Advertisment

সিন্ধিয়াকে দিয়েই কি শেষ, নাকি তরুণ প্রজন্মের আরও অনেকে কংগ্রেস ছাড়ার লাইনে?

অনেক নেতারই আশঙ্কা রাজস্থানেও মধ্যপ্রদেশের মত পরিস্থিতির উদয় হবে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলোট ও কংগ্রেস সভাপতি শচীন পাইলটের মধ্যে সম্পর্কের ক্রমশ অবনতি হচ্ছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Scindia, Congress

জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি পাড়ি দিয়েছেন (ছবি- প্রেমনাথ পাণ্ডে)

কংগ্রেসের অন্যতম মুখ হিসেবে পরিচিত জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দলত্যাগ ফের একবার দলের দিশাহীন অবস্থাকে সর্বসমক্ষে এনে দিল তো বটেই, একই সঙ্গে দলের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে নবীন-প্রবীণের দ্বন্দ্বকে আরও একবার জাগিয়ে তুলল।

Advertisment

কিন্তু সিন্ধিয়া একা নন। অন্তত আরও তিনজন হিন্দি বলয়ের নেতা নেতৃত্ব নিয়ে চরম অসন্তুষ্ট এবং বাইরে সুযোগ খুঁজছেন বলে জানা গিয়েছে।

দলের মধ্যের সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, গত ৬ বছর ধরে বার বার পরাজয় সত্ত্বেও চলছে-চলুক মেজাজ দলের কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়িয়েছে, এবং অল্প বয়সীদের মধ্যে অধীরতাও বাড়ছে।

বেকায়দায় কমলনাথ সরকার, মুখ খুললেন রাহুল

এর জেরে বিভিন্ন রাজ্যে নেতৃত্বের মধ্যে শূন্যতা বাড়ছে। কংগ্রেস ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে পরাজিত হবার পর থেকে, দশ জনেরও বেশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, তিনজন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, অন্তত চারজন বর্তমান এবং প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দল ছেড়েছেন।

"আমার আশা (সিন্ধিয়ার প্রস্থানে) এবার পার্টির ঘুম ভাঙবে। যদি এতেও না হয়, তাহলে কিছুতেই কিছু হবে না।" ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলছিলেন দলের এক পরিচিত তরুণ নেতা। তাঁর কথায়, "দলকে এবার ঠিক করতে হবে তারা কী চায়। এটাই চূড়ান্ত সময়... কিন্তু আমার সন্দেহ রয়েছে যে কিছু বদলাবে কি না।"

দল ছাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় সব রাজ্য। তালিকার নামগুলি একবার দেখে নেওয়া যাক-

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীঃ বিজয় বহুগুণা (উত্তরাখণ্ড), অজিত যোগী (ছত্তিসগড়) এবং গিরিধর গামাং (ওড়িশা)।

প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীঃ জিকে ভাসান (তামিল নাড়ু), কিশোর চন্দ্র দেও (অন্ধ্র প্রদেশ), জয়ন্তী নটরাজন (তামিল নাড়ু), এস এম কৃষ্ণা (কর্নাটক), বেণী প্রসাদ ভার্মা (উত্তর প্রদেশ), শ্রীকান্ত জেনা (ওড়িশা) এবং শঙ্করসিং বাগেলা (গুজরাট)।

প্রাক্তন ও দায়িত্বে থাকা রাজ্য সভাপতিঃ অশোক তানওয়ার (হরিয়ানা), রীতা বহুগুণা জোশী (উত্তর প্রদেশ), বোচা সত্যনারায়ণ (অন্ধ্র প্রদেশ), ভুবনেশ্বর কলিতা (আসাম), যশপাল আরিয়া (উত্তরাখণ্ড) এবং অশোক চৌধরি (বিহার)।

এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ যাঁরা দল ছেড়েছেন তাঁরা হলেন আসামে হিমন্ত বিশ্বশর্মা, অরুণাচল প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী প্রেমা খাণ্ডু, ত্রিপুরায় সুদীপ রায় বর্মণ, এবং মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং।

আস্থা ভোটে চমকের ইঙ্গিত ‘পোড় খাওয়া’ দ্বিগিজয়ের

তালিকায় আরও রয়েছেন হরিয়ানায় চৌধরি বীরেন্দর সিং, তেলেঙ্গানায় ডি শ্রীনিবাস, পশ্চিমবঙ্গে মানস ভুঁইয়া, গোয়ায় বিশ্বজিৎ রাণে, মহারাষ্ট্রে নারায়ণ রাণে এবং গোয়ায় বিরোধী দলনেতা চন্দ্রকান্ত কাভলেকর।

অন্ধ্রপ্রদেশে প্রায় পুরো নেতৃত্বই হয় ওয়াইএসআরসিপি, টিডিপি অথবা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

দলের তরুণ ব্রিগেডের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, গত বছর রাহুল গান্ধীর দলীয় সভাপতির পদ ছাড়ার সিদ্ধান্তকে তাঁরা একগুঁয়েমি বলেই মনে করেন, এবং তা অব্যাখ্যাযোগ্য ও দুর্ভাগ্যজনক বলে তাঁদের ধারণা।

এক প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলছিলেন, "হয় ওঁকে কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে ফিরে এসে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। অথবা ওঁকে এবং গান্ধী পরিবারকে এমন কারও পিছনে দাঁড়াতে হবে যিনি সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলতে পারবেন। একটা কোনও ইঙ্গিত ওঁদের দিক থেকে আসা প্রয়োজন, কিন্তু নীরবতা ছাড়া কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ জানে না উনি কী চান বা ওঁর পরিকল্পনাই বা কী।"

সূত্র মোতাবেক জানা গিয়েচে, গত সপ্তাহে লোকসভায় কয়েকজন সাংসদের কাছে রাহুল বলেছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যাপারে একদল নেতা তাঁর সঙ্গে নেই, এবং সে পরিস্থিতি না বদলালে তিনি কংগ্রেস সভাপতি পদে ফিরবেন না।

এমনকি মধ্যপ্রদেশেও দলীয় মতভেদ নিয়ে রাহুল অসন্তুষ্ট বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু তিনি সিন্ধিয়াকে আটকানোর চেষ্টাও করেননি। গত সপ্তাহে যখন ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল সংকট তীব্র আকার নিতে পারে, তখন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও হস্তক্ষেপ করেননি।

অনেক নেতারই আশঙ্কা রাজস্থানেও মধ্যপ্রদেশের মত পরিস্থিতির উদয় হবে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলোট ও কংগ্রেস সভাপতি শচীন পাইলটের মধ্যে সম্পর্কের ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। কর্নাটক ও অন্যান্য বেশ কিছু রাজ্যে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে নতুন রাজ্য সভাপতিও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উল্টোদিকে ডিসেম্বরে ঝাড়খণ্ডে হারের পর বিজেপি কিন্তু ঘর গোছাতে সময় নষ্ট করেনি। বাবুলাল মারান্ডিকে দলে নিয়ে তাঁকে বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, নতুন রাজ্য সভাপতি স্থির করা হয়েছে, পরাজয়ের দু মাসের মধ্যে দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে নতুন নেতৃত্ব।

আরেকজন তরুণ কংগ্রেস নেতা বললেন, "আমি সিন্ধিয়াকে দোষ দিচ্ছি না। আমার বয়সী নেতাদের ভবিষ্যত কী? আমরা ২০ বছর সময় দলকে দিয়েছি, অনেক কিছু বিনিয়োগ করেছি। বয়স্ক নেতাদের আর পাঁচ ছ বছরের সক্রিয় রাজনৈতিক জীবন পড়ে আছে। ওঁরা সবই পেয়েছেন, অনেকেই রাজ্যসভাতেও আছেন। কিন্তু আমরা? নেতৃত্ব অনিশ্চিত, কোনো স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা নেই, ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও আশাও নেই।"

ছত্তিসগড়ের দায়িত্বে থাকা এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক পি এল পুনিয়া টুইটারে লিখেছেন, "জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মত এক নেতাকে হারানো আমাদের পক্ষে দুর্ভাগ্যজনক। শ্রী সিন্ধিয়া একাই এর জন্য দায়ী কিনা তা আমাদের দেখতে হবে। ১৫ বছর বিজেপির অপশাসনের পর আমরা ক্ষমতায় এসেছি আর ১৫ মাসও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারলাম না।"

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য কুলদীপ বিষ্ণোই লিখেছেন, "সিন্ধিয়ার দলত্যাগ কংগ্রেসের কাছে বিরাট ধাক্কা। উনি দলের মূল স্তম্ভ ছিলেন এবং নেতৃত্বের ওঁকে আরও বোঝানো প্রয়োজন ছিল, যাতে তিনি দলে থেকে যান। ওঁর মতই সারা দেশে জাতীয় কংগ্রেসের অনেক নেতা রয়েছেন যাঁরা নিজেদের বিচ্ছিন্ন, অপব্যয়িত ও হতাশ বোধ করতে পারেন। ভারতের প্রাচীনতম দলের উচিত তরুণ নেতাদের হাতে ক্ষমতা দেওয়া যাতে তাঁরা কঠোর পরিশ্রম করতে পারেন এবং জনগণের মনের কথা বুঝতে পারেন।"

দলের অন্য একটি গোষ্ঠী অবশ্য বলছে, সিন্ধিয়ার ঘটনা ভিন্ন মাত্রা পাচ্ছে, কারণ কংগ্রেসের অন্যান্যরা রাজপরিবার থেকে আসেননি। তাঁরা বলছেন ২০০২ সালে সিন্ধিয়া সাংসদ হন ও তার ৬ বছরের মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ পান। ২০১২ সালে তাঁকে স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার দু বছরের মধ্যে তাঁকে দলের চিফ হুইপ করা হয়।

এ ছাড়া, তাঁরা বলছেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে কমলনাথের কাছে হারের পর এক মাসের মধ্যে দল সিন্ধিয়াকে এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ করে।

লোকসভার কংগ্রেস দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, "দল ভাল ও মন্দ দু ধরনের সময়ের মধ্যে দিয়েই যাবে। কিন্তু দলের যখন খারাপ সময়, তখন দল ছাড়ার অর্থ অসততা। বিজেপি চায় বিরোধীরা যেখানে সরকারে আছে, সেখান থেকে তাদের উৎখাত করতে, এবং দুঃখজনকভাবে আমাদের কোনও কোনও নেতা তাঁদের সেই চেষ্টায় বোড়ে হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন। এ ঘটনা বিশ্বাসঘাতকতার চেয়ে কম কিছু নয়।"

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

CONGRESS rahul gandhi
Advertisment