Satnami revolt against Aurangzeb: ছত্তিশগড়ে, বালোদা বাজার জেলার অমর গুহায় ধর্মীয় স্থান জৈতখামের অপবিত্রতার অভিযোগে ক্ষুব্ধ সৎনামী সম্প্রদায়। সরকারের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে এই সম্প্রদায়ের সদস্যরা বর্তমানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। বিক্ষোভকারীরা পুলিশ সুপারের অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়। জেলাশাসকের দফতরে পাথর ছুড়ে মারে। এই সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ সদস্যই তফসিলি জাতিভুক্ত। যাদের বাস প্রধানত ছত্তিশগড় এবং মধ্যপ্রদেশ সংলগ্ন এলাকায়। জৈতখাম নামে পরিচিত মন্দিরটি বালোদা বাজার জেলার গিরাউদ গ্রাম থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৮ শতকের সাধক গুরু ঘাসিদাসের জন্মস্থান ওই জায়গা। সৎনামীরা এই ঘাসিদাসকেই গুরু বলে মানেন।
সৎনামী কারা?
গুরু ঘাসিদাস ১৭৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনিই সৎনামী সম্প্রদায়ের গুরু। যদিও, সৎনামীদের দাবি ঘাসিদাসের আগেও তাঁদের অন্য গুরুরা ছিলেন। সতনাম শব্দের অর্থ, 'সত্য নাম'। এই শব্দটি ১৫ শতকের ভক্তকবি কবীরের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা লাভ হয়েছিল। তবে, সম্ভবত কবীরের আগেই শব্দটি তৈরি হয়েছিল। কবীর, মূর্তিপূজা এবং হিন্দুধর্মের বিরোধী ছিলেন। তিনি নির্গুণ ভক্তি, আল্লাহর মত এক নিরাকার পরম শক্তির উপাসনা করতেন। কবীর তাঁর বেশ কয়েকটি কবিতায় সতনাম বা সত্যনাম শব্দের উল্লেখ করেছিলেন।
বীরভান এবং সৎনামী
১৬৫৭ সালে, বীরভান নামে এক ব্যক্তি, কবীরের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তিনি বর্তমান হরিয়ানার নারনৌলে সৎনামী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মুঘল দরবারের ইতিহাসবিদ খাফি খান (১৬৬৪-১৭৭২) লিখেছেন যে সৎনামীরা, 'নারনৌল এবং মেওয়াত পরগণায় বাস করতেন। প্রায় চার-পাঁচ হাজার গৃহস্থ এই সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন। তাদের জীবিকা বা পেশা ছিল কৃষিকাজ এবং ব্যবসা। ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব তাঁর মুঘল ভারতের কৃষি ব্যবস্থা, (১৫৫৬-১৭০৭)-এ লিখেছেন, এঁরাই ছিলেন সেই সময়ের ক্ষুদ্র পুঁজির ব্যবসায়ী। হাবিব জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে অধিকাংশ সৎনামী চামড়ার পেশায় যুক্ত ছিলেন। সময়ের সঙ্গে তাঁরা সেই পেশা বদলে ফেলেন।
আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
খাফি খান লিখেছেন, সৎনামীরা অস্ত্র বহন করতেন। তাঁরা কাউকে পরোয়া করতেন না। ১৬৭২ সালে বর্তমান পঞ্জাব এবং হরিয়ানায় বসবাসকারী সৎনামীরা আওরঙ্গজেবের ক্রমবর্ধমান করের দাবির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। হাবিব তাঁর কৃষি ব্যবস্থায় লিখেছেন, 'এই বিদ্রোহ গ্রাম থেকে শুরু হয়েছিল। একজন সৎনামী নিজের জমিতে চাষ করছিলেন। তিনি যখন ভুট্টার স্তূপ পাহারা দিচ্ছিলেন, তখন একজন মুঘল পদাতিক সৈন্য বা পিয়াদার সঙ্গে তাঁর উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। পিয়াদা লাঠির আঘাতে সৎনামীর মাথা ভেঙে দেয়। এরপর সেই সম্প্রদায়ের একদল লোক ওই পিয়াদাকে মারধর করে মেরে ফেলে।'
বিদ্রোহ দমন
স্থানীয় মুঘল শিকদার (পুলিশ প্রধান) অপরাধীদের গ্রেফতার করতে সৈন্য পাঠালে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ শুরু হয়। বিদ্রোহীরা অল্প সময়ের মধ্যে নারনৌল এবং বৈরাত দখল করে ফেলে। কিন্তু, মুঘলরা শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহকে দমন করে। কয়েক হাজার সৎনামীকে হত্যা করে। অস্ত্র ও সরঞ্জাম না থাকলেও সৎনামীরা মুঘলদের বিরুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। এমনটাই মুঘল ইতিহাসবিদ সাকি মুস্তাদ খান তাঁর মাসির-ই-আলমগিরিতে লিখেছেন।
আরও পড়ুন- ব্যাপক গরম! তারপরও ক্ষয়ক্ষতিতে মেলে না বিপর্যয় মোকাবিলার সাহায্য, এবার অন্য ভাবনা
ঘাসিদাসের নেতৃত্বে পুনরুজ্জীবন
আওরঙ্গজেব হরিয়ানায় গোটা সৎনামী সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলেন। এরপর অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এই সম্প্রদায়ের পুনরুজ্জীবন ঘটে। যার নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশে ছিলেন জগজীবনদাস। আর, ছত্তিশগড়ে ঘাসিদাস।