গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকেই বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র চাপানউতোর। সেই সংঘাতে বর্তমানে রাশিয়া ভালো অবস্থানে আছে বলেই মস্কোর দাবি। তারই মধ্যে প্রেসিডেন্ট পুতিন ওয়াগনার বিদ্রোহও দমন করেছেন। যদিও পশ্চিমী গণমাধ্যম, পুতিনের এই সব বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। পালটা রাশিয়ার বক্তব্য, এসব ভালো অবস্থানে থাকা, জয়ের গল্প স্রেফ পুতিনের কল্পনা।
যুদ্ধের বাস্তব পরিস্থিতি
বাস্তব হল, বহুল প্রচারিত রুশ-ইউক্রেনীয় আক্রমণ, পালটা-আক্রমণের মধ্যেই ইউক্রেনের যুদ্ধ একটি অস্বস্তিকর এবং ব্যয়বহুল অচলাবস্থায় পৌঁছেছে। কোনও সেনাবাহিনীই পরস্পরের বিরুদ্ধে একচুলও এগোতে পারছে না। এটা এমন যুদ্ধে পরিণত হয়েছে, যেখানে ধৈর্য্যই মুখ্য ব্যাপার হয়ে উঠেছে। যদিও রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে হতাহতের সংখ্যা ইউক্রেনকেও ছাপিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে, একটি অনেক বড় দেশ হিসেবে রাশিয়া তাদের ক্ষয়ক্ষতি সহজে পূরণ করতে পারছে। যুদ্ধের উপাদানের খরচের ক্ষেত্রেও বিষয়টি স্পষ্টভাবে ধরা পড়ছে। পুতিন রাশিয়ার তৈল উত্তোলনের ওপর বসানো কর কমিয়ে দিয়েছেন। যার ফলে, বিশ্ববাজারে রাশিয়ার তেল কম দামে বিক্রি হচ্ছে। আর, তার জেরে রাশিয়ার অর্থনৈতিক দুর্গের বিশেষ ক্ষতি হয়নি। উলটো দিকে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেন তার জিডিপির ৩৫ শতাংশ হারিয়েছে। তারপরও কিন্তু, যুদ্ধ যতই দীর্ঘ হবে, উভয়পক্ষের জন্য এটি ততই বেশি ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।
থেকেও, পাশে নেই আমেরিকা
এর মধ্যেই, ইউক্রেনের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা বারবার ধাক্কা খাচ্ছে। কারণ, ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমী দেশগুলোর যে আবেগ আগে ছিল, সেটা সময়ের সঙ্গে কমছে। সাম্প্রতিকতম রয়টার্স/ইপসোস সমীক্ষায় জানা গেছে যে মাত্র ৪১ শতাংশ মার্কিন নাগরিক ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। শুধু তাই নয়, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ৬,০০০ কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল প্যাকেজ আমেরিকার আইনসভা কংগ্রেস আটকে রেখেছে। পাশাপাশি, ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী বছরের নির্বাচনে বাইডেনের উত্তরাধিকারী হওয়ার পথে এগোচ্ছেন। ট্রাম্প আবার ইউক্রেনে মার্কিন সাহায্য চালিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী নন।
আরও পড়ুন- শাশুড়ির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ পুত্রবধূর! মহিলাও ধর্ষক হতে পারে? বিচার করবে আদালত
যেভাবে ভাবছে ইউরোপ
ইউরোপও সামগ্রিকভাবে যে ইউক্রেনের পাশে, তেমনটা কিন্তু নয়। একটি ৫ কোটি ইউরো সহায়তার প্যাকেজ হাঙ্গেরি এবং জার্মানি আটকে রেখেছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিও ইউক্রেনকে সাহায্য করার ব্যাপারে বিরাট একটা উৎসাহী নন। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি শস্য রফতানি ইস্যুতে পোল্যান্ডের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছে ইউক্রেন। এসব দেখেই দ্য ইকোনমিস্ট-এর সাম্প্রতিক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, 'নিজের স্বার্থের পাশাপাশি ইউক্রেনের স্বার্থে, পশ্চিমকে তার অলসতা ঝেড়ে ফেলতে হবে।'