আগামী ৫ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে দিল্লির সমস্ত স্কুল, শুক্রবার দুপুরে এই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এর কিছু আগেই দিল্লি, নয়ডা, গুড়গাঁও, গাজিয়াবাদ এবং গ্রেটার নয়ডায় সমস্তরকম নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুকুম দেয় এনভায়রনমেন্ট পলিউশন (প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল) অথরিটি (ইপিসিএ)। এর প্রধান কারণ, সকালেই দেখা যায় যে পিএম ২.৫ (বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা)-এর মাত্রা ছাড়িয়েছে অনুমোদিত প্রতি ঘনমিটারে ৩০০ মাইক্রোগ্রামের সীমা।
দিল্লির বাতাসে দ্রুত বাড়তে থাকা দূষণের মোকাবিলায় ভাবা হয়েছে কয়েক ধাপের গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান (GRAP), যার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে গৃহীত হয়েছে উপরোক্ত পদক্ষেপগুলি।
আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: পেগাসাস স্পাইওয়ার ঠিক কী?
দিল্লির দূষণের বিরুদ্ধে কী পদেক্ষেপ নেওয়া হয়েছে
গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান (GRAP)
গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকায় দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বলবৎ হয় বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপ। এই অ্যাকশন প্ল্যান গত দু'বছর ধরে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে দিল্লি এবং এনসিআর (ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়ন বা দিল্লি মহানগর অঞ্চল) এলাকায় বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পরিবেশের মান উন্নয়নের জন্য চালু করা হয়েছে। কিন্তু এবছর যা নতুন, তা হলো ডিজেল জেনারেটরের ব্যবহার রুখতে যা যা পদক্ষেপ, তা দিল্লি ছাড়িয়ে সমগ্র এনসিআর-এই বলবৎ করা হবে।
ইপিসিএ-র সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞদের বৈঠকের ফলেই তৈরি হয় GRAP, এবং ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন পাওয়ার পর ২০১৭-য় বিজ্ঞাপিত হয় তা। দূষণ যত বাড়তে থাকে, তত ক্রমবর্ধমান ভাবে লাগু হতে থাকে এই প্ল্যানের নিয়মাবলী।
তবে GRAP একটি আপৎকালীন পদক্ষেপ। বছরের অন্যান্য সময় কলকারখানা, যানবাহন, বা জ্বালানি জনিত দূষণের মোকাবিলায় বিভিন্ন রাজ্য সরকার সাধারণভাবে যা যা পদেক্ষেপ নেয়, সেগুলি GRAP-এর আওতায় পড়ে না।
বাতাসের মান 'খারাপ' (poor) থেকে 'খুব খারাপ' (very poor) হলেই মেনে চলতে হবে এই দুটি বিভাগের অন্তর্গত বিধিনিষেধ। বাতাসের মান যদি 'গুরুতর+' (severe+) হয়, GRAP'র বিধান হলো, বন্ধ করতে হবে স্কুল, এবং লাগু হবে সড়ক পরিবহণে 'অড-ইভেন' বা জোড়-বিজোড় নীতি, যা গাড়ির নম্বরের জোড় বা বিজোড় সংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারিত।
তা দিল্লির স্কুল তো বন্ধ হয়েছে। এবং জোড়-বিজোড় নীতি এমনিতেও ৪ নভেম্বর থেকে লাগু হওয়ার কথা।
আরও পড়ুন: সরকারের বিরুদ্ধে কেন তথ্যের অধিকার আইন ধ্বংসের অভিযোগ আনলেন সোনিয়া গান্ধী?
GRAP-এর বিভিন্ন ধাপ
'গুরুতর+' অথবা 'আপৎকালীন' (emergency), অর্থাৎ ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পিএম ২.৫-এর মাত্রা ৩০০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার বা পিএম ১০-এর মাত্রা ৫০০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার হলে।
এখন পর্যন্ত এটি বাতাসের সর্বনিম্ন মান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যদিও ৪৮ ঘণ্টা এখনও কাটে নি, ইপিসিএ এবং দিল্লির সরকার ইতিমধ্যেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের নেওয়া পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে:
- দিল্লিতে ট্রাকের প্রবেশ বন্ধ করা (জরুরি সামগ্রী বহনকারী ট্রাক বাদে)
- নির্মাণের কাজ বন্ধ করা
- প্রাইভেট গাড়ির ক্ষেত্রে জড়-বিজোড় নীতি চালু করা
- অতিরিক্ত পদক্ষেপ, যেমন স্কুল বন্ধের ঘোষণা, নির্ধারণ করতে টাস্ক ফোর্স গঠন
'গুরুতর' (severe): এক্ষেত্রে বাতাসের মান সামান্য উন্নত, (পিএম ২.৫-এর মাত্রা ২৫০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার বা পিএম ১০-এর মাত্রা ৪৩০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটারের বেশি)। GRAP-র নিয়ম হলো:
- ইট ভাটা, হট মিক্স কারখানা, স্টোন ক্রাশার বন্ধ করে দেওয়া
- কয়লা যথাসম্ভব কম পুড়িয়ে ন্যাচারাল গ্যাস থেকে শক্তি উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়া
- নাগরিকদের জন পরিবহণ ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা
- যান্ত্রিক উপায়ে রাস্তাঘাটের সাফাই বাড়ানো, জল ছড়িয়ে দেওয়া
'খুব খারাপ': পিএম ২.৫-এর মাত্রা ১২১-২৫০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার বা পিএম ১০-এর মাত্রা ৩৫১-৪৩০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার। এক্ষেত্রে নিয়ম:
- ডিজেল জেনারেটর ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা
- গাড়ির পার্কিং ফি তিন-চার গুণ বাড়িয়ে দেওয়া
- বাস এবং মেট্রো পরিষেবা বাড়িয়ে দেওয়া
- বহুতল বাড়ির বাসিন্দাদের শীতকালে আগুন না জ্বালিয়ে ইলেকট্রিক হিটার ব্যবহার করতে উৎসাহ দেওয়া
- শ্বাসকষ্ট বা হৃদরোগের সমস্যা থাকলে বাড়ির বাইরে বেশি না যাওয়া
'মাঝারি' (moderate) থেকে 'খারাপ': পিএম ২.৫-এর মাত্রা ৬১-১২০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার বা পিএম ১০-এর মাত্রা ১০১-৩৫০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার
- জঞ্জাল পুড়িয়ে সাফ করতে গেলে ভারী জরিমানা
- ইট ভাটা বা অন্যান্য কারখানায় হয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধি বলবৎ করা, অথবা সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া
- বেশি যান চলাচল করে এমন রাস্তা যন্ত্রের সাহায্যে সাফ করা এবং জল ছিটোনো
- কড়াভাবে আতসবাজির ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করা