Lambda Covid-19 variant: একা রামে রক্ষা নেই সুগ্রীব দোসর! ডেল্টার ধাক্কায় বিজ্ঞানীদের ঘুম ছুটেছে এবার বাড়বাড়ন্ত আর এক ভূতের। ভূত বললে আন্ডার এস্টিমেট করা হয়ে যাবে, বলতে হবে ব্রহ্মদৈত্য। বা ড্রাকুলা বললেও বলতে পারেন। এর নাম নাম ল্যাম্বডা (Lambda)। অদূর ভবিষ্যতে যা চিন্তার প্যাঁচালো রেখা তৈরি করতেই পারে ভারতমাতার কপালে। রামদা থুড়ি ল্যাম্বডার বৈজ্ঞানিক নাম C.37। ইনি হলেন করোনার সপ্তম সংস্করণ।
ডেল্টার মতো এইটিও ছড়াচ্ছে। এই জাতীয় করোনাভাইরাস পাওয়া গিয়েছে ২৫টির বেশি দেশে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মূল ভাইরাসের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক। তবে এ ব্যাপারে এখনও যথেষ্ট প্রমাণ হাতে আসেনি। পেরু সহ দক্ষিণ আমেরিকায় এই প্রজাতি শাসন করছে। ভারতে এখনও এর দেখা না মিললেও ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলিতে আবির্ভাব ঘটে গিয়েছে। ফলে এ দেশে যে কোনও দিন যে কোনও সময় ল্যাম্বডা সুচ হয়ে ঢুকে পড়তেই পারে, তাই না!
ল্যাম্বডা নতুন প্রজাতি নয়
লাম্বডা কোনও নতুন ভ্যারিয়েন্ট নয় মোটেই। এটি গত বছর থেকেই পৃথিবীতে রয়েছে। বলা যেতে পারে গত আগস্টের প্রথম থেকে। পেরুতে এর উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। সে দেশে করোনা সংক্রমিতের ৮০ শতাংশের শরীরে মিলেছে এই প্রজাতি। ইকুয়েডর, আর্জেন্টিনা এবং দক্ষিণ আমেরিকার আরও কয়েকটি দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট সবচেয়ে বেশি প্রতাপ দেখাচ্ছে। দেশে দেশে ছড়াতে ছড়াতে এটি যে কোয়ার্টার সেঞ্চুরি করে ফেলেছে, সেটা বলছে মার্চের হিসেব (এক-গাদা দাঁত বার করে ভারতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কি না জানা নেই!)। নতুন করে দাঁত-বসানো ব্রিটেনে লাম্বডায় আক্রান্ত ৬ জনের খবর মিলেছে। এঁরা প্রত্যেকেই আন্তর্জাতিক পর্যটক। আবার অতিসম্প্রতি মূর্তিমানের দেখা পাওয়া গিয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়।
ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশন
ডেল্টা রেডিয়েন্টের তিনটি বদল বা মিউটেশন ঘটেছে ইতিমধ্যে। ল্যাম্বডা তাকে ছাপিয়ে গিয়েছে অনেক আগে। এই ভ্যারিয়েন্টের স্পাইক প্রোটিনের সাত বার পরিবর্তন ঘটেছে। এর ফলে প্রজাতিটির পক্ষে অ্যান্টিবডি কিংবা ভ্যাকসিনকে ফাঁকি দেওয়ার মতো ক্ষমতা বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে। আরও বেশি সংক্রামক হয়ে উঠতে পারে। চিলিতে এর সংক্রামক ক্ষমতা নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা করা হয়েছে। তা থেকে বেরিয়ে এসেছে-- আলফা ও গামা এই দুটির চেয়ে ল্যাম্বডার সংক্রমণের শক্তি কম নয়।
গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, প্রজাতিটি চিনা সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের প্রভাব কমিয়ে দিচ্ছে। তবে ল্যাম্বডা প্রজাতির আচার-আচরণের রহস্য এখনও পুরো উন্মোচিত হয়নি। হু বলছে, এর জিনোম বদল বা জিনোমিক চেঞ্জের পুরো চেহারাটা যেহেতু সামনে আসেনি, তাই এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে জ্ঞান সীমিত। এ জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। পুরো চরিত্রটা বেরিয়ে এলেই একে নিয়ন্ত্রণের রাস্তা মিলবে। এটির প্রভাব আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন বাঁচতে পারেন ১৫০ বছর, আগামী দিন নিয়ে আসছে আরও আয়ু, কী ভাবে?
ভ্যারিয়েন্ট অফ ইন্টারেস্ট
ল্যাম্বডাকে ভ্যারিয়েন্ট অফ ইন্টারেস্ট-এর তকমা দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ সংক্রমণের ক্ষমতা ভালই। আক্রান্ত হলে সমস্যা যথেষ্ট। এই ভ্যারিয়েন্ট শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারে। আর তথ্য বলছে, এই প্রজাতিটি কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিক সংক্রমণ ঘটিয়েছে একগুচ্ছ দেশে (যাদের কথা আগেই বললাম)।
আপাতত ল্যাম্বডা সহ করোনা ভাইরাসের সাতটি প্রজাতিকে ভ্যারিয়েন্ট অফ ইন্টারেস্ট-এর তকমা দেওয়া হয়েছে। আর চারটি ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছে আরও নামজাদা পুরস্কার। ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন। এর অর্থ হল, আরও বেশি ভয়। এ বিগার থ্রেট (a bigger threat)। এখানে বলি: করোনার ভ্যারিয়েন্টের নামে কোনও দেশ আলাদা করে আর বিড়ম্বনায় পড়ছে না। কারণ প্রজাতির নামকরণের সঙ্গে কোনও দেশের নাম জোড়া হচ্ছে না। গ্রিক বর্ণ দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে (গ্রিস কী দোষ করল কে জানে!)।
ল্যাম্বডায় ভারতের ভয় আছে কি?
প্রথমেই বলেছি এই প্রজাতি এখনও পর্যন্ত ভারতে পাওয়া যায়নি। ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলিতেও এটির দেখা মেলেনি। এমনকী এশিয়ায় তেমন সাড়া ফেলেনি। এই মহাদেশের একমাত্র ইজরাইলে প্রজাতিটি সংক্রমণ ঘটিয়েছে। কিন্তু ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, ইতালি থেকে আসা পর্যটকদের মাধ্যমে এখানে এই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তেই পারে।
আরও পড়ুন কোভিডের অ্যান্টিবডি টেস্ট কাজ করে কী ভাবে, এই পরীক্ষা কতটা নির্ভুল
পরিশেষে
করোনার এক প্রজাতির হাত থেকে বেঁচে অন্য প্রজাতির ফাঁদে পড়ার ঘটনা কম নয়। ভ্যাকসিনকে ফাঁকি দিয়ে কখন যে কোন করোনা সুট করে শরীরের কোষে সেঁদিয়ে যাবে তা নিয়েও ধোঁয়াশা! ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে প্রাণে বাঁচার সম্ভাবনা অনেক বেশি (দেবাঞ্জন দেবের ভ্যাকসিন নিলে অবশ্য সেই আশা নেই)। ভ্যারিয়েন্ট এর ফলে রীতিমতো ঝামেলায় ফেলতে পারে আপনাকে। এমন ঘটনা তো ঘটছে ইউরোপে, বিশেষ করে ব্রিটেনে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণের বৃদ্ধির দ্রুত হার সেই দিকেই কি ইঙ্গিত করছে না? ভারত এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা থেকে ধীরে ধীরে মুক্তি পাচ্ছে-- তাড়া করছে এই নব-আতঙ্ক। ফের কোনও করোনার ঢেউ কানা দানবের মত এ দেশের বুকে ঝাঁপ কাটবে না তো? ল্যাম্বডার দিকে রাখতেই হচ্ছে সতর্ক ও স্বাভাবিক নজর।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন