একজন মন্ত্রীর বিবৃতি, এমনকী বিধায়ক-সাংসদ, এমনকী যেখানে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি এবং সরকার উভয়ই বিষয়টিতে যুক্ত, সেখানেও সরকারকে খারাপভাবে দায়ী করা যায় না। মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি এমনটাই জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি এসএ নাজিরের নেতৃত্বাধীন বিচারপতি বিআর গাভাই, এএস বোপান্না, ভি রামাসুব্রমনিয়ন ও বিচারপতি বিভি নাগারথনাকে নিয়ে গঠিত পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। একদিন আগেই মোদী সরকারের পুরোনো ৫০০ এবং ১,০০০ টাকার নোটবাতিলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, সংবিধানের ১৯ নম্বর ধারার অধীনস্থ ১৯ (২) উপধারায় যা বলা আছে, তা বাদে বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে কোনও অতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে না।
কী নিয়ে এই মামলা?
এই মামলা, কৌশল কিশোর বনাম উত্তরপ্রদেশ রাজ্য তথা ২০১৬ সালের বুলন্দশহর ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত। উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মন্ত্রী এবং সমাজবাদী পার্টির নেতা আজম খান ঘটনাটিকে 'রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু না' বলে অভিহিত করেছিলেন। এরপরই খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়। তাঁকে নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার সময় আদালত জানায় যে এই মামলা রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা এবং বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতা এবং বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি করেছে।
বাক স্বাধীনতার বিধিনিষেধ সম্পর্কে রায় কী বলে?
এই মামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল, 'একজন সরকারি কর্মীর বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা যেতে পারে কি না।' এই পরিস্থিতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিরা জানিয়েছেন যে, রাষ্ট্রীয় বিষয়ে একজন মন্ত্রীর দেওয়া বিবৃতি সরকারের সুরক্ষার স্বার্থে হলেও সরকারেরও দায়িত্ব আছে, এই কথা মাথায় রেখে সেই বিবৃতির জন্য সরকারকে দায়ী করা যায় না। একইসঙ্গে আদালত জানিয়েছে, ১৯ নম্বর ধারা বা মতপ্রকাশের অধিকার এবং ২১ নম্বর ধারা বা জীবনের অধিকার ভঙ্গ হলে কোনও নাগরিক আদালতের শরণাপন্ন হতেই পারেন। তবে কোনও মন্ত্রীর দেওয়া বিবৃতি নাগরিকের অধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না-ও হতে পারে। কিন্তু, যদি এটা কোনও সরকারি আধিকারিকের অপরাধ হয়, তবে তার বিরুদ্ধে আদালতের কাছে প্রতিকার চাওয়া যেতে পারে।
ভিন্নমত
বিচারপতি বিভি নাগারথনা পৃথক রায়ে জানিয়েছেন যে বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অধিকার। এই অধিকারের দৌলতে নাগরিকরা শাসন সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত এবং শিক্ষিত হন। কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৬ সালে নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মামলায় সোমবার বিচারপতি ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন। বাকস্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ সংক্রান্ত মামলায়, বিচারপতি নাগারথনা জানিয়েছেন, বাক-স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধের প্রয়োজন নেই। বিদ্বেষপূর্ণ বক্তৃতা সমাজের মৌলিক মূল্যবোধে আঘাত করে। একইসঙ্গে বিচারপতি জানান, এই ধরনের সমস্যা রুখতে আমাদের যথেষ্ট কঠিন ও কঠোর আইন আছে। অন্য কোনও আইন তৈরির দরকার আছে কি না, সেটা বুঝে নেওয়া সংসদের ব্যাপার।
আরও পড়ুন- বঙ্গ রাজনীতির চর্চায় বন্দে-ভারত, পারস্পরিক দাবিতে জোর সংঘাতে তৃণমূল-বিজেপি
অন্যান্য বিচারপতিদের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে বিচারপতি নাগারথনা জানান, একজন মন্ত্রীর দেওয়া বিবৃতি যেখানে সরকারের বিষয়গুলো জড়িত, সেখানে এই ধরনের বিবৃতিগুলি বিদ্বেষপূর্ণ। যেখানে বিবৃতির জন্য সরকারকে দায়ী করা হয়, সেই বিবৃতিগুলো যদি অবমাননাকর হয়, তবে সরকারও দায়বদ্ধ। অ্যাটর্নি-জেনারেল আর. ভেঙ্কটরামানি এবং সলিসিটর-জেনারেল তুষার মেহতা সরকারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে বেঞ্চের দ্বারা বিবেচনা করা বিষয়টি মূলত শিক্ষামূলক। প্রয়োজনে ঘৃণামূলক বক্তব্য বা অন্যান্য ধরনের মন্তব্যের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নের সম্ভাবনা সংসদের দায়িত্ব।
Read full story in English