Advertisment

Explained: কেউ গুজব ছড়াচ্ছে বা মিথ্যা রটাচ্ছে? সতর্ক করুন, কারণ, কী হতে পারে জানেন?

সোশ্যাল মিডিয়াতেও যাকে যা খুশি বলার আগে সতর্ক থাকুন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Fake news

বিশ্বজুড়ে ভুয়ো খবর একটি গুরুতর সমস্যা। ভুল তথ্য বা বিভ্রান্তি ছড়ানো ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং তথ্য প্রযুক্তি আইন, ২০০০-এর অধীনে অপরাধ। (প্রতীকী/পিক্সাবে)

গত কয়েক বছর ধরে, বিভিন্ন রাজ্যে পুলিশ ভুল তথ্য এবং জাল খবর ছড়ানোর অভিযোগে বিপুল সংখ্যক লোকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। যার মধ্যে সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হল চলতি সপ্তাহে কর্ণাটক পুলিশের এক টিভি অ্যাঙ্করের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা। ভুয়ো খবর বিশ্বজুড়ে একটি গুরুতর সমস্যা। আর, ভুল তথ্য বা বিভ্রান্তি ছড়ানো ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং তথ্য প্রযুক্তি আইন, ২০০০- উভয় অনুযায়ীই একটি অপরাধ। বিভ্রান্তিকর তথ্যকে মিথ্যা তথ্য হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়। অথবা, ক্ষতি করার ইচ্ছাকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে বা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেই মনে করা হয়। আসলে ভুল তথ্যের ক্ষেত্রে তা প্রচারের উদ্দেশ্যটা কী, সেই কারণটাই অনেক সময় বোঝা কঠিন হয়ে ওঠে। পুলিশ সাধারণত এই সব ক্ষেত্রে একজন অভিযুক্ত বা অপরাধীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি আইনের ধারা প্রয়োগ করে।

Advertisment

আরও পড়ুন- যুগান্তকারী নির্দেশ রিজার্ভ ব্যাংকের, ঋণ চোকালেই কী হবে জানেন?

  • ধারা ১৫৩এ: এই ধারাটি 'ধর্ম, জাতি, জন্মস্থান, বাসস্থান, ভাষা ইত্যাদির ভিত্তিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা প্রচার করা এবং সম্প্রীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে ক্ষতিকর কাজ করা'র সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি বিভিন্ন ধর্মীয়, জাতিগত, বা ভাষাগত গোষ্ঠীর মধ্যে ঘৃণা বা অস্বাভাবিকতা প্রচার করা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার বিরুদ্ধে ক্ষতিকর কাজের জন্য অপরাধী সাব্যস্ত করে। এই অপরাধে শাস্তি তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডই হতে পারে।
  • ধারা ২৯২: এটি অশ্লীল বই, ইত্যাদি বিক্রির সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি অশ্লীল বই, পুস্তিকা বা অন্যান্য সামগ্রীর বিক্রয়, বিতরণ বা প্রকাশ্য প্রদর্শনীকে অপরাধী সাব্যস্ত করে। এই ধারা লঙ্ঘনের জেরে প্রথম অপরাধের জন্য তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয়ই এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে।
  • ধারা ২৯৫এ: এই ধারাটি 'ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত এবং মন্দ কাজ' এর সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি ইচ্ছাকৃত এবং বিদ্বেষপূর্ণ অভিপ্রায়ে ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমান বা আঘাত করে, এমন কাজের শাস্তি দেয়। এই ধারা লঙ্ঘন করলে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ডই হতে পারে।
  • ধারা ৪৯৯: এই ধারাটি মানহানির অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি একজন ব্যক্তির খ্যাতির ক্ষতি করার জন্য একটি মিথ্যা বিবৃতি দেওয়ার কারণে প্রয়োগ করা হয়। ব্যতিক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে 'সত্য অভিযোগ' যা 'জনকল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয়' এবং সরকারি আধিকারিকদের প্রকাশ্য আচরণ, জনতার স্বার্থে প্রশ্ন তোলা, জনসাধারণের কর্মক্ষমতার যোগ্যতা নিয়ে কথা বলা।
  • ধারা ৫০০: ধারা ৫০০ ফৌজদারি মানহানির শাস্তি নির্ধারণ করে। ভারতে, মানহানি দেওয়ানি এবং ফৌজদারি উভয়ই হতে পারে। ফৌজদারি মানহানির শাস্তির মধ্যে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে। এই ধারার অধীনেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যার জেরে তিনি সংসদ পদ থেকে অযোগ্য ঘোষিত হয়েছিলেন।
  • ধারা ৫০৩: এটি 'অপরাধমূলক ভয় দেখানো'-র সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি জীবন, সম্পত্তি বা খ্যাতির জন্য আঘাতের ভয় দেখানোর ঘটনাকে অপরাধী সাব্যস্ত করে এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে বাধ্য করাকে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করে। শাস্তির মধ্যে থাকতে পারে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয়ই। এসব কিছু পরিস্থিতি এবং হুমকির তীব্রতার ওপর নির্ভর করে।
  • ধারা ৫০৪: এই ধারাটি 'শান্তি ভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত অপমান'-এর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়। শাস্তির মধ্যে রয়েছে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
  • ধারা ৫০৫: এটি 'জনসাধারণের দুর্দশা সৃষ্টিকারী বিবৃতি' তৈরির অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি ভয়, শঙ্কা বা শান্তি ভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে বিবৃতি, গুজব বা প্রতিবেদন ছড়ানোকে অপরাধী সাব্যস্ত করে। এর সাজা তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ডই হতে পারে।
  • ধারা ৫০৫ (১): এই ধারাটি 'একটি শ্রেণি বা সম্প্রদায়কে অন্য কোনও শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অপরাধ করার জন্য প্ররোচিত করার উদ্দেশ্যে দেওয়া বিবৃতি, গুজব বা প্রতিবেদন তৈরি করা, প্রকাশ করা বা প্রচার করা'র মত অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ঘৃণা বা হিংসা উসকে দেওয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে বিবৃতি ছড়িয়ে দেওয়াকে অপরাধী সাব্যস্ত করে। শাস্তির মধ্যে রয়েছে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ডই।

আইটি আইন, ২০০০-এর অধীনে ধারা-

  • ধারা ৬৭: এই বিভাগটি 'ইলেকট্রনিক আকারে অশ্লীল সামগ্রী প্রকাশ বা প্রেরণ'-এর সঙ্গে সম্পর্কিত। এতে তিন বছরের জেল, জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে।
  • ধারা ৬৯: এই ধারাটি সরকারকে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে যে কোনও কমপিউটার রিসোর্সে উত্পন্ন, প্রেরিত, প্রাপ্ত বা সংরক্ষিত যে কোনও তথ্য আটকাতে, নিরীক্ষণ বা মুছে দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে। এটি একটি শাস্তি নির্দিষ্ট করেনি। তবে, নির্দিষ্ট শর্ত এবং পদ্ধতির অধীনে এই ধরনের তথ্য অ্যাক্সেস করার জন্য সরকারের কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
  • ধারা ৭৯: এটি ব্যবহারকারীদের 'রক্ষাকবচ' দিয়েছে। যদি তাঁরা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলেন, তবে ব্যবহারকারী-উত্পাদিত সামগ্রীর দায় থেকে তাঁরা এই ধারায় রক্ষা পেতে পারেন। এটি শাস্তি নির্দিষ্ট করে না। তবে, উৎপাদিত বিষয়বস্ত ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীর আইনি দায়িত্বকে মনে করিয়ে দেয় এবং চিহ্নিত করে।

অন্যান্য বিভাগ-

  • দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ৫৪ ধারা, ২০০৫: এই আইন অনুযায়ী, 'যদি কোনও ব্যক্তি দুর্যোগ সম্পর্কে কোনও ভুয়ো খবর বা সতর্কবার্তা প্রচার করেন, অথবা এর তীব্রতা বা মাত্রা সম্পর্কে এমন কিছু প্রচার করেন যা জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, তাহলে সেই ব্যক্তিকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে। অথবা জরিমানা করা হতে পারে।
  • ডিজিটাল ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল, ২০২৩ (যা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি): এই আইনে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে ব্যক্তির তথ্যের অপব্যবহার রোধ করার বিধান আছে।
Social Media digital india Law Ministry
Advertisment