মঙ্গলবার দিল্লি সরকার স্কুলগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে স্কুল ব্যাগের ওজন কমানো ব্যাপারে দেওয়া গাইডলাইন কঠোরভাবে পালন করতে হবে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে ভারী স্কুল ব্যাগের জন্য স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। ছাত্রছাত্রীরা পিঠের ভারী ব্যাগ সামলাতে ব্যতিবস্ত হয় বলে স্কুলগুলিকে প্রায়শই কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। বেশ কয়েকবছর ধরে সরকারি সংস্থাগুলি এবং এ দেশের আদালতও স্কুলে ভারী ব্যাগ বহনের চাপ কমানোর লক্ষ্যে একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত বছর, স্কুল ব্যাগ নিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়নের নির্দেশিকা মেনে, দিল্লি সরকার ক্লাস ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের ব্যাগের ওজন বেঁধে দিয়েছে।
এতদিন পর্যন্ত এ ব্যাপারে যা যা হয়েছে:
১৫ বছরের বেশি সময় ধরে সিবিএসই স্কুল ব্যাগের ওজনের বিষয়টি সমাধান করতে স্কুলগুলিকে বলে আসছে। ২০০৭ এবং ২০১৮ সালে তারা নিজেদের অধীনস্থ স্কুলগুলিকে স্কুল ব্যাগের ওজন এবং বাচ্চাদের হোমওয়ার্কের পরিমাণ কমানোর নির্দেশ দিয়ে সার্কুলার জারি করে।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের অবস্থান গুরুতর, কী ভাবে মাপা হয় এই সূচক?
২০১৬ সালে, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে ভারী ব্যাগ বহনের চাপ থেকে মুক্ত করতে নির্দেশিকা জারি করে। দেখা গিয়েছিল, পাঠ্যবই, গাইডবই, হোমওয়ার্ক, ক্লাসওয়ার্কের খাতা, রাফ খাতা, ওয়াটার বটল, লাঞ্চ বক্স, এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে স্কুলব্যাগ নিজেই ভারী হওয়ার কারণে ব্যাগের ভার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ওই গ্ইডলাইনে স্কুলগুলিকে বলা হয়েছিল, SCERT, NCERT এবং CBSE-র পাঠ্যবই অনুসরণ করতে।
২০১৮ সালে এক অন্তর্বর্তী রায়ে মাদ্রাজ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় য়ে এনসিইআরটি-র বই বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং ব্যাগের ওজন ছাত্রছাত্রীর ওজনের ১০ শতাংশের বেশি হওয়া চলবে না। আদালতের মন্তব্য করেছিল শিশুরা ভারোত্তলক নয় এবং স্কুল ব্যাগে কন্টেনার থাকে না।
২০১৮ সালে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে ভারত সরকারের নির্দেশানুসারে স্কুল ব্যাগের ওজন ও শিক্ষার বিষয় নিয়ে গাইডলাইন তৈরি করার নির্দেশ দেয়।
কেন্দ্রীয় সরকারের উপদেশ অনুসারে স্কুল ব্যাগের ওজন ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস টু-য়ে হবে ১.৫ কিলোগ্রাম, ক্লাস থ্রি থেকে ক্লাস ফাইভে হবে ২থেকে ৩ কিলোগ্রামের মধ্যে, ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে ব্যাগের ওজন হবে ৪ কিলোগ্রাম, ক্লাস এইট থেকে ক্লাস নাইনে হবে সাড়ে চার কেজি এবং ক্লাস টেনে হবে ৫ কিলোগ্রাম। মন্ত্রক থেকে বলা হয়ে ছাত্রছাত্রীদের রুটিন অনুসারে স্কুলের পাঠ্যবই ছাড়া অন্য কোনও স্টাডি মেটিরিয়াল নিয়ে আসার ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করা যাবে না।
২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে দিল্লির শিক্ষা দফতর স্কুলব্যাগের সর্বোচ্চ ওজন নির্ধারণ করে দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করে। এই সার্কুলার সরকারি, সরকার-পোষিত এবং সরকারি পোষিত নয় কিন্তু স্বীকৃত স্কুলগুলির প্রধানের কাছে।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: প্রি স্কুলের পাঠক্রমে মাতৃভাষায় কেন জোর দিল এনসিইআরটি?
এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করেন প্রকাশকরা, যাঁদের বক্তব্য ছিল "এই নির্দেশিকা অবৈজ্ঞানিক এবং পরোক্ষভাবে স্কুলে কেবলমাত্র এনসিইআরটি-র বই চালু করাই এর উদ্দেশ্য"। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে আদালত ওই আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলে, একই ধরনের বই চালু হলে, প্রতিটি স্কুল কীভাবে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করবে, সে ব্যাপারে আলাদা করে নজরদারির প্রয়োজন পড়বে না।
২০১৯ সালের মে মাসে কর্নাটক সরকার রাজ্যের সমস্ত স্কুলকে নির্দেশ দেয় যে ব্যাগের ওজন ছাত্রছাত্রীর ওজনের ১০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। ওই নির্দেশে বলা হয়, ক্লাস ওয়ান থেকে টু পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের ব্যাগের ওজন ২ কেজি বেশি হবে না, ক্লাস থ্রি থেকে ফাইভের ক্ষেত্রে ব্যাগের ওজন রাখতে হবে ২ থেকে ৩ কিলোগ্রামের মধ্যে।
Read the Full Story in English