Advertisment

সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণ: কারা অভিযুক্ত, কী ছিল চার্জশিটে

পানিপথের দিওয়ানা স্টেশন ছাড়ার পর রাত ১১ ৫৩ মিনিটে ওই ট্রেনের দুটি কামরায় আগুন ধরে যায়। আগুনের কারণ ছিল বোমা বিস্ফোরণ এবং অভিযুক্তেদের ব্য়বহৃত দাহ্য পদার্থ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Samjhauta Express Blast Who are accused explained

সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণে নিহত হন ৬৮ জন, এঁদের মধ্যে ৪৩ জন পাকিস্তানি নাগরিক

২০০৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দিল্লি ও লাহোরের মধ্যে চলাচলকারী সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণ ঘটনা হয়েছিল হরিয়ানার পানিপথে। জাতীয় তদন্ত সংস্থা এন আই এ-র মতে, ভারতের "ঐক্য, সংহতি ও সার্বভৌমত্ব" ক্ষুণ্ণ করতে এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। সেদিনের বিস্ফোরণে মারা যান মোট ৬৮ জন। এঁদের মধ্যে ৪৩ জন ছিলেন পাক নাগরিক, ১০ জন ভারতীয় নাগরিক এবং মৃত ১৫জনের পরিচয় জানা যায়নি। যে ৬৮ জন মারা গিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে ৬৪ জন সাধারণ নাগরিক ছিলেন ও ৪ জন ছিলেন রেলকর্মী। এই জঙ্গি হামলায় ১২ জন জখম হন, তাঁদের মধ্যে ১০ জন ছিলেন পাকিস্তানের নাগরিক। বিস্ফোরণে জেরে ট্রেনের বেশ কয়েকটি কামরা পুড়ে যায়।

Advertisment

পাঁচকুল্লার বিশেষ এনআইএ আদালত এই মামলার রায়দান ১৪ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত রেখেছে। মামলার শুনানি হয়েছে গোপনে, বেশ কয়েকজন সাক্ষী মত বদল করেছেন। হরিয়ানা পুলিশ এ মামলার প্রাথমিক এফআইআর দাখিল করলেও ২০১০ সালের জুলাই মাসে মামলা এনআইএ-র হাতে তুলে দেয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। মামলার প্রথম চার্জশিট জমা পড়ে ২০১১ সালের জুন মাসে এবং পরবর্তীতে, ২০১২ সালের অগাস্ট মাসে এবং ২০১৩ সালের জুন মাসে আরও দুটি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন, তোমার স্থান – ফাঁকিস্তান

প্রাথমিক তদন্তে কী কী উঠে এসেছিল?

প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, পানিপথের দিওয়ানা স্টেশন ছাড়ার পর রাত ১১ ৫৩ মিনিটে ওই ট্রেনের দুটি কামরায় আগুন ধরে যায়। আগুনের কারণ ছিল বোমা বিস্ফোরণ এবং অভিযুক্তেদের ব্য়বহৃত দাহ্য পদার্থ। দিওয়ানা এবং পানিপথের মধ্যে এই বিস্ফোরণ ঘটে। ১৬ কামরার ৪০০১ আপ আটারি এক্সপ্রেস রাত ১০ ৫০ মিনিটে দিল্লি থেকে আটারির উদ্দেশে রওনা দেয়। ১৬ টি কামরার মধ্যে চারটি ছিল সংরক্ষিত সেকেন্ড স্লিপার কোচ। বিস্ফোরণ ঘটে দুটি অসংরক্ষিত কামরায়। অসংরক্ষিত কামরায় চারটি আইইডি রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে দুটিতে বিস্ফোরণ ঘটে, পরে দুটি আইইডি উদ্ধার করা হয়।

মামলায় অভিযুক্ত কারা?

এই মামলায় মোট ৮ জন অভিযুক্ত ছিলেন। প্রাথমিক অভিযুক্ত অসীমানন্দ ওরফে নব কুমার সরকারকে ২০১৫ সালে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট জামিন দিয়েছে। তিন জন অভিযুক্ত কমল চৌহান, রাজিন্দর চৌধরি, এবং লোকেশ শর্মা আম্বালা সেন্ট্রাল জেলে রয়েছেন। তিনজন অভিযুক্ত, অমিত চৌহান (রমেশ বেঙ্কট মালহাকর), রামচন্দ্র কালসাংরা এবং সন্দীপ ডাঙ্গে এ মামলায় ঘোষিত অভিযুক্ত। অন্য অভিযুক্ত সুনীল জোশী, এনআইএ যাকে এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, সে ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মধ্য প্রদেশের দিওয়াসে খুন হয়। মুখ্য অভিযুক্ত অসীমানন্দ ইতিমধ্যেই মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণ মামলা এবং আজমীর দরগা বিস্ফোরণ মামলায় মুক্তিপ্রাপ্ত। এনআইএ বলেছে, সমঝোতা বিস্ফোরণের ঘটনায় আদর্শগত সমর্থন জুগিয়েছিল অসীমানন্দ এবং অভিযুক্তদের আর্থিক সাহায্যও দিয়েছিল সে। এ ছাড়া তাদের আশ্রয়ের বন্দোবস্তও করেছিল অসীমানন্দ।

এনআইএ চার্জশিটে কী বলা হয়েছে?

নিম্ন আদালতে এনআইএ যে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করেছিল, তাতে বলা হয়েছিল, গুজরাটের অক্ষরধাম মন্দির, জম্মুর রঘুনাথ মন্দির এবং বারাণসীর সংকটমোচন মন্দিরে ‘ইসলামিক জিহাদি জঙ্গি হামলা‘র ঘটনায় অসীমানন্দ ‘খুবই উদ্বিগ্ন‘ হয়ে পড়ে। এনআইএ-র প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়, অসীমানন্দ ও তার সহযোগীরা গোটা মুসলিম সমাজের উপর ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ‘ হয়ে ওঠে এবং ‘বোমার বদলা বোমা‘ তত্ত্ব গ্রহণ করে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা মুসলিম উপাসনাস্থল, মুসলিম বসতি এলাকা এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যাতায়াতকারী  সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে বলে জানিয়েছে এনআইএ। উল্লেখ্য, ওই ট্রেনের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশে বসবাসকারী মুসলিমরা একে অপরের আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া-আসা করেন। কমল, লোকেশ, রাজিন্দর এবং অমিত সুটকেস বোমা রেখেছিল বলে অভিযোগ এনআইএ-র।



অভিযুক্ত রাজিন্দর চৌধরি, সুনীল জোশী, রামচন্দ্র কালসাংরা, লোকেশ শর্মা, কমল চৌহান, অমিত এবং অন্যরা ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে মধ্যপ্রদেশের দেওয়াসে প্রশিক্ষণ নেয়। এ সময়েই উচ্চ বিস্ফোরণ ক্ষমতা যুক্ত টাইমার বোমা বানানো হয় এবং তা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পরীক্ষাও করা হয়। এ ছাড়া অভিযুক্তরা ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে ফরিদাবাদের কর্নি শুটিং রেঞ্জে গুলি চালানো প্র্যাকটিস করে। অভিযুক্তরা সমঝোতা এক্সপ্রেসেকে বিস্ফোরণের জন্য বেছে নিয়েছিল, কারণ পুরনো দিল্লি রেলস্টেশনে কোনও সিকিউরিটি থাকে না, তা তারা আগেই দেখে নিয়েছিল। অভিযুক্তরা ইন্দোর থেকে দিল্লি আসে এবং বিস্ফোরণের আগে তারা থেকেছিল পুরনো দিল্লি রেলস্টেশনের কাছে এক হোটেলের ডর্মিটরিতে।

আরও পড়ুন, “ধর্মের পরে দেশপ্রেম”: একটি  জাতীয়  বিশ্বাস

এ মামলায় সাক্ষী কতজন?

এই মামলায় মোট সাক্ষীর সংখ্যা ২৯৯। এদের মধ্যে ১৩ জন পাক নাগরিক। কিন্তু বারংবার শমন পাঠানো সত্ত্বেও এবং বিদেশমন্ত্রকের মাধ্যমে খবর দেওয়া সত্ত্বেও তাঁরা কখনও আদালতে হাজির হননি। ২০১৩ সালে মামলা শুরু হওয়ার পর থেকে বেশ কিছু সাক্ষী মত বদল করেছেন। গত বছর এনআইএ ডক্টর সতীশ কুমার গুপ্ত এবং ডিএসপি বিজেন্দর সিংকে সাক্ষ্য থেকে মুক্তি দেয় বলে জানা গিয়েছে।

বিশেষ বিচারপতি ২০১৮ সালের ৪ মে মামলার শ্লথ অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।



শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত অন্তত ৮ জন বিচারক এ মামলা শুনেছেন। শেষে বিশেষ সিবিআই বিচারক জগদীপ সিংকে ২০১৮ সালের অগাস্ট মাস থেকে এ মামলা দায়িত্ব দেওয়া হয়। জগদীপ সিং ডেরা সাচ্চা সৌদা প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে সাজা শুনিয়েছিলেন। তবে তিনি এনআইএ আদালতে মামলার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই প্রায় সকলের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়ে গিয়েছে।

Read the Full Story in English

Explained
Advertisment