Secret behind construction of Egypt’s pyramids: দুই টনেরও বেশি ওজনের জিনিস সরানো আজও অত্যন্ত কঠিন একটা কাজ। আর, সেই কঠিন কাজটাই ৪,৫০০ বছর আগে করেছেন মিশরীয়রা। তাঁদের আইকনিক পিরামিডগুলো তৈরি করার জন্য এই কঠিন কাজটা মিশরীয়রা করেছিলেন। যেমন, গিজার গ্রেট পিরামিডে পণ্ডিতদের অনুমান অনুযায়ী প্রায় ২.৩ মিলিয়ন আলাদা পাথর আছে। যার, প্রতিটির ওজন গড়ে ২.৩ মেট্রিক টন। তখন তো যন্ত্রসভ্যতা আজকের মত উন্নত ছিল না। সেখানে এই ধরনের ভারী বস্তুগুলোকে সরানো কীভাবে সম্ভব হয়েছিল? এটা ভেবেই গবেষকরা রীতিমতো তাজ্জব। অনেকে মজা করে এই কৃতিত্ব দিয়েছেন এলিয়েনদের। তবে, নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে নীল নদই মিশরের পিরামিডগুলোর নির্মাণকে সম্ভব করে তুলেছিল।
নদী-শক্তি
মিশরের বেশিরভাগ পিরামিড, গিজা এবং লিস্ট গ্রামের মধ্যে মরুভূমির উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত ৫০ কিলোমিটারের মধ্যেই পাওয়া যায়। এই অঞ্চলগুলো আজ নীল নদ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যদিও ইজিপ্টোলজিস্টদের বহুদিনের ধারণা, নদীটি একসময় পিরামিডের কাছাকাছি ছিল। সমসাময়িক সাহিত্যও তেমনই প্রমাণ দেয়। তবে, এই ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত প্রমাণ মেলেনি। গত
১৬ মে, কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় নীল নদের একটি প্রধান বিলুপ্তপ্রায় শাখার অংশকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই অংশটি পিরামিডের ঠিক পাশে ছিল। সেখান থেকে ভারী পাথর নেওয়া হয়েছে বলেই গবেষকদের বিশ্বাস।
নতুন গবেষণায় জানা গিয়েছে
ভূতত্ত্ববিদ ইমান ঘোনেইমের নেতৃত্বে একটি দল রাডার স্যাটেলাইট ইমেজ, ঐতিহাসিক মানচিত্র, ভূ-পদার্থগত জরিপ, এবং পলল কোরিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। নমুনা থেকে প্রমাণ পুনরুদ্ধারের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিকদের দ্বারা ব্যবহৃত এই সব পদ্ধতি থেকে জানা গেছে, সম্ভবত হাজার হাজার বছর আগে বালি ঝড়ের দ্বারা নদীর ওই খাত ঢেকে গিয়েছিল। আর, তারপরই একটি বড় খরার মুখোমুখি হয়েছিলেন মিশরবাসী। গবেষক সুজান অনস্টাইনের মতে, 'নদীর প্রকৃত শাখার সন্ধানের চেষ্টা এবং বিভিন্ন তথ্য দেখায় যে, মিশরে পিরামিডের কাছাকাছি একটি জলপথ ছিল। যার মাধ্যমে ভারী পাথর, সরঞ্জাম, মানুষ, সবকিছু পরিবাহিত হত। আর, এই তথ্যই আমাদের পিরামিড নির্মাণের ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে।' গবেষকরা নীল নদের ওই শাখার নামকরণ করেছেন- আহরামত। এটি প্রায় ৬৪ কিলোমিটার লম্বা, ২০০-৭০০ মিটার চওড়া এবং ২-৮ মিটার গভীর ছিল। গবেষণাটি থেকে আরও জানা গেছে যে, পিরামিডের বেশ কয়েকটি পথ নদীর খাঁড়িগুলোর দিকে ছিল। যা গবেষকদের মতে নদীবন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হত।
প্রাচীন বিস্ময়
অনস্টাইন জানিয়েছেন, নদীর শক্তিকে ব্যবহার করেই গড়ে উঠেছিল পিরামিড। আর, এই কারণেই সাহারা মরুভূমিতে গিজা এবং লিস্টের মধ্যে উঁচু পিরামিডের সংখ্যা এত বেশি। তবে, এই তথ্যও পিরামিড নির্মাণের উৎকর্ষতাকে কোনও অংশে খাটো করে না। গবেষকরা মনে করেন, হাজার হাজার শ্রমিক প্রথমে শক্ত দড়ি এবং বাঁশ দিয়ে কাঠামো বানিয়ে, তার চারপাশে পাথরের ওপর জলে ভেজা কাদামাটি, স্থাপন করে এই পিরামিড বানিয়েছিল। স্থপতিদের গাণিতিক ধ্যানধারণা ছিল। গোটা ব্যাপারটাই নিয়ন্ত্রণ করতেন মিশরীয় সভ্যতার শাসকরা। ২০২৩ সালে ইজিপ্টোলজিস্ট পিটার ডার ম্যানুলিয়ান, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিককে বলেছিলেন, 'অনেকে বর্তমানে পিরামিডকে কেবল একটি কবরস্থান বলে মনে করেন। বাস্তবে, প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় পিরামিডের গুরুত্ব ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি। এই পিরামিড আসলে প্রাচীন মিশরের জীবনযাত্রার পরিচয় বহন করে।'