ইউক্রেন যুদ্ধের প্রধান কারণ কী? এই প্রশ্ন উঠলে গোটা বিশ্ব এককথায় বলবে, কারণটা আর কিছু না। ইউক্রেন ন্যাটোয় যুক্ত হতে চাইছিল। সেটা ঠেকাতেই ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। কিন্তু, কী এই ন্যাটো? যাতে ইউক্রেনের যুক্ত হওয়া নিয়ে রাশিয়ার এত আপত্তি? এতটাই সেই আপত্তি যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বৃহত্তম যুদ্ধের সাক্ষী করলেন ইউরোপকে?
ন্যাটো একটা জোট। যার পুরো নাম নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন। ১৯৪৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশ মিলে এই জোট তৈরি করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। সেটাই ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সামরিক জোট। বর্তমানে ৩০টি দেশ এই ন্যাটোর সদস্য। বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দফতর। এই জোটের সামরিক দফতরের কেন্দ্রও বেলজিয়ামের মনস এলাকায়। এই জোট গঠনের কারণ, এর কোনও সদস্য আক্রান্ত হলে, বাকিরা সেই হামলাকে তাদের সকলের ওপর হামলা বলে মনে করবে। আর, যৌথ সামরিক চেষ্টার মাধ্যমে হামলা প্রতিরোধ করবে। ন্যাটোর সংবিধানের ৫ নম্বর ধারায় একথা বলা আছে।
আর, সেই কারণেই বরাবর দেখা গিয়েছে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, তাতে যোগ দিয়েছে ন্যাটোও। তা সে ইরাক যুদ্ধই হোক বা আফগানিস্তান। আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষমতা দেখানোর লড়াই চলছে আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যে। ১৯৫৫ সালে, সেভাবেই ন্যাটোকে রুখতে সোভিয়েত রাশিয়াও পোল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া, আলবানিয়া, বুলগেরিয়া, পূর্ব জার্মানি, হাঙ্গেরি এবং রোমানিয়ার সঙ্গে জোট করে। এর নাম ছিল 'ওয়ারশ চুক্তি'। কিন্তু, সেই চুক্তির অবসান হয় ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের সঙ্গেই। আর, ১৯৯১ সালে যা কার্যত বাতিল হয়ে যায়। কারণ, সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙে যায়। চেকোস্লোভাকিয়া এবং পূর্ব জার্মানির অস্তিত্বের বিলুপ্তি ঘটে। বাকি পাঁচটি দেশ পোল্যান্ড, আলবানিয়া, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি এবং রোমানিয়া পরিস্থিতি দেখে ন্যাটোয় যোগ দেয়।
আরও পড়ুন- সকাল ৭টায় সন্তান প্রসব, ১২টায় মাধ্যমিক দিলেন তরুণী
পুতিন জমানায় রাশিয়া ফের নিজের অস্তিত্বের মূল্যায়ন শুরু করে। সেই মূল্যায়নের কারণে, বাল্টিক উপসাগর সংলগ্ন তিনটি দেশ বর্তমানে ন্যাটোভুক্ত। এই তিন দেশের আবার রাশিয়ার প্রতিবেশী। বাকি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বেলারুশ এবং ইউক্রেনই কেবলমাত্র ন্যাটোভুক্ত না। তারমধ্যে ইউক্রেন আবার ন্যাটোয় যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করায় রাশিয়া উপলব্ধি করে যে তার অস্তিত্ব সংকটে। এই পরিস্থিতিতে ক্রেমলিন চাইছে মার্কিন প্রভাবিত ন্যাটোর রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাফার স্টেট তৈরির মাধ্যমে রাশিয়ার সীমান্তের দূরত্ব বজায় রাখতে। কারণ, ন্যাটো মানেই, তার সদস্য দেশে উপস্থিত থাকবে মার্কিন সেনা।
Read story in English