গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বুধবার, ২৪ মে জানিয়েছেন যে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি লোকসভার স্পিকারের আসনের পাশে তামিলনাড়ু থেকে আনা একটি রাজদণ্ডও স্থাপন করবেন। এই রাজদণ্ডের নাম সেঙ্গোল। যার উৎপত্তি তামিল শব্দ সেম্মাই থেকে। এর অর্থ ন্যায়। সরকারি নথি অনুসারে এই রাজদণ্ড স্বাধীন ভারতের এক উল্লেখযোগ্য এবং ঐতিহাসিক প্রতীক। কারণ, তা ব্রিটিশদের থেকে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হয়ে থাকবে। এমনটাই গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন শাহ। তিনি বলেন, 'পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট রাত ১০টা ৪৫-এ তামিলনাড়ুর অধিনামের মাধ্যমে সেঙ্গোল গ্রহণ করেছিলেন। এটি ছিল ব্রিটিশদের হাত থেকে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষণ।'
সেঙ্গোল নেহরুকে কেন দেওয়া হয়েছিল?
সরকারি নথি অনুসারে, স্বাধীনতার ঠিক আগে, ভারতের শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন নেহরুকে 'ব্রিটিশদের হাত থেকে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসেবে অনুসরণ করা উচিত, এমন অনুষ্ঠান' সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। শীঘ্রই হতে চলা প্রধানমন্ত্রী নেহরু সেই সময় ভারতের শেষ গভর্নর-জেনারেল চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারীর সঙ্গে পরামর্শ করতে গিয়েছিলেন। গোপালাচারী, তাঁকে চোল রাজবংশের সময় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের কথা বলেছিলেন। যেখানে এক রাজার থেকে অন্য রাজার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর পবিত্র এবং আশীর্বাদের মাধ্যমে পালিতে হত। তা পুরোহিতদের মাধ্যমে সম্পন্ন হত। সেই সময় রাজার হাত থেকে পরবর্তী রাজার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হয়ে শোভা পেল সেঙ্গোল। এমনটাই উল্লেখ রয়েছে পুঁথিতে। যাতে বলা আছে, নতুন মুকুটপাত্র রাজত্বের উত্তরাধিকারীকে প্রজাদের ন্যায়সঙ্গতভাবে শাসন করার উপদেশ দিয়ে, 'সেঙ্গোল' তুলে দেওয়া হত।
কীভাবে সেঙ্গোল তৈরি হয়েছিল?
সরকারি নথি বলছে, রাজা গোপালাচারীর থেকে এই কথা শুনে পণ্ডিত নেহরু তাঁকেই রাজদণ্ড বানিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই মতো রাজা গোপালাচারী তামিলনাড়ুর তাঞ্জোর জেলার বিখ্যাত মঠ তিরুভাদুথুরাই আথিনামে পৌঁছেছিলেন। আর, এই মঠের সাহায্যে চেন্নাইয়ের 'ভুমিদি বাঙ্গারু চেট্টি' জুয়েলার্সকে সেঙ্গোল তৈরির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। দুই ব্যক্তি এই সেঙ্গোল তৈরি করেছিলেন। তাঁরা হলেন ভুম্মিদি ইথিরাজুলু ও ভুমিদি সুধাকর। দু'জনেই এখনও জীবিত আছেন। আর, এখনও তাঁদের এই সেঙ্গোল তৈরির কথা মনে আছে। রাজদণ্ডটি লম্বায় পাঁচ ফুট। উপরে একটি নন্দী ষাঁড় রয়েছে। যা ন্যায়বিচারের প্রতীক।
আরও পড়ুন- বয়কটেও বিরোধী বিভাজন, বিজেপির বিরুদ্ধে চাচাছোঁলা বলেও কৌশলী মমতাদের অন্যতম ‘বন্ধু’
সেঙ্গোল কিভাবে নেহরুর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল?
সরকারি নথি অনুসারে, 'অধিনামের উপমহাপুরোহিত, নাদাস্বরম বাদক রাজারথিনাম পিল্লাই ও ওদুভার (গায়ক)'- এই তিন জন, তামিলনাড়ু থেকে নবনির্মিত সেঙ্গোল এনেছিলেন। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট, অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠান চলাকালীন, পুরোহিত লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে রাজদণ্ডটি দিয়েছিলেন। তারপরে এটি ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। তারপরে এটি 'শোভাযাত্রা করে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে এই সেঙ্গোল তাঁর হাতে হস্তান্তর করা হয়েছিল। এই উপলক্ষে পুরোহিতের নির্দেশিত একটি বিশেষ স্তবও পাঠ করা হয়েছিল।' নথিতে বলা আছে, অনুষ্ঠান চলাকালীন গীতিমূলক স্তবটি ৭ম শতাব্দীতে তামিল সাধু তিরুগ্নানা সাম্বান্ডার রচনা করেছিলেন। তিনি মাত্র ১৬ বছর জীবিত ছিলেন। পণ্ডিত নেহরুর এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শীঘ্রই রাষ্ট্রপতি হতে চলা ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ-সহ আরও অনেকে।