বৃহস্পতিবার দিল্লি পুলিশ ক্রিকেট বুকি সঞ্জীব চাওলাকে ব্রিটেন থেকে ফিরিয়ে এনেছে। তার আগে প্রত্যর্পণের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। গত দু মাসের বেশি সময় ধরে দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ প্রত্যর্পণ মামলার শুনানি উপলক্ষে বিভিন্ন আদালতে হাজির হয়েছে।
২০০০ সালের যে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের প্রয়াত অধিনায়ক হান্সি ক্রোনিয়ে যুক্ত ছিলেন, তাকেই ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম কেলেংকারি বলে ধরা হয়ে থাকে। চাওলা ওই ম্যাচ ফিক্সিং কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত।
সঞ্জীব চাওলার ম্যাচফিক্সিং কেলেংকারি
২০০০ সালের এপ্রিল মালে এই কেলেংকারির কথা প্রথম প্রকাশ্যে আসে। দিল্লি পুলিশ কালো তালিকাভুক্ত বুকি চাওলা ও ক্রোনিয়ের কথোপকথনে আড়ি পাতে, যা থেকে জানা যায় ম্যাচ হারার জন্য টাকা নিয়েছিেলন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক।
শীর্ষ মানের এক আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়, যিনি জাতীয় দলের অধিনায়কও বটে, তিনি ম্যাচ সম্পর্কিত তথ্য বেআইনি বেটিং সিন্ডিকেটের কাছে সরবরাহ করছেন, এ কথা জানাজানি হবার পর বিশ্বক্রিকেটের মেরুদণ্ডে শীতল স্রোত বয়ে যায়, যারজেরে বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষ খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে তদন্তে নামতে বাধ্য হয়।
ভারতে সিবিআই তদন্তের জেরে আজীবন নির্বাসিত হন মহম্মদ আজহারউদ্দিন ও অজয় শর্মা, পাঁচ বছরের জন্য নির্বাসিত হন অজয় জাদেজা। পরে অবশ্য বিভিন্ন আদালত নির্বাসন দণ্ড তুলে দেয়।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্রোনিয়েকে সারা জীবন ও হার্শেল গিবসকে ৬ মাসের জন্য নির্বাসিত করা হয়।
চাওলা মামলার টাইমলাইন
চাওলা, ম্যাচ ফিক্সিং কাণ্ডের অন্যতম ষড়যন্ত্রী। সে ভারত থেকে ২০০০ সালে ব্রিটেনে পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। তার ভারতীয় পাসপোর্ট সে বছরেই নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়, তবে ২০০৫ সালে চাওলা ব্রিটেনের পাসপোর্ট পেয়ে যায়য
২০১৩ সালের জুলাই মাসে দিল্লি পুলিশ এই কেলেংকারির ৭০ পাতা চার্জশিট দাখিল করে, যাতে নাম করা হয় চাওলা ও ক্রোনিয়ের। ক্রোনিয়ে ২০০২ সালে এক বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। এই দুজনকেই অপরাধ শাখা ২০০০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০০ সালের ২০ মার্চ পর্যন্ত খেলা ম্যাচে ফিক্সিং করার জন্য অভিযুক্ত করে। চাওলার বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সালের অগাস্ট মাসে ইংল্যান্ডের দুই খেলোয়াড়কে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করার অভিযোগও ছিল।
ভারতের প্রত্যর্পণের অনুরোধের জেরে ২০১৬ সালের ১৪ জুন চাওলাকে লন্ডনে গ্রেফতার করা হয়। ব্রিটেনের আধিকারিকরা সে সময়ে দিল্লি পুলিশের কাছে চাওলাকে যে জেলে রাখা হবে তার নিরাপত্তা ও সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চান। চাওলা ভারতীয় জেলের নিরাপত্তা ও সুযোগ সুবিধা নিয়ে তার আগে প্রচুর প্রশ্ন তুলেছিলেন।
২০১৭ সালে ওয়েস্টমিনিস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চাওলা একটি মামলায় জয়লাভ করেন। সেখানে বলা হয়েছিল, চাওলার মানবাধিকার তিহার জেলে সুরক্ষিত থাকবে না।
২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে ব্রিটেনের হাইকোর্ট তিহার জেলের অবস্থা সম্পর্কে ভারত সরকারের দেওয়া নিশ্চয়তার কথায় রাজি হয়ে নিম্ন আদালতের রায় নাকচ করে দেয় এবং জেলা বিচারককে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া ফের শুরু করতে নির্দেশ দেয়।
২০১৯ সালে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত চাওলার প্রত্যর্পণের পক্ষে নতুন নির্দেশ জারি করে। এক মাস পর ব্রিটেনের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র সচিব সাজিদ জাভিদ ভারত-ব্রিটেন প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় এই নির্দেশে স্বাক্ষর করেন।
চাওলা প্রত্যর্পণের নির্দেশের বিরুদ্ধে ব্রিটেন হাই কোর্টে ফের আবেদন করেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সে আবেদন নাকচ হয়ে যায়। গত বুধবার তাঁকে দিল্লি পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়, পরদিন তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন