেয় পুতিনের দেশ, তা হলে কী হবে ভেবে থরহরিকম্প পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এই সব দেশের। প্রাকৃতিক গ্যাস নানা শিল্পে দরকার হয়, যেমন কাচ-নির্মাণ, ইস্পাত-নির্মাণ ইত্যাদি। তারা এখনই গ্যাস-সঙ্কটে ভুগছে, এ বার এবং এর পর কী হবে, কে জানে! শীতকালে বিদ্যুতের বেশি দরকার হয়। শীতের কনকনানি রুখতে রুম হিটার চালানো হয় ঘরে ঘরে, তখন সঙ্কটের সাত কাহন তৈরি হবে বলেই করছেন অনেকে। তা হলে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে মৃত্যু লেখা রয়েছে কি ইউরোপের বহু মানুষের ললাটে? হয়তো এতটা হবে না, তবুও আতঙ্ক চেপে বসেছে।

বর্তমানে ইউরোপের ভূতলস্থিত গ্যাস স্টোরেজ-ব্যবস্থার ৫৭ শতাংশ ভর্তি রয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের সাম্প্রতিক প্রস্তাব হল, প্রতিটি দেশকে পয়লা নভেম্বরের মধ্যে এই মজুত নিয়ে যেতে হবে ৮০ শতাংশে। জার্মানি এ ব্যাপারে লক্ষ্য স্থির করেছে যে, পয়লা অক্টোবরের মধ্যে ৮০ শতাংশ এবং পয়লা নভেম্বরের মধ্যে ৯০ শতাংশ তারা পূর্ণ করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়ার পক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। রাশিয়ারও হাল হবে তথৈবচ।

এই অবস্থায় কী করণীয়?
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরুর আগে মোট গ্যাস আমদানির ৪০ শতাংশ আনত রাশিয়া থেকে। এ বছরের শেষে তাদের লক্ষ্য হল এই আমদানি দুয়ের-তিন ভাগ কমিয়ে ফেলা। আর পুরোপুরি গ্যাসে রাশিয়া-মুক্তির সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে ২০২৭ সালকে। আসছে অগস্টের শুরু থেকে আর রাশিয়ার কয়লা তারা নেবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে ইইউ। তেল? আগামী ছ'মাসে রাশিয়ার তেল বেশির ভাগটাই তারা ছেঁটে দিতে পারবে, এমনও জানানো হয়েছে।

রাশিয়া তেল-গ্যাস বিক্রি করে প্রতি দিন ৮৫০ মিলিয়ন কামায়, এখন এই অর্থ যদি হ্রাস পেয়ে যায়, তা হলে যুদ্ধে তাদের আর্থিক রক্তক্ষরণ হবে, এবং সেটাই লক্ষ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন এলএনজি (liquefied natural gas) আনছে আমেরিকা থেকে, জাহাজে করে। স্বাভাবিক ভাবেই এর জন্য দাম অনেক বেশি দিতে হচ্ছে। যার ফলে জ্বালানির দাম বাড়ছে। এবং সেই দামের ঢেউয়ে ইউরোপে মুদ্রাস্ফীতি চড়চড়িয়ে বাড়ছে। রেকর্ডও করেছে। ফলে, নরওয়ে এবং আজারবাইজান থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আনার দিকে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন- বজ্রপাত কীভাবে আঘাত হানে, কীভাবে সেই সময় বাঁচতে হয়

কিন্তু জার্মানির কোনও এলএনজি রফতানির টার্মিনাল নেই, তারা চারটি টার্মিনাল অবশ্য তৈরি করছে এ জন্য। দুটি এ বছরই আলো দেখবে। পাশাপাশি, জীবাশ্ম জ্বালানি বা ফসিল ফুয়েলের বিরুদ্ধে দেশগুলি পদক্ষেপ করলেও, জার্মানি আইন পাশ করে কয়লা-বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি অস্থায়ী ভাবে চালু করেছে, যদিও তাদের লক্ষ্য ২০৩০-এর মধ্যে কয়লা থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে যাওয়া।

তা হলে কি ইউরোপের দেশগুলি শীতে সত্যিই জমে যাবে?
এটা না হওয়ারই সম্ভাবনা। কারণ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন শিল্পে রেশন করে গ্যাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে স্কুল, হাসপাতাল এবং গৃহস্থ বাড়িগুলি রক্ষা পায়। তা ছাড়া, যে সব দেশ গ্যাসাভাবে ভুগবে, তাদের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেবে তুলনায় ভাল অবস্থায় থাকা দেশগুলি, এমনও আশা। যদিও এটা নির্ভর করছে দু'দেশের মধ্যে পাইপলাইনের যথেষ্ট সংযোগ রয়েছে কি না, তার উপর, ফলে এই কাজটা কিন্তু শক্ত হবে বেশ। আবার রেশনিংয়ের মাধ্যমে শিল্পে জ্বালানি দেওয়ার ফলে অনেক কলকারখানার গণেশ উল্টোবে, এবং তাতে বেকারত্ব বাড়বে। ফলে অনেকেই মনে করছেন, জ্বালানি না কিনে রাশিয়াকে চাপে রাখার সিদ্ধান্ত অনেকটা নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গের চেষ্টার সামিল। অন্য পথ ধরলে ভাল হত।

Read full story in English

russia Europe Fuel Price
Advertisment