হরিয়ানার বেশ কিছু বৃহৎ রিয়েল এস্টেট সংস্থা আবশ্যিক এক্সটার্নাল ডেভেলপমেন্ট চার্জ (ইডিসি) ও ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল ডেভেলপমেন্ট চার্জ (আইডিসি) জমা দেয়নি। গোটা হরিয়ানা জুড়ে তারা যে রেসিডেনশিয়াল ও কমার্শিয়াল কলোনি বানিয়েছে সে বাবদে তাদের এই অর্থ জমা করার কথা। পরিকাঠামো উন্নয়নে সরকার এই অর্থ কাজে লাগায়। এ জন্য হরিয়ানা সরকার ডিফল্টারদের নোটিস পাঠিয়েছে। ৩৫০টিরও বেশি রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার নোটিস পেয়েছেন।
ইডিসি বাবদ প্রাপ্য অর্থ আদায় করার জন্য সরকার এক বারের জন্য মেটানোর (ওয়ান টাইম সেটলমেন্ট) প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ থেকে কী পেতে পারে সরকার, একবার দেখে নেওয়া যাক।
ইডিসি ও আইডিসি বাবদ সরকার রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের কাছ থেকে কত অর্থ পায়?
সরকারি নথি থেকে জানা যাচ্ছে যে বকেয়া ইডিসি আইডিসি-র পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা। নথি থেকে দেখা যাচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে কিছু ব্যক্তিদের ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির পরিমাণ শূন্য এবং তাঁদের বকেয়া কয়েক কোটি টাকা। এই বকেয়া অর্থ কয়েক বছর ধরে বেড়েছে। কলোনির লাইসেন্স, যে কারণে ডেভেলপাররা সরকারের কাছে ঋণী, তা টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্ট থেতে ২০০৭ থেকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ইস্যু করা হয়েছে।
ইডিসি ও আইডিসি কী?
পুর কর্তৃপক্ষকে ইডিসি বাবদ ডেভেলপারকে এই অর্থ দেওয়ার কথা, যাতে তারা রাস্তা, জল, বিদ্যুৎ সরবরাহ, ল্যান্ডস্কেপ, নিকাশি ও নালার ব্যবস্থা এবং ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট বাবদ এই অর্থ খরচ করতে পারে। ইডিসি র পরিমাণ পুর কর্তৃপক্ষ স্থির করে। অনেক ক্ষেত্রে, ডেভেলপার এই অর্থ বাড়ির ক্রেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করে, কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষকে দেয় না। আইডিসির চার্জ রাজ্য সরকার সংগ্রহ করে থাকে। এই ফান্ড সামাজিক-অর্থনৈতিক বৃদ্ধির কারণে যথা হাইওয়ে, ব্রিজ ও পরিবহণ নেটওয়ার্কের কারণে ব্যবহার করা হয়।
এই ডিফল্টাররা মূলত কোথাকার?
গুরগাঁও, ফরিদাবাদ, সোনপত ও পাঁচকুল্লার কমার্শিয়াল ও রেসিডেন্সিয়াল কলোনি তৈরি করেছেন এঁরা মূলত। কেউ কেউ রয়েছেন রোহতক, কার্নাল, ঝঝর, বাহাদুরগড় ও যমুনানগরেরও।
নতুন ওয়ান-টাইম সেটলমেন্ট পলিসিতে কী বলা হয়েছে?
নয়া প্রকল্প সমাধান সে বিকাশ কেন্দ্রের ২০২০ সালের বিবাদ সে বিশ্বাস মডেলের মতই। এই প্রকল্পে বকেয়া ইডিসির অর্থ, সুদ ও জরিমানার সুদ বরাদ্দ করা হয়। যদি মূল ইডিসি বাবদ বকেয়ার ১০০ শতাংশ এবং মোট সুদের ২৫ শতাংশ প্রকল্প ঘোষণার ৬ মাসের মধ্যে জমা দেওয়া হয় তাহলে বাকি ৭৫ শতাংশ মকুব করে দেওয়া হবে।
যদি কেউ মোট বকেয়ার ৫০ শতাংশ এবং মোট সুদ ও জরিমানা বাবদ সুদের ৫০ শতাংশ প্রকল্প ঘোষণার ৬ মাসের মধ্যে শোধ করেন তাহলে মোট সুদ এবং জরিমানা বাবদ সুদের ৫০ শতাংশ মকুব করে দেওয়া হবে।
মূল বকেয়ার বাকি ৫০ শতাংশ চারটি ৬মাসের ইনস্টলমেন্টে শোধ দেওয়া যাবে, তবে সেক্ষেত্রে বিলম্বিত সময়ের জন্য বছরে ৮ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে এবং ডিফল্টের সময়ের জন্য বার্ষিক ২ শতাংশ হারে অতিরিক্ত সুদ দিতে হবে।
আগেও কি এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে?
হ্যাঁ, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্য সরকার ডেভেলপারদের এরকম সুযোগ দিয়েছিল। সেবার তাদের বকেয়া আংশিক ভাবে মেটানোর কথা বলা হয়। সরকার ডেভেলপারদের পলিসি বাছার সুযোগ দেয় এবং বলে বকেয়ার ২০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট করে, বাকিটা সুদ সহ আটটি ৬ মাসের ইনস্টলমেন্টে শোধ করুক।
যেসব ডেভেলপাররা বকেয়ার ১৫ শতাংশ দিতে ইচ্ছুক, তাঁরা বকেয়ার বাকি অংশ পাঁচটি ষান্মাসিক ইনস্টলমেন্টেদিতে পারবেন বলে জানানো হয়েছিল। তবে বেশি ডেভেলপার এর সুযোগ নেননি। এরপর সরকার ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে এবং তাঁদের ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি বাজেয়াপ্ত হয়।
ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি নিয়ে সরকারের অবস্থান কী?
পুরনো পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের রায় অনুসারে টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্ট ১৬ জুন নির্দেশ দিয়েছে যে রাজ্য সরকার কিছুদিনের জন্য বর্ধিত ইডিসি-র জন্য চাপ দেবে না। ১৪.৭.১১-র আগের লাইসেন্সের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লাইসেন্সিরা ব্যাঙ্ক গ্যরান্টি পরিবর্ধন করেননি, ফলে সরকার তাঁদের ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি বাজেয়াপ্ত করেছে। ব্যাঙ্ক গ্যরান্টি বাজেয়াপ্তির ক্ষেত্রে যে অর্থ নগদ করা গিয়েছে চা বর্ধিত ইডিসি বাবদ পাওয়া গিয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে এবং তা আদালতের মর্যাদাহানি বলে ধরা হবে।
গত কয়েক বছরে কত পরিমাণ ইডিসি আদায় করা হয়েছে?
২০১৫-১৬ সালে সরকার ইডিসি বাবদ ১৫০৪ কোটি টাকা রিকভার করেছে, ২০১৬-১৭ সালে ১১৬২ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯-এ ১৪০০ কোটি টাকা এবং ২০১৯-২০-তে ১০২৭ কোটি টাকা। এ প্রক্রিয়া লকডাউনে ধাক্কা খেতে শুরু করে। ২০২০ সালের এপ্রিলে কোনও বকেয়া আদায় হয়নি। মে মাসে ২.২৭ কোটি টাকা, জুন মাসে ২০.১৫ কোটি টাকা এবং জুলাই মাসে ১৩.৭৭ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।